মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র এবং জাপানের মধ্যে সামরিক সহযোগিতা জোরদার করার ঘোষণা এসেছে, যা বিশেষভাবে চীনকে প্রতিরোধের লক্ষ্যে নেওয়া হয়েছে। সম্প্রতি, মার্কিন প্রতিরক্ষা সচিব (পেন্টাগন প্রধান) পেটে হেগসেথ টোকিও সফর করেন এবং সেখানে জাপানের কর্মকর্তাদের সঙ্গে আলোচনা করেন।
এই বৈঠকে তিনি দুই দেশের মধ্যে একটি ‘যোদ্ধা মানসিকতা’র কথা উল্লেখ করেন, যা তাইওয়ান প্রণালী সহ ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাব মোকাবিলায় গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে।
আলোচনায় হেগসেথ জোর দিয়ে বলেন, চীনকে প্রতিহত করতে জাপান যুক্তরাষ্ট্রের জন্য একটি অপরিহার্য অংশীদার। তিনি উল্লেখ করেন, যুক্তরাষ্ট্র এই অঞ্চলে শক্তিশালী প্রতিরোধ ব্যবস্থা বজায় রাখতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ।
এর মাধ্যমে চীনের সম্ভাব্য আগ্রাসী পদক্ষেপ প্রতিহত করা সম্ভব হবে। তাইওয়ানের চারপাশে চীনের সামরিক তৎপরতা বৃদ্ধি এবং তাইওয়ানকে নিজেদের নিয়ন্ত্রণে আনতে বেইজিংয়ের পক্ষ থেকে বল প্রয়োগের সম্ভাবনা বেড়ে যাওয়ায় এই অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি আরো গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
হেগসেথের এই সফরের সময়, উভয় দেশ যৌথভাবে ক্ষেপণাস্ত্র তৈরি এবং সামরিক সরঞ্জাম সরবরাহ করার বিষয়েও আলোচনা করেছে। জানা গেছে, তারা AMRAAM ক্ষেপণাস্ত্র এবং SM-6 সারফেস-টু-এয়ার প্রতিরক্ষা ক্ষেপণাস্ত্রের উৎপাদনে সহযোগিতা করতে রাজি হয়েছে, যা সামরিক সক্ষমতা বৃদ্ধিতে সহায়ক হবে।
অন্যদিকে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের ‘আমেরিকা ফার্স্ট’ নীতির কারণে এই অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের নিরাপত্তা প্রতিশ্রুতিতে পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে। ট্রাম্প অতীতে যুক্তরাষ্ট্র-জাপান নিরাপত্তা জোটের সমালোচনা করেছেন এবং জাপানের উপর বাণিজ্য শুল্ক আরোপের হুমকিও দিয়েছেন।
বর্তমানে, জাপানে প্রায় ৫০,০০০ মার্কিন সেনা মোতায়েন রয়েছে এবং তাদের ফাইটার জেটগুলি মূলত তাইওয়ানের পূর্বে ওকিনাওয়ায় অবস্থিত।
বিশ্লেষকদের মতে, ট্রাম্পের এই ধরনের নীতি ইন্দো-প্যাসিফিক অঞ্চলে যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোর মধ্যে সামরিক ব্যয় বাড়ানোর ক্ষেত্রে চাপ সৃষ্টি করতে পারে। যদিও, জাপানের উপর ট্রাম্পের ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের কারণে দেশটিতে অর্থনৈতিক প্রভাব পড়তে পারে, যা আগামী এপ্রিল মাস থেকে কার্যকর হবে।
যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের মধ্যে এই সামরিক সহযোগিতা এবং চীনের প্রতি প্রতিরোধের কৌশল বাংলাদেশের জন্য অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ। কারণ, এটি আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে একটি নতুন মেরুকরণ তৈরি করছে।
বাংলাদেশের পররাষ্ট্র নীতিতে, এই অঞ্চলের শান্তি ও স্থিতিশীলতা বজায় রাখা একটি প্রধান লক্ষ্য। তাই, এই অঞ্চলের নিরাপত্তা পরিস্থিতি এবং বিভিন্ন দেশের মধ্যেকার সম্পর্ক সম্পর্কে অবগত থাকা জরুরি।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা