মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের অবকাঠামো ধীরে ধীরে উন্নত হচ্ছে, তবে এখনো অনেক পথ পাড়ি দিতে হবে। সম্প্রতি প্রকাশিত এক প্রতিবেদনে জানা গেছে, দেশটির রাস্তাঘাট, সেতু, পানীয় জল সরবরাহ ব্যবস্থা সহ বিভিন্ন ক্ষেত্রে উন্নয়নের ধারা বজায় রয়েছে।
তবে এই উন্নতি ধরে রাখতে হলে, সরকারি অর্থ বিনিয়োগের ধারাবাহিকতা প্রয়োজন।
আমেরিকান সোসাইটি অফ সিভিল ইঞ্জিনিয়ার্স (American Society of Civil Engineers) -এর প্রতিবেদন অনুযায়ী, দেশটির সামগ্রিক অবকাঠামোর মান ‘সি’ গ্রেড পেয়েছে, যা আগের রিপোর্টের তুলনায় সামান্য ভালো।
প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের সময়ে অবকাঠামো খাতে যে অর্থ বিনিয়োগ করা হয়েছিল, এটি তারই ফল।
রাস্তা, বাঁধ থেকে শুরু করে খাবার পানি সরবরাহ এবং রেল ব্যবস্থা—সবকিছুই এই মূল্যায়নের অন্তর্ভুক্ত ছিল।
প্রতিবেদনে সতর্ক করে বলা হয়েছে, অবকাঠামোর আরও অবনতি এবং খরচ বাড়াতে না চাইলে ফেডারেল সরকারের তহবিল অব্যাহত রাখতে হবে অথবা বাড়াতে হবে।
এই বিষয়ে প্রতিবেদনের প্রধান ড্যারেন ওলসন (Darren Olson) জানান, “আমরা দেখেছি বিনিয়োগের ফল পাওয়া যাচ্ছে, তবে এখনো অনেক কাজ বাকি।
তিনি আরও যোগ করেন, খারাপ রাস্তাঘাটের কারণে গাড়ির ক্ষতি, উড়োজাহাজ দেরিতে চলা, এমনকি বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে খাদ্য নষ্ট হওয়ার মতো ঘটনাগুলো মানুষের জীবন এবং অর্থনীতির ওপর খারাপ প্রভাব ফেলে।
জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে আরও চরম আবহাওয়ার মোকাবিলার জন্য অবকাঠামো তৈরি করা অপরিহার্য।
গত বছর দেশটির পূর্বাঞ্চলে এবং অ্যাপালাচিয়ান অঞ্চলে ঘূর্ণিঝড়ের ভয়াবহতার কথা উল্লেখ করে ওলসন বলেন, “আমাদের অবকাঠামোতে বিনিয়োগের মাধ্যমে আমরা অর্থনীতিকে আরও শক্তিশালী করতে পারি এবং বিশ্বব্যাপী প্রতিযোগিতায় টিকে থাকতে পারি।
২০২১ সালের ‘ইনফ্রাস্ট্রাকচার ইনভেস্টমেন্ট অ্যান্ড জবস অ্যাক্ট’-এর অধীনে প্রায় ৫৫০ বিলিয়ন মার্কিন ডলার (বর্তমানে ১ ডলার = ১১০ টাকা হিসাবে প্রায় ৬০,৫০০ বিলিয়ন বাংলাদেশী টাকা) বিনিয়োগ করা হয়।
এছাড়া, পরিচ্ছন্ন শক্তি এবং জলবায়ু পরিবর্তন বিষয়ক প্রকল্পে ২০২২ সালের ‘ইনফ্লেশন রিডাকশন অ্যাক্ট’-এর মাধ্যমে আরও প্রায় ৩০ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়।
প্রতিবেদনে উল্লেখ করা হয়েছে, আমেরিকার বিদ্যমান অবকাঠামোর মেরামতের জন্য প্রায় ৯.১ ট্রিলিয়ন ডলার প্রয়োজন।
এমনকি বর্তমান ফেডারেল তহবিল অব্যাহত থাকলেও, আগামী দশকে প্রায় ৩.৭ ট্রিলিয়ন ডলারের ঘাটতি দেখা দিতে পারে।
দেশের প্রায় ৫০ হাজার জল সরবরাহ ব্যবস্থার আধুনিকীকরণের জন্য আগামী দুই দশকে ৬২৫ বিলিয়ন ডলার প্রয়োজন।
এই খাতে গ্রেড ‘সি-মাইনাস’, যা আগের মতোই রয়েছে।
পুরনো ও ত্রুটিপূর্ণ জল সরবরাহ ব্যবস্থাগুলো সংস্কারের পাশাপাশি সীসা মিশ্রিত পাইপ পরিবর্তন এবং ‘পিএফএএস’ (PFAS) নামক রাসায়নিক পদার্থের পরিমাণ কমানোর মতো নতুন চ্যালেঞ্জগুলোও মোকাবেলা করতে হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের পানি বিষয়ক জোটের নীতি ও সরকারি বিষয়ক পরিচালক স্কট বেরি জানান, অবকাঠামো বিল অনেক গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্প শুরু করতে সাহায্য করেছে।
তবে, গত কয়েক দশকে এই খাতে বিনিয়োগের ঘাটতি অনেক বেড়েছে।
প্রতিবেদন অনুযায়ী, অভ্যন্তরীণ নৌপথ উন্নত করার জন্য এই বিলের মাধ্যমে কয়েক বিলিয়ন ডলার সহায়তা করা হয়েছে।
এর ফলে, নৌপথে পণ্য পরিবহনের পরিমাণ বেড়েছে, যা বাণিজ্যের জন্য খুবই গুরুত্বপূর্ণ।
উদাহরণস্বরূপ, মিসিসিপি নদীতে বার্জের মাধ্যমে কয়লা, সয়াবিন, ভুট্টা এবং অন্যান্য কাঁচামাল আন্তর্জাতিক বাজারে পাঠানো হয়।
সয় ট্রান্সপোর্টেশন কোয়ালিশনের নির্বাহী পরিচালক মাইক স্টিনহুক বলেন, প্রায়ই দেখা যায় গুরুত্বপূর্ণ প্রকল্পগুলো পর্যাপ্ত অর্থায়নের অভাবে সময় মতো শেষ করা যায় না, ফলে নির্মাণ সামগ্রী ও শ্রমিকের খরচ বাড়ে।
তবে, ব্রুকিংস ইনস্টিটিউশনের অর্থনীতিবিদ ক্লিফোর্ড উইনস্টন মনে করেন, অবকাঠামো ব্যবহারের নীতিতেও পরিবর্তন আনা প্রয়োজন।
যেমন, নিউইয়র্ক শহরে যানজট নিরসনে রাস্তায় চলাচলের জন্য চার্জ করার যে নিয়ম চালু করা হয়েছে, তা ব্যবহারকারীদের ওপর চাপ সৃষ্টি করে এবং নতুন সেতু ও টানেলের প্রয়োজনীয়তা কমাতে পারে।
সড়কগুলির অবস্থা এখনো খুব খারাপ, যা গত রিপোর্টের ‘ডি’ গ্রেডের তুলনায় বর্তমানে ‘ডি-প্লাস’।
যদিও ২০২১ সাল থেকে এই খাতে প্রায় ৫৯১ বিলিয়ন ডলার বিনিয়োগ করা হয়েছে।
এছাড়া, রেল ও বিদ্যুৎ খাতেও দুর্বলতা দেখা গেছে।
২০২৩ সালে ওহাইওতে একটি ট্রেনের লাইনচ্যুত হওয়ার ঘটনার কারণে রেলের গ্রেড ‘বি’ থেকে ‘বি-মাইনাস’-এ নেমে এসেছে।
বিদ্যুতের চাহিদা বেড়ে যাওয়ায় এই খাতেও অবনতি হয়েছে।
প্রকৌশলীরা বলছেন, অনেক খাতের সমস্যাগুলো দীর্ঘদিন ধরে চলছে।
তাই এখন এই দুর্বলতাগুলো কাটিয়ে উঠতে হবে, অন্যথায় ভবিষ্যতে বড় ধরনের ক্ষতির সম্ভাবনা রয়েছে।
আগামী বুধবার প্রকৌশলীদের একটি দল ওয়াশিংটনে আইনপ্রণেতাদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে এই বিষয়ে আলোচনা করবেন।
ড্যারেন ওলসন বলেন, অবকাঠামো উন্নয়নের বিষয়টি একটি দ্বিদলীয় ইস্যু।
তথ্যসূত্র: