আতঙ্কে অভিবাসী! সামাজিক মাধ্যম থেকে ডেটা সংগ্রহ করতে চাইছে যুক্তরাষ্ট্র?

যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন সুবিধা পেতে আগ্রহীদের সামাজিক মাধ্যম ব্যবহারের তথ্য সংগ্রহ আরও বাড়ানোর পরিকল্পনা করছে দেশটির সরকার। সম্প্রতি, গ্রিন কার্ড অথবা নাগরিকত্বের জন্য আবেদনকারীদের কাছ থেকে তাদের সামাজিক মাধ্যমের আইডি জানতে চাওয়ার একটি প্রস্তাব দিয়েছে ইউএস সিটিজেনশিপ অ্যান্ড ইমিগ্রেশন সার্ভিসেস (ইউএসসিআইএস)।

সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি নির্বাহী আদেশের অংশ হিসেবে এই পদক্ষেপ নেওয়া হচ্ছে।

এই প্রস্তাবনা নিয়ে ইতোমধ্যে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন মানবাধিকার কর্মী এবং অভিবাসন বিষয়ক বিশেষজ্ঞরা। তাদের মতে, এর ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করা এবং আইনগতভাবে বৈধ ব্যক্তিদের ওপর নজরদারির পরিধি আরও বাড়বে।

শুধুমাত্র নতুন করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিরাই নন, বরং যারা ইতিমধ্যে গ্রিন কার্ড অথবা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করেছেন, তাদেরও সামাজিক মাধ্যমের তথ্য দিতে হতে পারে।

বিষয়টি নিয়ে বিস্তারিত জানতে চাওয়া হলে, ইউএসসিআইএস জানিয়েছে, তারা মূলত জালিয়াতি শনাক্তকরণ, পরিচয় চুরি প্রতিরোধ এবং জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক বিষয়গুলো আরও ভালোভাবে যাচাই করতে চায়।

তাদের মতে, এই পদক্ষেপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস ও কাজ করার জন্য যারা অভিবাসন সুবিধা পেতে চান, তারা যেন জননিরাপত্তা বা জাতীয় নিরাপত্তার ক্ষেত্রে কোনো হুমকি সৃষ্টি না করেন, তা নিশ্চিত করা যাবে। এছাড়া, ক্ষতিকর কোনো ‘মার্কিন-বিরোধী’ আদর্শের বিস্তার রোধ করাও তাদের অন্যতম উদ্দেশ্য।

এই প্রস্তাবনাটি বাস্তবায়িত হলে প্রায় ৩৬ লক্ষ মানুষের ওপর এর প্রভাব পড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে।

তবে, মানবাধিকার সংস্থাগুলোর আশঙ্কা হলো, এভাবে সামাজিক মাধ্যম থেকে তথ্য সংগ্রহ করার ফলে ব্যক্তি স্বাধীনতা খর্ব হতে পারে।

বিশেষ করে, ভিন্নমত পোষণকারীদের ওপর নজরদারি আরও বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। কারণ, সামাজিক মাধ্যমে প্রকাশিত তথ্যের ভিত্তিতে অভিবাসন বিষয়ক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্ত নেওয়ার ক্ষেত্রে ভুলের সম্ভবনাও থেকে যায়।

যুক্তরাষ্ট্র সরকারের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, তারা সামাজিক মাধ্যম থেকে সংগৃহীত তথ্য বিশ্লেষণের জন্য আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (এআই) বা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা ব্যবহার করবে।

যদিও বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এআই প্রযুক্তি এখনো নির্ভুল নয় এবং এটি অনেক সময় ভুল করতে পারে। এমনকি, এই প্রযুক্তির মাধ্যমে সব ধরনের উপযুক্ত তথ্য পাওয়াও সম্ভব নাও হতে পারে।

আগে থেকেই, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন কর্তৃপক্ষ ভিসা আবেদনকারীদের সামাজিক মাধ্যমের তথ্য সংগ্রহ করে আসছে।

বিশেষ করে, ২০১৬ সাল থেকে এই প্রক্রিয়া আরও জোরদার করা হয়। অভিবাসন সুবিধা পেতে আগ্রহী ব্যক্তিরা তাদের ফেসবুক, টুইটারসহ অন্যান্য সামাজিক মাধ্যমের আইডি জমা দিতে বাধ্য হন।

এই পদক্ষেপের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করতে আগ্রহী বাংলাদেশিদের মধ্যে উদ্বেগ তৈরি হতে পারে।

কারণ, গ্রিন কার্ড অথবা নাগরিকত্বের জন্য আবেদন করার সময় তাদের সামাজিক মাধ্যমের বিভিন্ন বিষয় কর্তৃপক্ষের নজরে আসবে। তাই, আবেদনকারীদের নিজেদের অনলাইন কার্যক্রমের বিষয়ে আরও সতর্ক থাকতে হবে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *