যুক্তরাষ্ট্রের জলবায়ু নীতি: আসন্ন কপ৩০ সম্মেলনে বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ।
বিশ্বজুড়ে জলবায়ু পরিবর্তনের সংকট ক্রমেই বাড়ছে, আর এর প্রভাব সবচেয়ে বেশি অনুভূত হচ্ছে আমাদের প্রিয় মাতৃভূমি বাংলাদেশে। সমুদ্রপৃষ্ঠের উচ্চতা বৃদ্ধি, ঘন ঘন বন্যা ও ঘূর্ণিঝড়, সেই সঙ্গে লবণাক্ততা বৃদ্ধি—এসব প্রাকৃতিক দুর্যোগের শিকার হচ্ছে দেশের উপকূলীয় অঞ্চলসহ বিভিন্ন জেলা।
এমন পরিস্থিতিতে, আসন্ন কপ৩০ জলবায়ু সম্মেলনে উন্নত দেশগুলোর ভূমিকা অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কিন্তু উদ্বেগের বিষয় হলো, এই সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের সম্ভাব্য কিছু পদক্ষেপ বাংলাদেশের জন্য নতুন সংকট তৈরি করতে পারে।
আগামী নভেম্বরে ব্রাজিলের বেলেমে অনুষ্ঠিত হতে যাওয়া কপ৩০ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের সরাসরি অংশগ্রহণের সম্ভাবনা কম। এমনকি, দেশটির পক্ষ থেকে কোনো উচ্চ পর্যায়ের প্রতিনিধি দলও নাও পাঠানো হতে পারে।
তবে, এমনটি হলেও, জলবায়ু পরিবর্তনের মোকাবিলায় যুক্তরাষ্ট্রের নীতি-নির্ধারণী অবস্থান সম্মেলনটিকে প্রভাবিত করতে পারে। বিশেষ করে, জলবায়ু পরিবর্তন সংক্রান্ত নীতিগুলোতে যুক্তরাষ্ট্রের নেতিবাচক প্রভাব বিস্তারের আশঙ্কা করা হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় বিভিন্ন আন্তর্জাতিক চুক্তি থেকে নিজেদের গুটিয়ে নেয়। এমনকি জলবায়ু পরিবর্তনের বিরুদ্ধে লড়াইয়ে অন্য দেশগুলোর নেওয়া পদক্ষেপেও তারা বাধা দিয়েছে।
এই ধরনের নীতি কপ৩০ সম্মেলনে একটি বড় উদ্বেগের কারণ হতে পারে। কারণ, উন্নত দেশগুলো যদি জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা না করে, তবে এর সরাসরি প্রভাব পড়বে বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোর ওপর।
যুক্তরাষ্ট্রের এমন নীতির কারণে উন্নত দেশগুলো জলবায়ু পরিবর্তনের চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় তাদের আর্থিক প্রতিশ্রুতি কমাতে পারে। এর ফলে জলবায়ু পরিবর্তনের প্রভাব মোকাবিলায় বাংলাদেশের মতো দেশগুলো প্রয়োজনীয় আর্থিক সহায়তা থেকে বঞ্চিত হতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, উন্নত দেশগুলো যদি তাদের কার্বন নিঃসরণ কমানোর জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে ব্যর্থ হয়, তবে বৈশ্বিক তাপমাত্রা বৃদ্ধি পাবে, যা বাংলাদেশের জন্য আরও বড় দুর্যোগ ডেকে আনবে।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, কপ৩০ সম্মেলনে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে সরাসরি হস্তক্ষেপের সম্ভাবনা কম হলেও, তারা পর্দার আড়াল থেকে আলোচনাকে প্রভাবিত করার চেষ্টা করতে পারে। জলবায়ু অর্থায়ন, অর্থাৎ জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় উন্নয়নশীল দেশগুলোকে আর্থিক সহায়তা দেওয়ার ক্ষেত্রে যুক্তরাষ্ট্র ভিন্ন অবস্থান নিতে পারে।
অতীতে আন্তর্জাতিক সমুদ্র পরিবহন থেকে কার্বন নিঃসরণ কমানোর লক্ষ্যে একটি প্রস্তাবের বিরোধিতা করে যুক্তরাষ্ট্র নিজেদের বাণিজ্য স্বার্থকে অগ্রাধিকার দিয়েছিল। কপ৩০ সম্মেলনেও এমন ঘটনার পুনরাবৃত্তি হতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।
কপ৩০ সম্মেলনে চীনের ভূমিকাও গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। যুক্তরাষ্ট্রের অনুপস্থিতিতে চীন জলবায়ু পরিবর্তন মোকাবিলায় নেতৃত্ব দিতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। তবে, চীনের এই ভূমিকায় কতটা ইতিবাচক প্রভাব পড়বে, তা এখনো স্পষ্ট নয়।
ইউরোপীয় ইউনিয়নও সম্মেলনে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে, তবে তাদের অভ্যন্তরীণ কিছু মতপার্থক্য রয়েছে।
কপ৩০ সম্মেলনে উন্নত দেশগুলোর মধ্যে ঐক্যবদ্ধ প্রচেষ্টা এবং জলবায়ু পরিবর্তনের ঝুঁকি মোকাবিলায় জরুরি পদক্ষেপ নেওয়া অত্যন্ত জরুরি। বাংলাদেশের জন্য এই সম্মেলনটি খুবই গুরুত্বপূর্ণ, কারণ জলবায়ু পরিবর্তনের বিরূপ প্রভাব থেকে দেশকে বাঁচাতে হলে উন্নত দেশগুলোর সক্রিয় সহযোগিতা প্রয়োজন।
যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য প্রভাবশালী দেশগুলোর নীতি এক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
তথ্যসূত্র: সিএনএন