যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কেন্দ্রগুলোতে হামলার ঘটনা, আতঙ্কে নিরাপত্তা সংস্থা।
যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন বিষয়ক কেন্দ্রগুলোতে সম্প্রতি কয়েকটি হামলার ঘটনা ঘটেছে। এতে দেশটির নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর মধ্যে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে এবং তারা তাদের নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করেছে। কর্মকর্তাদের মতে, এসব হামলার পেছনে রয়েছে অভিবাসন নীতির কড়া সমালোচকদের উগ্র আচরণ।
গত ৪ঠা জুলাই টেক্সাসের ফোর্ট ওয়ার্থের কাছে একটি ডিটেনশন সেন্টারে একদল লোক হামলা চালায়। তারা প্রথমে বাজি ফাটিয়ে কর্মকর্তাদের মনোযোগ অন্যদিকে সরিয়ে দেয়, এরপর দুটি রাইফেল দিয়ে কয়েকজন কর্মকর্তা ও কর্মচারীকে লক্ষ্য করে গুলি ছোড়ে।
এর কয়েকদিন পরেই, মিশিগানের একজন লোক টেক্সাস-মেক্সিকো সীমান্তের কাছে একটি বর্ডার পেট্রোল ফ্যাসিলিটিতে গুলি চালায়। এতে একজন কর্মকর্তা আহত হন। পরে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে হামলাকারী নিহত হয়।
কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে, হামলাগুলোর মধ্যে সরাসরি কোনো যোগসূত্র নেই। তবে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময় অভিবাসন নীতি নিয়ে বিতর্কের জেরে কর্মকর্তাদের মধ্যে এক ধরনের ভীতি তৈরি হয়েছে। ফলে, ডিপার্টমেন্ট অফ হোমল্যান্ড সিকিউরিটির (DHS) বিভিন্ন স্থাপনার নিরাপত্তা বাড়ানো হয়েছে।
হোমল্যান্ড সিকিউরিটির কর্মকর্তারা বলছেন, অভিবাসন কর্মকর্তাদের ওপর হামলার ঘটনা বাড়ছে। তারা জানান, শুধু মে মাসেই আগের বছরের তুলনায় হামলার ঘটনা ৪০০ শতাংশের বেশি বেড়েছিল। এর দুই মাস পর, জুলাই মাসে তা বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৮০০ শতাংশের বেশি।
আইস-এর (ICE – Immigration and Customs Enforcement) ভারপ্রাপ্ত পরিচালক টড লায়ন্স সিএনএনকে বলেছেন, কর্মকর্তাদের ওপর হামলার ঘটনা তাকে উদ্বিগ্ন করে তুলেছে। তার মতে, কর্মকর্তাদের জীবন নিয়ে তিনি সবচেয়ে বেশি চিন্তিত।
সাবেক প্রেসিডেন্ট বারাক ওবামার আমলে আইস-এর ভারপ্রাপ্ত পরিচালক হিসেবে দায়িত্ব পালন করা জন স্যান্ডওয়েগ সিএনএনকে জানান, আগে কর্মকর্তাদের নিরাপত্তা নিয়ে উদ্বেগ ছিল মূলত গ্রেফতার বা তল্লাশির সময়। কিন্তু এখনকার পরিস্থিতি ভিন্ন। এটিকে তিনি রাজনৈতিক সহিংসতা হিসেবে দেখছেন।
টেক্সাসের ঘটনার বিবরণীতে জানা যায়, একদল লোক কালো পোশাক পরে একটি ডিটেনশন সেন্টারের বাইরে জড়ো হয় এবং দেয়ালের উপরে “আইস পিগ” ও “ফাক ইউ পিগস” (F**k you pigs) -এর মতো আপত্তিকর শব্দ লিখে দেয়। এরপর তারা কর্মকর্তাদের লক্ষ্য করে গুলি চালায়। সৌভাগ্যক্রমে, কোনো কর্মকর্তা গুরুতর আহত হননি।
এ ঘটনায় জড়িত সন্দেহে ১৪ জনকে অভিযুক্ত করা হয়েছে। তাদের মধ্যে কয়েকজন হামলাকারীর পালিয়ে যেতে সাহায্য করেছিল। হামলাকারীরা সামরিক পোশাক পরে এসেছিল এবং তাদের কাছে আগ্নেয়াস্ত্র ও অন্যান্য সরঞ্জাম ছিল। তদন্তকারীরা জানিয়েছেন, হামলাকারীরা ঘটনার আগে ডিটেনশন সেন্টারের আশেপাশে রেকি (reconnaissance) চালিয়েছিল।
অন্যদিকে, মিশিগানের হামলাকারী রায়ান লুইস মোসকেদা সীমান্ত টহল অফিসের বাইরে গুলি চালিয়েছিল। পরে নিরাপত্তা বাহিনীর গুলিতে সে নিহত হয়।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতির কড়া সমালোচকরা মনে করেন, ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন বিষয়ক কঠোর পদক্ষেপের কারণে ভীতি ও উত্তেজনা বেড়েছে। তারা এজেন্টদের ছদ্মবেশে অভিযান চালানো এবং ব্যাপক ধরপাকড়ের সমালোচনা করেছেন।
আইস-এর বাজেট বৃদ্ধি প্রসঙ্গে জন স্যান্ডওয়েগ বলেন, এই অর্থ দিয়ে আরও বেশি সংখ্যক এজেন্ট নিয়োগ করা হবে, যা অভিবাসন আইন প্রয়োগের ক্ষেত্রে একটি বড় পরিবর্তন আনবে। এর ফলে কর্মকর্তাদের ওপর হামলার ঝুঁকি আরও বাড়তে পারে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন