যুক্তরাষ্ট্রে শিশুদের টিকাকরণের হারে উদ্বেগজনক পতন, হামের প্রকোপ বাড়ছে। যুক্তরাষ্ট্রে শিশুদের টিকাকরণ কর্মসূচি নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে।
গত বছর কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি হওয়া শিশুদের মধ্যে রেকর্ড সংখ্যক টিকা নেয়নি। এর ফলে হাম সহ একাধিক রোগের প্রাদুর্ভাব দেখা যাচ্ছে।
দেশটির স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকা গ্রহণে অনীহা এবং টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে ছাড়ের (exemption) প্রবণতা বাড়ায় এমন পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের রোগ নিয়ন্ত্রণ ও প্রতিরোধ কেন্দ্র (CDC) থেকে প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে কিন্ডারগার্টেনে ভর্তি হওয়া শিশুদের মধ্যে প্রায় ৩.৬ শতাংশ কোনো না কোনো টিকার ছাড় নিয়েছে।
এর ফলে, অন্তত একটি রাজ্যে বাধ্যতামূলক টিকা থেকে প্রায় ১ লক্ষ ৩৮ হাজার শিশু বাদ পড়েছে। গত চার বছরে এই ছাড়ের হার ১ শতাংশের বেশি বেড়েছে।
উদ্বেগের বিষয় হলো, এই ছাড়ের বেশিরভাগই চিকিৎসা বিষয়ক কোনো কারণে নয়, বরং অন্য ব্যক্তিগত বা দার্শনিক কারণে নেওয়া হয়েছে।
এছাড়াও, নতুন তথ্য বলছে, ২০২৪-২৫ শিক্ষাবর্ষে প্রায় ২ লক্ষ ৮৬ হাজার শিশু হাম, মাম্পস ও রুবেলা (MMR) টিকার সম্পূর্ণ ডোজ গ্রহণ করেনি।
এর ফলস্বরূপ, দেশটিতে হামের প্রাদুর্ভাব বেড়েছে, যা গত ২৫ বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
এই পরিস্থিতিতে, এমএমআর-এর কভারেজ ৯২.৫ শতাংশে নেমে এসেছে, যা ফেডারেল সরকারের নির্ধারিত ৯৫ শতাংশের লক্ষ্যমাত্রার চেয়ে কম।
সিডিসি’র তথ্য অনুযায়ী, হামের আক্রান্তদের বেশিরভাগই টিকা নেয়নি।
চিকিৎসকরা বলছেন, হাম ও হুপিং কাশির মতো মারাত্মক রোগ থেকে শিশুদের বাঁচাতে টিকাদান এখনও সবচেয়ে কার্যকর উপায়।
তবে, কিছু অভিভাবক টিকা নেওয়ার বিষয়ে দ্বিধাগ্রস্ত হচ্ছেন। কারো কারো মধ্যে ভুল ধারণা কাজ করছে।
অনেকেই মনে করেন টিকা নেওয়ার চেয়ে স্বাস্থ্যকর জীবনযাপন বেশি জরুরি। তবে, চিকিৎসকদের মতে, টিকা রোগের বিরুদ্ধে প্রতিরোধ তৈরি করে এবং শিশুদের সুস্থ রাখতে সহায়তা করে।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৪৫টি রাজ্যে ধর্মীয় বিশ্বাসের কারণে শিশুদের টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে ছাড় দেওয়ার নিয়ম রয়েছে। এছাড়া, ১৫টি রাজ্যে ব্যক্তিগত বা দার্শনিক কারণেও ছাড়ের সুযোগ রয়েছে।
তবে, আমেরিকান একাডেমি অফ পেডিয়াট্রিক্স (AAP) এর প্রেসিডেন্ট ড. সুসান ক্রেসলি মনে করেন, টিকা দেওয়ার বিষয়ে অভিভাবকদের সচেতন করা জরুরি।
অন্যদিকে, অনেক রাজ্যে টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে ছাড়ের সংখ্যা বাড়ছে। সিডিসি’র তথ্য অনুযায়ী, ৩৬টি রাজ্যে এই হার বেড়েছে।
১৭টি রাজ্যে কিন্ডারগার্টেনের ৫ শতাংশেরও বেশি শিক্ষার্থীর টিকা নেওয়ার ছাড় রয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, টিকাকরণের হার কমে গেলে হার্ড ইমিউনিটি দুর্বল হয়ে যায়, ফলে রোগের প্রাদুর্ভাব বেড়ে যাওয়ার আশঙ্কা থাকে।
বিশেষজ্ঞরা আরও বলছেন, টিকা নেওয়ার ক্ষেত্রে জনগণের মধ্যে সচেতনতা বাড়াতে হবে। টিকাদান কার্যক্রমের গুরুত্ব সম্পর্কে অভিভাবকদের বোঝাতে হবে।
বিশেষ করে, হামের মতো রোগের বিস্তার রোধে টিকাদানের বিকল্প নেই।
বাংলাদেশেও শিশুদের টিকাকরণ কর্মসূচি একটি গুরুত্বপূর্ণ বিষয়। এখানেও টিকাদান কার্যক্রমের মাধ্যমে বিভিন্ন রোগ প্রতিরোধ করা হয়।
টিকাদান কর্মসূচি সফল করতে হলে, জনগণের মধ্যে সচেতনতা বৃদ্ধি এবং টিকাদান সম্পর্কে সঠিক ধারণা দেওয়া অপরিহার্য।
তথ্য সূত্র: সিএনএন