যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক পর্যটনে উল্লেখযোগ্য হারে ভাটা পড়েছে, যা দেশটির অর্থনীতিতে গভীর প্রভাব ফেলতে পারে বলে আশঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। বিশেষ করে কানাডা, ইউরোপ ও এশিয়ার বিভিন্ন দেশ থেকে পর্যটকদের আগমন কমে যাওয়ায় উদ্বেগের সৃষ্টি হয়েছে।
পর্যটন বিষয়ক বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা এবং সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তাদের মতে, এই পরিস্থিতির মূল কারণ হলো রাজনৈতিক অস্থিরতা, বিভিন্ন দেশের প্রতি যুক্তরাষ্ট্রের নীতি এবং ভ্রমণ খরচ বৃদ্ধি। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের সময়ে নেওয়া কিছু সিদ্ধান্ত, যেমন শুল্ক বৃদ্ধি, অভিবাসন নীতি কঠোর করা এবং ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা—বহু দেশের মানুষের মধ্যে এক ধরনের ভীতি তৈরি করেছে।
এর ফলস্বরূপ, অনেক বিদেশি পর্যটক এখন আর যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণে আগ্রহী হচ্ছেন না।
পর্যটন বিষয়ক একটি আন্তর্জাতিক সংস্থা, ওয়ার্ল্ড ট্রাভেল অ্যান্ড ট্যুরিজম কাউন্সিল (World Travel & Tourism Council) এর পূর্বাভাস অনুযায়ী, ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রের বিদেশি পর্যটকদের ভ্রমণ খাতে ব্যয়ের পরিমাণ হ্রাস পাবে।
সংস্থাটি বলছে, ১৮৪টি দেশের মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রই একমাত্র দেশ যেখানে এই চিত্র দেখা যাবে। কাউন্সিলের প্রেসিডেন্ট ও সিইও জুলিয়া সিম্পসন বলেন, “অন্যান্য দেশ যখন পর্যটকদের স্বাগত জানাচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র সরকার যেন ‘বন্ধ’ করার সংকেত দেখাচ্ছে।
ট্যুরিজম ইকোনমিকস নামক গবেষণা সংস্থা জানাচ্ছে, ২০২৫ সালে যুক্তরাষ্ট্রে আন্তর্জাতিক পর্যটকদের আগমন ৮.২ শতাংশ কমতে পারে। যদিও আগে তারা ৯.৪ শতাংশ পতনের পূর্বাভাস দিয়েছিল, তবুও কোভিড-১৯ মহামারীর আগের সময়ের তুলনায় এই সংখ্যা অনেক কম।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহর, যেমন বাফেলো, লস অ্যাঞ্জেলেস এবং ওয়াশিংটন ডিসিতে পর্যটকদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্যভাবে কমেছে।
বাফেলোর স্থানীয় পর্যটন বিভাগের প্রধান প্যাট্রিক কলার জানান, কানাডার পর্যটকদের আকৃষ্ট করতে তারা বিভিন্ন প্রচারণা চালালেও, প্রত্যাশিত সাড়া মেলেনি।
পর্যটকদের এই সংখ্যা হ্রাসের কারণে স্থানীয় অর্থনীতিতে নেতিবাচক প্রভাব পড়ছে। অনেক শহরে হোটেল, রেস্তোরাঁ এবং অন্যান্য ব্যবসা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে। নিউইয়র্কের একটি আন্তর্জাতিক নৃত্য প্রতিযোগিতার আয়োজকরা জানিয়েছেন, বিদেশি প্রতিযোগীরা যুক্তরাষ্ট্রে আসতে অনিচ্ছুক হওয়ায় তারা প্রতিযোগিতাটি অন্য কোনো দেশে করার কথা ভাবছেন।
তবে, সব গন্তব্যের চিত্র একরকম নয়। উইসকনসিনের ডোর পেনিনসুলা-র মতো কিছু অঞ্চলে অভ্যন্তরীণ পর্যটকদের আনাগোনায় ব্যবসা ভালো হয়েছে। এছাড়া, যুক্তরাষ্ট্রের প্রধান বিমান সংস্থাগুলি জানিয়েছে, অভ্যন্তরীণ রুটে টিকিটের চাহিদা বাড়ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের পর্যটন শিল্পের জন্য শিক্ষণীয় হতে পারে। বাংলাদেশের উচিত পর্যটকদের আকৃষ্ট করার জন্য একটি বন্ধুত্বপূর্ণ পরিবেশ তৈরি করা এবং আন্তর্জাতিক পরিমণ্ডলে দেশের ইতিবাচক ভাবমূর্তি তুলে ধরা।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস