অটিজম: গবেষণা ডেটা বিশ্লেষণ করবে ইউএস স্বাস্থ্য বিভাগ!

মার্কিন স্বাস্থ্য বিভাগ, মেডিকেয়ার ও মেডিকেইড-এর অধীনে থাকা রোগীদের স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য বিশ্লেষণ করে অটিজম নিয়ে গবেষণা করার পরিকল্পনা করছে। এই গবেষণার মূল উদ্দেশ্য হলো অটিজম নির্ণয়ের ধারা, চিকিৎসার ফলাফল, স্বাস্থ্যসেবার সুযোগ এবং পরিবার ও স্বাস্থ্যখাতে এর অর্থনৈতিক প্রভাবগুলো সম্পর্কে ধারণা লাভ করা।

তবে, বিশেষজ্ঞদের মতে, এই ধরনের তথ্য বিশ্লেষণ অটিজমের মূল কারণগুলো খুঁজে বের করতে খুব একটা সাহায্য করবে না।

যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্য বিভাগের এই পরিকল্পনা বাস্তবায়িত হলে, ন্যাশনাল ইনস্টিটিউটস অফ হেলথ (NIH) এবং সেন্টারস ফর মেডিকেয়ার অ্যান্ড মেডিকেইড সার্ভিসেসের (CMS) মধ্যে একটি ডেটা শেয়ারিং চুক্তি হবে। CMS-এর কাছে প্রায় ১৫ কোটি মার্কিন নাগরিকের স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য সংরক্ষিত আছে।

স্বাস্থ্য সচিব রবার্ট এফ. কেনেডি জুনিয়র জানিয়েছেন, এই গবেষণার মাধ্যমে তারা অটিজমসহ অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদী রোগের মূল কারণগুলো খুঁজে বের করার চেষ্টা করবেন।

তবে বোস্টন ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক ইমেরিটাস হেলেন ট্যাগর-ফ্লাসবের্গ এই ধরনের তথ্য বিশ্লেষণের কার্যকারিতা নিয়ে সন্দেহ প্রকাশ করেছেন। তাঁর মতে, অটিজমের কারণ অনুসন্ধানে জিনগত বিষয়, গর্ভকালীন অবস্থা এবং শৈশবের প্রাথমিক দিকের বিষয়গুলো নিয়ে আরও গবেষণা করা প্রয়োজন।

তিনি উল্লেখ করেন, ইতিমধ্যে এই বিষয়ে যথেষ্ট গবেষণা হয়েছে এবং অটিজমের কোনো সহজ সমাধান নেই।

বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে অটিজমের হার বাড়ছে। সেন্টারস ফর ডিজিজ কন্ট্রোল অ্যান্ড প্রিভেনশন (CDC)-এর তথ্য অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রে প্রতি ৩১ জন শিশুর মধ্যে ১ জনের অটিজম রয়েছে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, সচেতনতা বৃদ্ধি এবং মৃদু উপসর্গযুক্ত শিশুদের শনাক্ত করার কারণেই এই সংখ্যা বাড়ছে। তবে, স্বাস্থ্য সচিব কেনেডি অটিজমকে পরিবেশগত কারণের সঙ্গে সম্পর্কিত একটি ‘প্রতিরোধযোগ্য রোগ’ হিসেবে বর্ণনা করেছেন।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, অটিজম কোনো রোগ নয়, বরং এটি মস্তিষ্কের জটিল একটি সমস্যা। দীর্ঘদিন ধরে অটিজম নিয়ে গবেষণা করা বিজ্ঞানীরা এর সুনির্দিষ্ট কোনো কারণ খুঁজে পাননি।

তবে, কিছু জিনগত বিষয় এর সঙ্গে সম্পর্কিত। এছাড়া, বাবার বয়স, মায়ের স্বাস্থ্য এবং কিছু রাসায়নিক পদার্থের সংস্পর্শের মতো বিষয়গুলোও অটিজমের সঙ্গে জড়িত থাকতে পারে বলে ধারণা করা হয়।

স্বাস্থ্য সচিব কেনেডির এমন মন্তব্যের কারণে অটিজম গবেষক এবং সমর্থনকারীরা উদ্বিগ্ন। তাঁদের আশঙ্কা, কেনেডি তাঁর গবেষণার মাধ্যমে ভ্যাকসিনের কারণে অটিজম হয়—এমন একটি বিতর্কিত তত্ত্বকে সমর্থন করতে পারেন।

যদিও বহু গবেষণায় ভ্যাকসিন এবং অটিজমের মধ্যে কোনো সম্পর্ক পাওয়া যায়নি। স্বাস্থ্য বিভাগ অটিজম বিষয়ক এই নতুন প্ল্যাটফর্মটিকে একটি ‘পরীক্ষামূলক প্রকল্প’ হিসেবে শুরু করতে যাচ্ছে, যা অন্যান্য দীর্ঘমেয়াদী রোগ এবং তার চিকিৎসা পদ্ধতি নিয়েও গবেষণায় সহায়তা করবে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *