যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী এক ব্যক্তিকে গ্রিসে গ্রেফতার করা হয়েছে। ইতালির রোমের একটি পার্কে এক শিশু ও তার মায়ের মরদেহ উদ্ধারের ঘটনায় এই গ্রেফতার।
পুলিশ জানিয়েছে, নিহত মা ও মেয়ের হত্যার সঙ্গে জড়িত থাকার সন্দেহে তাকে আটক করা হয়েছে।
গত ১৩ই জুন, স্কিয়াথোস দ্বীপে গ্রিসের পুলিশ, ইতালির পুলিশের সহযোগিতায় ওই ব্যক্তিকে চিহ্নিত করে। পরে তাকে গ্রেফতার করা হয়।
ইতালির সরকারি কৌঁসুলি ফ্রান্সেস্কো লো ভই এক বিবৃতিতে জানান, “ওই ব্যক্তির বিরুদ্ধে একটি নবজাতক শিশুকে হত্যা এবং তার মায়ের মরদেহ লুকানোর অভিযোগ রয়েছে। গত ৭ই জুন রোমের ভিলা ডোরিয়া পামফিলির পার্কে মা ও মেয়ের মরদেহ পাওয়া যায়।”
পুলিশ সূত্রে জানা যায়, শিশুটির বয়স ছয় থেকে দশ মাসের মধ্যে ছিল। ৭ই জুন পার্কের ঝোপের মধ্যে শিশুটির মরদেহ পাওয়া যায়।
এর কয়েক ঘণ্টা পর, পার্কটিতে খেলাধুলা করা এক শিশুর নজরে আসে একটি কালো ময়লার ব্যাগ থেকে বেরিয়ে আসা একটি হাত। পরে সেখান থেকে আনুমানিক ৩০ বছর বয়সী এক নারীর বিবস্ত্র মৃতদেহ উদ্ধার করা হয়।
ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে জানা যায়, নিহত নারীই শিশুটির মা ছিলেন। ১১ই জুন এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, নারীর শরীরে কোনো আঘাতের চিহ্ন পাওয়া যায়নি।
তবে শিশুটির পেটে কোনো খাবার ছিল না এবং শ্বাসরোধের চিহ্ন পাওয়া গেছে।
নিহতদের পরিচয় শনাক্ত করতে না পারায় পুলিশ নারীর শরীরে থাকা ট্যাটুর ছবি প্রকাশ করে। ৯ই জুন ইতালির একটি জনপ্রিয় টেলিভিশন শো ‘চি’ল হা ভিস্তো?’-তে (যিনি তাকে দেখেছেন?) এই ছবিগুলো দেখানো হয়।
অনুষ্ঠানে জনসাধারণের কাছে নিহত নারী ও শিশুর পরিচয় জানার জন্য তথ্য চাওয়া হয়।
অনুষ্ঠানটি দেখার পর বেশ কয়েকজন নারী ও শিশুটিকে বিভিন্ন সময় দেখেছেন বলে জানান। এমনকি, নিহত নারী ও এক ব্যক্তির মধ্যে ঝগড়ার প্রত্যক্ষদর্শীও ছিলেন কেউ কেউ।
পুলিশকে সেই ঘটনার বিষয়ে জানানো হলেও, তখন পর্যন্ত কাউকে গ্রেফতার করা হয়নি। পরে সেই সূত্র ধরেই অভিযুক্ত ব্যক্তির পরিচয় শনাক্ত করা সম্ভব হয়।
ওই ব্যক্তির ছবিও প্রকাশিত হয়েছে, যেখানে তাকে রক্তাক্ত অবস্থায় দেখা যায়। এছাড়া, একটি ছবিতে শিশুটিকে কোলে নিয়ে তিনি পুলিশের সঙ্গে কথা বলছেন।
ঘটনার দুই দিন আগে তোলা ছবিটিতে শিশুটি কাঁদছিল। পুলিশের ধারণা, নারীর মরদেহটি শিশুর চেয়ে দ্রুত পচন ধরেছিল।
গ্রেফতারের পর শুক্রবার রোমে এক সংবাদ সম্মেলনে পুলিশ জানায়, যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল ব্যুরো অফ ইনভেস্টিগেশন (এফবিআই) অভিযুক্ত ব্যক্তির ক্রেডিট কার্ড ও সিম কার্ডের তথ্য সংগ্রহ করতে সহায়তা করেছে।
ইতালিতে অভিযুক্ত ব্যক্তির নাম প্রকাশ করা হয়নি। তবে, ইতালীয় এবং গ্রিক গণমাধ্যমে তার নাম এসেছে। অভিযুক্তের বিরুদ্ধে আনুষ্ঠানিকভাবে অভিযোগ গঠন না হওয়া পর্যন্ত তার নাম প্রকাশ করবে না সিএনএন।
পুলিশের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা এখনও নিহত মা ও মেয়ের পরিচয় নিশ্চিত করতে পারেনি। তবে, ডিএনএ পরীক্ষার মাধ্যমে গ্রেফতার হওয়া ব্যক্তির সঙ্গে তাদের কোনো সম্পর্ক আছে কিনা, তা জানার চেষ্টা চলছে।
এদিকে, রোমে অবস্থিত মার্কিন দূতাবাস জানিয়েছে, গ্রেফতার হওয়া আমেরিকান নাগরিকদের কনস্যুলার সহায়তা দেওয়া হয়।
তবে, তারা নির্দিষ্ট কোনো মামলার বিষয়ে মন্তব্য করতে রাজি হয়নি। এছাড়া, অভিযুক্ত ব্যক্তির কোনো আইনজীবী আছেন কিনা, তা এখনো জানা যায়নি।
ইতালির কৌঁসুলি অফিস জানিয়েছে, তারা গ্রিস থেকে ওই ব্যক্তিকে ফিরিয়ে আনার চেষ্টা করছেন।
এতে প্রায় তিন সপ্তাহ সময় লাগতে পারে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন