মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে জুলাই মাসে কর্মসংস্থান বৃদ্ধির গতি উল্লেখযোগ্যভাবে কমে গেছে। নতুন প্রকাশিত তথ্যে দেখা যাচ্ছে, গত মাসে মাত্র ৭৩ হাজার নতুন কর্মসংস্থান সৃষ্টি হয়েছে, যা অর্থনীতির জন্য একটি উদ্বেগের বিষয়।
পূর্বেকার মাসগুলোর তথ্যও সংশোধন করা হয়েছে, যা পরিস্থিতিকে আরও গুরুতর করে তুলেছে। অর্থনীতিবিদরা মনে করছেন, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি, বিশেষ করে শুল্ক এবং অনিশ্চয়তা, নিয়োগের ক্ষেত্রে একটি বাধা সৃষ্টি করছে।
জুলাই মাসের এই দুর্বল কর্মসংস্থান বৃদ্ধির পাশাপাশি, মে এবং জুন মাসের কর্মসংস্থান সংক্রান্ত তথ্যও সংশোধন করা হয়েছে। মে মাসের হিসেবে ১ লক্ষ ৪৪ হাজার নতুন চাকরির পরিবর্তে সংশোধন করে ১৯ হাজারে নামিয়ে আনা হয়েছে।
একইভাবে, জুন মাসের ১ লক্ষ ৪৭ হাজার চাকরির প্রারম্ভিক হিসাব সংশোধন করে ১৪ হাজারে নিয়ে আসা হয়েছে। এই বিশাল পরিবর্তনগুলো শ্রমবাজারের দুর্বলতাকেই নির্দেশ করে।
অর্থনীতিবিদরা বলছেন, এই পরিস্থিতি বাণিজ্য নীতি এবং অভিবাসন নীতির কারণে সৃষ্ট হয়েছে, যা কর্মী সরবরাহকে প্রভাবিত করছে। বিশেষ করে, অভিবাসী শ্রমিকদের ক্ষেত্রে এর প্রভাব বেশি।
নির্মাণ এবং উৎপাদন খাতেও দুর্বল কর্মসংস্থান দেখা গেছে। স্বাস্থ্যসেবা এবং সামাজিক সহায়তা খাতে কিছু কর্মসংস্থান বাড়লেও, তা পরিস্থিতি সামাল দিতে যথেষ্ট নয়।
এই প্রতিবেদনের ফলে ফেডারেল রিজার্ভে সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা বাড়ছে। বিশ্লেষকরা মনে করছেন, সেপ্টেম্বরেই হয়তো সুদের হার কমানো হতে পারে।
এছাড়া, বেকারত্বের হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৪.২ শতাংশে, যা অর্থনীতির জন্য একটি নেতিবাচক ইঙ্গিত। কৃষ্ণাঙ্গ আমেরিকানদের মধ্যে বেকারত্বের হার বেড়ে ৭.২ শতাংশে পৌঁছেছে, যা ২০২১ সালের অক্টোবর মাসের পর সর্বোচ্চ।
শ্রমশক্তির আকারও সংকুচিত হচ্ছে, যা মজুরি বৃদ্ধি এবং কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রে সমস্যা তৈরি করতে পারে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শ্রমিক সরবরাহ কমে গেলে মজুরি বাড়ার চাপ তৈরি হবে। এছাড়া, বিদেশি শ্রমিক কমে যাওয়ায় বিভিন্ন শিল্পে কর্মী নিয়োগের ক্ষেত্রেও সমস্যা হতে পারে।
এর ফলে সরবরাহ শৃঙ্খলে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের এই অর্থনৈতিক মন্দা বিশ্ব অর্থনীতিতে, বিশেষ করে উন্নয়নশীল দেশগুলোর জন্য উদ্বেগের কারণ। এর কারণ, মার্কিন অর্থনীতির দুর্বলতা বিশ্ব বাণিজ্যে প্রভাব ফেলতে পারে, যা বাংলাদেশের অর্থনীতিকেও ক্ষতিগ্রস্ত করতে পারে।
উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন শুল্ক নীতির কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে, যা দেশের অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিকে বাধাগ্রস্ত করবে।
মোটকথা, জুলাই মাসের এই প্রতিবেদন আমেরিকার শ্রমবাজারের দুর্বল চিত্র তুলে ধরেছে। বাণিজ্য নীতি এবং অন্যান্য কারণের জন্য কর্মসংস্থান কমে যাওয়া, সুদের হার কমানোর সম্ভাবনা এবং বেকারত্বের হার বৃদ্ধি—এগুলো সবই অর্থনীতির জন্য সতর্কবার্তা।
এই পরিস্থিতিতে, বিশ্ব অর্থনীতির দিকে নজর রাখা এবং সম্ভাব্য ঝুঁকিগুলো মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া জরুরি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন