মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে আঘাত হানতে চলেছে তীব্র তাপপ্রবাহ, যা কয়েক কোটি মানুষের জীবনকে ঝুঁকিতে ফেলতে পারে। আবহাওয়াবিদরা একে ‘হিট ডোম’ বলছেন, যার ফলে আগামী কয়েক দিন ধরে তাপমাত্রা রেকর্ড ছুঁতে পারে।
দেশটির পূর্বাঞ্চলে ইতোমধ্যেই গরম বাড়তে শুরু করেছে, যা কয়েক দিন পর চরম আকার ধারণ করবে।
যুক্তরাষ্ট্রের জাতীয় আবহাওয়া দপ্তর জানাচ্ছে, আগামী রবিবার থেকে কমপক্ষে বৃহস্পতিবার পর্যন্ত দেশটির মধ্য-পশ্চিম অঞ্চল থেকে শুরু করে পূর্ব উপকূল পর্যন্ত বিশাল এলাকার মানুষ চরম তাপমাত্রার ঝুঁকিতে থাকবে। গরমের এই তীব্রতা এতটাই বেশি হতে পারে যে, রাতেও স্বস্তি পাওয়ার সম্ভাবনা খুবই কম।
এমন পরিস্থিতিতে পর্যাপ্ত শীতল ব্যবস্থা এবং জল পানের ব্যবস্থা না থাকলে যে কেউ অসুস্থ হয়ে পড়তে পারে।
আবহাওয়াবিদরা বলছেন, সাধারণত জুন মাস থেকে গ্রীষ্মকালের শুরু ধরা হলেও, গ্রীষ্মের সবচেয়ে উষ্ণ দিনগুলো সাধারণত জুলাই ও আগস্ট মাসেই দেখা যায়। তবে এবারের পরিস্থিতি ভিন্ন।
এখনই তাপমাত্রা স্বাভাবিকের চেয়ে ১৫ ডিগ্রি ফারেনহাইট (প্রায় ৯ ডিগ্রি সেলসিয়াস) পর্যন্ত বাড়তে পারে। অনেক অঞ্চলে তাপমাত্রা এমনকি নব্বইয়ের ঘরে (প্রায় ৩২-৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস) পৌঁছাতে পারে।
আর্দ্রতা যুক্ত হলে তা ১১০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (প্রায় ৪৩ ডিগ্রি সেলসিয়াস)-এর মতো অনুভূত হতে পারে। নিউইয়র্ক শহরে রবিবার থেকে মঙ্গলবার পর্যন্ত তাপমাত্রা ৯৭ ডিগ্রি ফারেনহাইটের (প্রায় ৩৬ ডিগ্রি সেলসিয়াস) কাছাকাছি থাকতে পারে, যা দৈনিক রেকর্ড ভেঙে দিতে পারে।
ওয়াশিংটন ডিসিতে তাপমাত্রা ১০০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (প্রায় ৩৭ ডিগ্রি সেলসিয়াস) পর্যন্ত পৌঁছতে পারে, যা অতীতের রেকর্ড ছুঁতে পারে। বোস্টনে সোমবার ৯০ ডিগ্রি ফারেনহাইট (প্রায় ৩২ ডিগ্রি সেলসিয়াস) এবং মঙ্গলবার ৯৪ ডিগ্রি ফারেনহাইট (প্রায় ৩৪ ডিগ্রি সেলসিয়াস) তাপমাত্রা থাকতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই তাপপ্রবাহের কারণে সোমবার ও মঙ্গলবার ২৫০টির বেশি দৈনিক তাপমাত্রা রেকর্ড ভাঙতে পারে। তাপপ্রবাহ যুক্তরাষ্ট্রের ইতিহাসে একটি মারাত্মক প্রাকৃতিক দুর্যোগ।
১৯৯৯ সাল থেকে ২০১৯ সাল পর্যন্ত, গরমের কারণে বছরে গড়ে ৮০০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
আবহাওয়াবিদদের মতে, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে রাতের তাপমাত্রা দিনের তুলনায় দ্রুত বাড়ছে। ফলে মানুষের শরীর ঠান্ডা হওয়ার সুযোগ কম পাচ্ছে, যা হিটস্ট্রোকসহ বিভিন্ন স্বাস্থ্য ঝুঁকি বাড়িয়ে তুলছে।
গ্রীষ্মের এই শুরুতেই এমন পরিস্থিতি ভবিষ্যতে আরও খারাপ পরিস্থিতির ইঙ্গিত দিচ্ছে।
বাংলাদেশের প্রেক্ষাপটে যদি আমরা চিন্তা করি, তাহলে গ্রীষ্মকালে এখানেও তাপমাত্রা বাড়ে, তবে যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিস্থিতি আমাদের জন্য একটি সতর্কবার্তা।
জলবায়ু পরিবর্তনের ফলে বিশ্বের বিভিন্ন স্থানে আবহাওয়ার চরম রূপ দেখা যাচ্ছে, যা আমাদের সকলের জন্য উদ্বেগের কারণ। আমাদের সচেতন থাকতে হবে এবং জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব মোকাবিলায় একযোগে কাজ করতে হবে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন