মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের মধ্যে শুরু হওয়া সামরিক মহড়া নিয়ে চীন তীব্র আপত্তি জানিয়েছে।
বৃহস্পতিবার থেকে শুরু হওয়া এই দুই সপ্তাহের মহড়ায় এমন ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত করা হয়েছে যা দিয়ে চীনের মূল ভূখণ্ডে আঘাত হানা সম্ভব।
বেইজিং একে আঞ্চলিক নিরাপত্তা ও স্থিতিশীলতার প্রতি হুমকি হিসেবে বর্ণনা করেছে।
এই সামরিক মহড়া ‘রেসোলিউট ড্রাগন’ (Resolute Dragon) নামে পরিচিত।
এর কয়েক দিন আগে, মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী এবং চীনের প্রতিরক্ষামন্ত্রীর মধ্যে একটি ভার্চুয়াল বৈঠক অনুষ্ঠিত হয়।
পেন্টাগন এটিকে ‘candid and constructive’ হিসেবে উল্লেখ করেছে।
মার্কিন-জাপান যৌথ মহড়াটি এমন এক সময়ে অনুষ্ঠিত হচ্ছে, যখন বেইজিংয়ে একটি বিশাল সামরিক কুচকাওয়াজ অনুষ্ঠিত হয়েছে।
সেখানে চীনের পিপলস লিবারেশন আর্মি তাদের অত্যাধুনিক ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা প্রদর্শন করে।
এই কুচকাওয়াজে চীনের প্রেসিডেন্ট শি জিনপিং, রাশিয়ার প্রেসিডেন্ট ভ্লাদিমির পুতিন এবং উত্তর কোরিয়ার নেতা কিম জং-উন উপস্থিত ছিলেন।
মার্কিন মেরিন কর্পস-এর এক প্রেস বিজ্ঞপ্তিতে জানানো হয়েছে, এই যৌথ মহড়ায় যুক্তরাষ্ট্রের ‘টাইফন’ (Typhon) এবং ‘এনএমইসিস’ (NMESIS) ক্ষেপণাস্ত্রের পাশাপাশি জাপানের ‘টাইপ-১২’ (Type 12) ভূমি থেকে ভূমিতে নিক্ষেপযোগ্য ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবহার করা হবে।
বিভিন্ন পাল্লার এই ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাগুলো উপকূলীয় এলাকা রক্ষা, গুরুত্বপূর্ণ স্থানগুলো সুরক্ষিত রাখা এবং সমুদ্র পথে নিজেদের শক্তি প্রদর্শনে সক্ষম।
চীনের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়ের মুখপাত্র গুও জিয়াকুন এই ‘টাইফন’ ক্ষেপণাস্ত্র মোতায়েনকে ‘এলাকার কৌশলগত নিরাপত্তার জন্য একটি গুরুতর হুমকি’ হিসেবে অভিহিত করেছেন।
তিনি বলেন, ‘যুক্তরাষ্ট্র ও জাপানের উচিত অন্যান্য দেশের নিরাপত্তা উদ্বেগের প্রতি সম্মান জানানো এবং ‘টাইফন’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা মোতায়েন করা থেকে বিরত থাকা।’
মার্কিন সেনাবাহিনীর মিড-রেঞ্জ ক্যাপাবিলিটি (MRC) সিস্টেম নামেও পরিচিত ‘টাইফন’ ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থাটি স্ট্যান্ডার্ড মিসাইল-৬ (SM-6) নিক্ষেপ করতে পারে, যা ব্যালিস্টিক ক্ষেপণাস্ত্র প্রতিরক্ষা, বিমান প্রতিরক্ষা এবং সমুদ্রের জাহাজে আঘাত হানতে সক্ষম।
এই ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা প্রায় ৩৭0 কিলোমিটার (২৩০ মাইল)।
এছাড়াও, এটি ১,৬০০ কিলোমিটার (১,০০০ মাইল) পাল্লার ক্রুজ ক্ষেপণাস্ত্র ‘টমাহক ল্যান্ড অ্যাটাক মিসাইল’ (Tomahawk Land Attack Missile) নিক্ষেপ করতে পারে।
গত বছর ফিলিপাইনে এই ক্ষেপণাস্ত্র প্রথমবারের মতো ব্যবহারের সময়ও বেইজিং এর তীব্র নিন্দা জানিয়েছিল।
মেরিন কর্পস-এর বিবৃতিতে বলা হয়েছে, ‘টাইফন’ ক্ষেপণাস্ত্র জাপানের মূল দ্বীপ হোনশুর মেরিন কর্পস এয়ার স্টেশন ইওয়াকুনিতে মোতায়েন করা হবে।
মহড়ায় অন্যান্য ক্ষেপণাস্ত্রগুলো কোথায় মোতায়েন করা হবে, সে সম্পর্কে বিবৃতিতে কিছু বলা হয়নি।
তবে এতে উল্লেখ করা হয়েছে, মহড়াটি জাপানের দক্ষিণ-পশ্চিম দ্বীপপুঞ্জে অনুষ্ঠিত হবে, যা তাইওয়ানের উপকূল থেকে প্রায় ১১৩ কিলোমিটার দূরে অবস্থিত।
তাইওয়ানকে চীন নিজেদের অংশ হিসেবে দাবি করে এবং প্রয়োজনে সামরিক শক্তি প্রয়োগের হুমকি দিয়ে থাকে।
অন্যদিকে, এনএমইসিস (NMESIS) একটি স্বল্প-পাল্লার ক্ষেপণাস্ত্র ব্যবস্থা, যা প্রায় ১৮৫ কিলোমিটার পর্যন্ত সমুদ্র লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানতে পারে।
জাপানের নতুনভাবে উন্নত ‘টাইপ-১২’ ক্ষেপণাস্ত্রের পাল্লা প্রায় ৯০০ কিলোমিটার।
বুধবার মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে কোনো সংঘাত চায় না এবং চীনের সরকার পরিবর্তন বা চীনের বিরুদ্ধে কোনো কঠোর পদক্ষেপ নিতেও আগ্রহী নয়।
তবে যুক্তরাষ্ট্র এশিয়া-প্রশান্ত মহাসাগরীয় অঞ্চলে তাদের গুরুত্বপূর্ণ স্বার্থ রক্ষা করতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
চীনের পক্ষ থেকে তাইওয়ান এবং দক্ষিণ চীন সাগর নিয়ে উদ্বেগের কথা জানানো হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যে শীর্ষ পর্যায়ের আলোচনা বাড়ছে।
ধারণা করা হচ্ছে, এই বছর ট্রাম্প এবং শি জিনপিংয়ের মধ্যে একটি শীর্ষ বৈঠক অনুষ্ঠিত হতে পারে।
এই লক্ষ্যে প্রস্তুতি নেওয়া হচ্ছে।
মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী অ্যান্টনি ব্লিংকেন এবং চীনের পররাষ্ট্রমন্ত্রী ওয়াং ই-র মধ্যে সম্প্রতি ফোনালাপ হয়েছে।
উভয় পক্ষই এই আলোচনাকে ‘সময়োপযোগী, প্রয়োজনীয় এবং ফলপ্রসূ’ হিসেবে বর্ণনা করেছে।
এছাড়া, দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান মতপার্থক্যগুলো নিরসনে এবং সহযোগিতা বাড়াতে শীর্ষ পর্যায়ের কূটনৈতিক সম্পর্ককে আরও জোরদার করার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে।
এদিকে, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আইনপ্রণেতাদের একটি দ্বিদলীয় প্রতিনিধি দল এ মাসের শেষের দিকে চীন সফর করবেন।
গত ছয় বছরের মধ্যে এটিই হবে প্রথম কোনো প্রতিনিধি দলের চীন সফর।
তথ্য সূত্র: সিএনএন