আমেরিকার সিদ্ধান্তে টমেটো নিয়ে চরম বিপাকে, বাড়ছে দাম!

যুক্তরাষ্ট্র মেক্সিকো থেকে আসা তাজা টমেটোর ওপর ১৭ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে। এর ফলে প্রতিবেশী দেশ দুটির মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে, সেই সাথে শুল্কের কারণে মার্কিন ভোক্তাদের বাজারে টমেটোর দামে প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।

মার্কিন বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা এই পদক্ষেপ নিয়েছে যুক্তরাষ্ট্রের ভেতরের টমেটো শিল্পকে রক্ষা করার জন্য। তাদের দাবি, মেক্সিকো থেকে কম দামে টমেটো আসায় মার্কিন কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের মতে, এই শুল্কের ফলে অভ্যন্তরীণ বাজারে যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদিত টমেটোর চাহিদা বাড়বে এবং দেশটির কৃষকরা উপকৃত হবেন।

তবে, মেক্সিকোর পক্ষ থেকে এর তীব্র প্রতিবাদ জানানো হয়েছে। মেক্সিকোর অর্থনৈতিক বিষয়ক সচিব মার্সেলো এবারার্ড এক বিবৃতিতে বলেছেন, এই শুল্কের কারণে আমেরিকান ভোক্তাদের পকেটেই টান পড়বে। তাঁর মতে, মেক্সিকোর টমেটোর গুণগত মান ভালো হওয়ার কারণেই তারা যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে জায়গা করে নিয়েছে, কোনো ধরনের অপ-বাণিজ্য এর কারণ নয়। মেক্সিকো সরকার জানিয়েছে, তারা এই শুল্ক প্রত্যাহারের জন্য আলোচনা চালিয়ে যাবে।

যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে মেক্সিকোর টমেটোর আধিপত্য অনেক দিনের। বর্তমানে দেশটির প্রায় ৭০ শতাংশ টমেটোর যোগান আসে মেক্সিকো থেকে, যা দুই দশক আগের তুলনায় অনেক বেশি। এই শুল্ক আরোপের ফলে বাজারে টমেটোর দাম বাড়তে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। অ্যারিজোনা স্টেট ইউনিভার্সিটির অধ্যাপক টিমোথি রিচার্ডস-এর মতে, এই শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে টমেটোর দাম প্রায় ৮.৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেতে পারে।

অন্যদিকে, এই সিদ্ধান্তের ফলে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা করছেন অনেক ব্যবসায়ী। যুক্তরাষ্ট্রের চেম্বার অফ কমার্স এবং ন্যাশনাল রেস্টুরেন্ট অ্যাসোসিয়েশন-এর মতো বাণিজ্য সংগঠনগুলো বাণিজ্য মন্ত্রণালয়ের প্রতি মেক্সিকোর সঙ্গে একটি সমঝোতায় পৌঁছানোর আহ্বান জানিয়েছিল। তাঁদের মতে, এই শুল্কের কারণে দ্বিপাক্ষিক বাণিজ্য সম্পর্ক আরও কঠিন হয়ে উঠবে এবং এর ফলস্বরূপ অন্যান্য পণ্যের ওপরও শুল্ক আরোপ হতে পারে, যা আমেরিকান ব্যবসায়ীদের জন্য ক্ষতির কারণ হবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই শুল্কের কারণে যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে বিশেষ করে যেসব অঞ্চলে মেক্সিকান টমেটোর ওপর নির্ভরশীলতা বেশি, সেখানে দাম ১০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে। যেহেতু মেক্সিকান টমেটোগুলো সাধারণত পাকা অবস্থায় সংগ্রহ করা হয়, তাই এই ধরনের টমেটোর সরবরাহ কমে গেলে ভোক্তাদের পছন্দের তালিকায় প্রভাব পড়তে পারে।

যুক্তরাষ্ট্র ও মেক্সিকোর মধ্যে এই বাণিজ্য বিরোধের প্রভাব শুধু দুই দেশের মধ্যেই সীমাবদ্ধ থাকবে না, বরং বিশ্ব বাণিজ্যেও এর একটা প্রভাব পড়ার সম্ভাবনা রয়েছে। বিষয়টি বাংলাদেশের জন্য সরাসরি তাৎপর্যপূর্ণ না হলেও, আন্তর্জাতিক বাণিজ্যের ক্ষেত্রে শুল্ক এবং বাণিজ্য নীতির পরিবর্তন কিভাবে বাজারের ওপর প্রভাব ফেলে, তা এই ঘটনার মাধ্যমে বোঝা যায়।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *