আতঙ্কে যুক্তরাষ্ট্র! গাজায় ইসরায়েলের সমর্থনে ফাটল, ট্রাম্প শিবিরেও ভাঙন?

যুক্তরাষ্ট্রের জনসাধারণের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন দ্রুত কমছে, যা দেশটির অভ্যন্তরীণ রাজনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। গাজায় ইসরায়েলের সামরিক কার্যক্রমের প্রতি মার্কিন সমর্থন হ্রাস পাওয়ার কারণ অনুসন্ধানে জানা যায়, ডেমোক্রেটদের মধ্যে অসন্তোষ বাড়ছে এবং রিপাবলিকান দলের ‘ম্যাগা’ (MAGA) অংশের মধ্যেও বিভেদ সৃষ্টি হয়েছে।

সম্প্রতি প্রকাশিত একটি গ্যালাপ পোল (Gallup poll) অনুযায়ী, গাজায় ইসরায়েলের সামরিক পদক্ষেপের প্রতি মাত্র ৩২ শতাংশ মার্কিন নাগরিক সমর্থন জানাচ্ছে। গত বছরের ৭ অক্টোবর হামাসের হামলার পর থেকে এটি সমর্থন হ্রাসের একটি রেকর্ড। এই জরিপে রাজনৈতিক বিভাজনও স্পষ্ট হয়েছে।

রিপাবলিকানদের মধ্যে ৭১ শতাংশ ইসরায়েলকে সমর্থন জানালেও, ডেমোক্রেটদের মধ্যে মাত্র ৮ শতাংশ এবং স্বতন্ত্রদের মধ্যে ২৫ শতাংশ সমর্থন জানাচ্ছে। সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো, ১৮ থেকে ৩৪ বছর বয়সীদের মধ্যে মাত্র ৯ শতাংশ ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন জানাচ্ছে।

জনমত পরিবর্তনের এই প্রবণতা উভয় দলের জন্যই গুরুত্বপূর্ণ। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘ম্যাগা’ আন্দোলনের কিছু প্রভাবশালী সদস্য এখন প্রশ্ন তুলছেন, যুক্তরাষ্ট্র কেন ইসরায়েলকে সমর্থন করবে। অন্যদিকে, ডেমোক্রেটদের মধ্যে সমর্থন হ্রাসের কারণে ২০২৬ ও ২০২৮ সালের নির্বাচনে দলটির প্রার্থী বাছাইয়ের ক্ষেত্রেও প্রভাব পড়তে পারে।

মার্কিন সমর্থন কমার এই ধারা বিশ্বব্যাপী একটি প্রবণতার অংশ। যুক্তরাজ্য জানিয়েছে, গাজায় মানবিক সংকট নিরসনে ইসরায়েল উল্লেখযোগ্য পদক্ষেপ না নিলে তারা জাতিসংঘের সাধারণ পরিষদে ফিলিস্তিনকে রাষ্ট্র হিসেবে স্বীকৃতি দেবে। এর আগে ফ্রান্সও একই সিদ্ধান্ত নিয়েছে।

জাতিসংঘের সংস্থাগুলো সতর্ক করে বলেছে, অবরুদ্ধ গাজায় পূর্ণাঙ্গ মানবিক কার্যক্রম চালানোর জন্য সময় ফুরিয়ে আসছে। বিশ্ব খাদ্য কর্মসূচির তথ্য অনুযায়ী, বর্তমানে এখানকার জনসংখ্যার এক-তৃতীয়াংশের বেশি (৩৯ শতাংশ) মানুষ দিনের পর দিন খাবার পাচ্ছে না। প্রায় পাঁচ লাখ মানুষ—যা গাজার মোট জনসংখ্যার এক-চতুর্থাংশ—বর্তমানে দুর্ভিক্ষ-পরিস্থিতির মধ্যে দিন কাটাচ্ছে।

কংগ্রেসনাল ইসরায়েল অ্যালাইস ককাসের (Congressional Israel Allies Caucus) কো-চেয়ার ক্যালিফোর্নিয়ার ডেমোক্রেট প্রতিনিধি ব্র্যাড শেরম্যান সিএনএনকে (CNN) জানান, ইসরায়েল বিশ্ব জনমতের লড়াইয়ে হারাচ্ছে। তিনি বলেন, হামাস বেসামরিক হতাহতের ঘটনা ঘটিয়ে বিশ্ব দরবারে ইসরায়েলের ভাবমূর্তি ক্ষুণ্ণ করতে চাইছে।

শেরম্যান বলেন, “ইসরায়েলকে তাদের সামরিক উদ্দেশ্য এবং এর জন্য কতজন হতাহত হতে পারে, সে বিষয়ে সিদ্ধান্ত নিতে হবে। জাতীয় নিরাপত্তা রক্ষার পাশাপাশি বিশ্বজুড়ে নিজেদের ভাবমূর্তিও ধরে রাখতে হবে।”

রিপাবলিকান দলের মধ্যে ইসরায়েলের পদক্ষেপ নিয়ে বিভেদ দেখা যাচ্ছে। ট্রাম্প সম্প্রতি ইসরায়েলি প্রধানমন্ত্রী বেনিয়ামিন নেতানিয়াহুর এই দাবির বিরোধিতা করেছেন যে, গাজায় কোনো দুর্ভিক্ষ নেই। রিপাবলিকান কংগ্রেসম্যান মার্জোরি টেলর গ্রিন গাজার সংকটকে ‘গণহত্যা’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।

ফ্লোরিডার রিপাবলিকান প্রতিনিধি র্যান্ডি ফাইন মনে করেন, যারা ইসরায়েলকে গণহত্যার সঙ্গে তুলনা করছেন, তারা হয় ইহুদি বিদ্বেষী, না হয় বোকা, অথবা উভয়ই।

অন্যদিকে, ট্রাম্পের সাবেক চিফ স্ট্র্যাটেজিস্ট স্টিভ ব্যানন এক পডকাস্টে (podcast) বলেছেন, ট্রাম্পের ‘ম্যাগা’ আন্দোলনের ৩০ বছরের কম বয়সীদের মধ্যে ইসরায়েলের প্রতি সমর্থন খুবই কম।

ডেমোক্রেটদের মধ্যেও ইসরায়েল ইস্যু বেশ কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। বিশেষ করে মিশিগান রাজ্যে, যেখানে উল্লেখযোগ্য সংখ্যক আরব-আমেরিকান বসবাস করেন। এই রাজ্যটিতে ২০২৬ সালের সিনেট নির্বাচন অনুষ্ঠিত হবে। এছাড়া, ২০২৮ সালের প্রেসিডেন্ট নির্বাচনে ডেমোক্রেট দল থেকে যারা প্রার্থী হতে চান, তাদের ইসরায়েল নীতি নিয়ে কঠিন প্রশ্নের সম্মুখীন হতে হবে।

পেনসিলভানিয়ার ডেমোক্রেট প্রতিনিধি সামার লি বলেছেন, “যুক্তরাষ্ট্রের উচিত অবিলম্বে যুদ্ধবিরতি দাবি করা, বোমা সরবরাহ বন্ধ করা এবং গাজায় মানবিক সহায়তা পাঠানোর জন্য শর্তহীন আহ্বান জানানো।”

এই পরিস্থিতিতে, ডেমোক্রেট দলের মধ্যে একটি ‘পূর্ণ মানসিকতার পরিবর্তন’ প্রয়োজন বলে মনে করেন অনেকে। বারাক ওবামার সাবেক সহযোগী টমি ভিয়েটর মনে করেন, যুদ্ধ শেষ হওয়ার পর পরিস্থিতি আগের মতো থাকবে না।

নর্থ আমেরিকার ইহুদি ফেডারেশনের প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা এরিক ফিঙ্গারহুট বলেন, গ্যালাপের জরিপ মূলত যুদ্ধের নেতিবাচক মিডিয়া কভারেজের প্রতিফলন।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *