যুক্তরাষ্ট্রের স্বাস্থ্যখাতে নজরদারি বিষয়ক একাধিক গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি বাতিল করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে ট্রাম্প প্রশাসন। সরকারি ব্যয় সংকোচনের অংশ হিসেবে নেওয়া এই পদক্ষেপে স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য সংগ্রহ এবং বিশ্লেষণের কাজে নিয়োজিত কর্মীদের ছাঁটাই করা হয়েছে, যা জনস্বাস্থ্য বিষয়ক উদ্বেগের কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।
সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে এই তথ্য জানিয়েছে এসোসিয়েটেড প্রেস (এপি)।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, ট্রাম্প প্রশাসনের ক্ষমতা গ্রহণের প্রথম ১০০ দিনের মধ্যেই স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের দায়িত্বে থাকা এক ডজনের বেশি কর্মসূচি হয় বাতিল করা হয়েছে, নয়তো সেগুলোর বাজেট কাটছাঁট করা হয়েছে। এর ফলে গর্ভধারণ, গর্ভপাত, শিশুকালের লিড পয়জনিং, কর্মক্ষেত্রে আঘাত, পরিবেশগত স্বাস্থ্য বিষয়ক গবেষণা এবং মাদকাসক্তি ও ধূমপান বিষয়ক তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের মতো গুরুত্বপূর্ণ কাজগুলো মারাত্মকভাবে ব্যাহত হবে।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (সিডিসি)-এর বরাত দিয়ে প্রতিবেদনে জানানো হয়, কর্মী ছাঁটাইয়ের কারণে অনেক গুরুত্বপূর্ণ কর্মসূচি এখন বিলুপ্তির পথে। এর মধ্যে রয়েছে গর্ভধারণ বিষয়ক ঝুঁকি মূল্যায়ন পদ্ধতি, যা মূলত গর্ভধারণের আগে, গর্ভধারণকালে এবং গর্ভধারণের পরে নারীদের স্বাস্থ্য বিষয়ক আচরণ ও ফলাফল সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহ করে। এছাড়াও, এই ছাঁটাইয়ের ফলে বন্ধ হয়ে গেছে ইন-ভিট্রো ফার্টিলাইজেশন (আইভিএফ) এবং গর্ভপাত সম্পর্কিত তথ্য সংগ্রহের কাজও।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই কর্মসূচিগুলো বাতিল করার ফলে স্বাস্থ্যখাতে অনেক বড় ধরনের ক্ষতি হয়ে যাবে। জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞ গ্রাহাম মুনি বলেন, “যুক্তরাষ্ট্র যদি নিজেদের স্বাস্থ্যখাতকে উন্নত করতে চায়, তাহলে এই রোগগুলো সম্পর্কে জানার জন্য প্রয়োজনীয় কর্মসূচিগুলো কেন বাতিল করা হচ্ছে?”
কর্মসূচি বাতিলের তালিকায় আরও রয়েছে লিড পয়জনিং বিষয়ক একটি কর্মসূচি। এই কর্মসূচির কর্মীরা স্থানীয় স্বাস্থ্য বিভাগকে লিড পয়জনিংয়ের ক্ষেত্রগুলো চিহ্নিত করতে এবং ঝুঁকির কারণগুলো খুঁজে বের করতে সহায়তা করতেন। এছাড়া, পরিবেশগত স্বাস্থ্য বিষয়ক প্রোগ্রামও বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে, যেটির মাধ্যমে ক্যান্সার ও আবহাওয়া সম্পর্কিত অসুস্থতা সহ বিভিন্ন পরিবেশগত বিষয়গুলো পর্যবেক্ষণ করা হতো।
ট্রান্সজেন্ডার জনগোষ্ঠীর স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য সংগ্রহ করাও এখন কঠিন হয়ে পড়েছে। আগে সহিংসতা ও ঝুঁকিপূর্ণ আচরণের ওপর নজর রাখা হতো, কিন্তু নতুন সিদ্ধান্তের ফলে তাদের স্বাস্থ্য বিষয়ক তথ্য সংগ্রহ করা সম্ভব হচ্ছে না।
কর্মক্ষেত্রে আঘাত ও অসুস্থতা বিষয়ক তথ্য সংগ্রহ ও প্রতিরোধের সুপারিশের জন্য ন্যাশনাল ইনস্টিটিউট ফর অকুপেশনাল সেফটি অ্যান্ড হেলথ (এনআইওএসএইচ)-এর কর্মীদেরও ছাঁটাই করা হয়েছে। এছাড়া, মাদক সেবন ও ধূমপান বিষয়ক জরিপ পরিচালনাকারী ১৭ সদস্যের একটি দলকেও সরিয়ে দেওয়া হয়েছে।
স্বাস্থ্যখাতে তথ্য সংগ্রহ ও বিশ্লেষণের আধুনিকীকরণের কাজও ব্যাহত হয়েছে। কোভিড-১৯ মহামারীর সময় রোগ প্রতিরোধের পূর্বাভাস দেওয়ার জন্য তৈরি করা সেন্টার ফর ফোরকাস্টিং অ্যান্ড আউটব্রেক অ্যানালিটিক্স-এর কার্যক্রমও এখন প্রায় বন্ধ।
এই সিদ্ধান্তের ফলে জনস্বাস্থ্য বিষয়ক অনেক গুরুত্বপূর্ণ তথ্য থেকে এখন বঞ্চিত হতে হবে এবং ভবিষ্যতে স্বাস্থ্য বিষয়ক নীতি নির্ধারণ ও রোগ প্রতিরোধের ক্ষেত্রে এটি বড় ধরনের চ্যালেঞ্জ তৈরি করবে বলে মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস