ইউক্রেন যুদ্ধ: শান্তি আলোচনা থেকে সরে আসছে যুক্তরাষ্ট্র?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র কি ইউক্রেন থেকে সমর্থন গুটিয়ে নিচ্ছে? এমন একটা প্রশ্ন এখন আন্তর্জাতিক মহলে আলোচনার কেন্দ্রবিন্দুতে।

ইউক্রেন এবং রাশিয়ার মধ্যে চলমান শান্তি আলোচনায় অগ্রগতি না হওয়ায়, ডোনাল্ড ট্রাম্পের নেতৃত্বাধীন মার্কিন প্রশাসন ক্রমশ ধৈর্য হারাচ্ছে।

সম্প্রতি প্যারিসে ইউরোপীয় ও ইউক্রেনীয় কর্মকর্তাদের সঙ্গে বৈঠকের পর মার্কিন পররাষ্ট্রমন্ত্রী মার্কো রুবিও সাংবাদিকদের বলেন, “যদি ইউক্রেন যুদ্ধ শেষ করা সম্ভব না হয়, তবে আমাদের অন্য কিছু ভাবতে হবে।”

ডোনাল্ড ট্রাম্প, যিনি একসময় মনে করতেন দ্রুত এই যুদ্ধের অবসান ঘটানো সম্ভব, শান্তি প্রক্রিয়ার অগ্রগতি না হওয়ায় হতাশ।

রুবিও আরও বলেন, “প্রেসিডেন্ট এই যুদ্ধের সমাপ্তি টানতে সরকারের সর্বোচ্চ পর্যায়ে ৮৭ দিন ধরে চেষ্টা চালিয়েছেন।”

তাহলে, “অন্য কিছু ভাবা” বলতে ঠিক কী বোঝানো হচ্ছে?

সম্ভাব্য একটি বিকল্প হতে পারে ইউক্রেনকে সামরিক সহায়তা আরও বাড়ানো।

যদিও ট্রাম্প ক্রেমলিনকে (Kremlin) প্রভাবিত করার চেষ্টা করেছেন, তবুও রাশিয়ার অনড় মনোভাব শান্তির পথে প্রধান বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে।

যেমন, ট্রাম্পের প্রস্তাবিত ৩০ দিনের যুদ্ধবিরতিতেও মস্কোর অসহযোগিতা দেখা গেছে, যেখানে ইউক্রেন একাই রাজি হয়েছিল।

তবে, ইউক্রেনকে আরও কয়েক বিলিয়ন ডলারের অস্ত্র সরবরাহ করা ট্রাম্পের কিছু সমর্থকের মধ্যে হয়তো ভালো নাও লাগতে পারে।

কিন্তু ইউক্রেন যদি যুদ্ধক্ষেত্রে প্রতিরোধের পরিমাণ বাড়াতে পারে, সেক্ষেত্রে ক্রেমলিন তাদের আলোচনায় বসার অবস্থান পুনর্বিবেচনা করতে পারে।

রাশিয়ার তেল ও গ্যাসের ওপর এবং যারা সেগুলো কিনছে তাদের ওপর কঠোর নিষেধাজ্ঞা আরোপের মাধ্যমে মস্কোর উপর চাপ বাড়ানোর কথাও বিবেচনা করা হচ্ছে।

অন্যদিকে, ট্রাম্প ও ক্রেমলিন মনে করে ইউক্রেনে শান্তি প্রতিষ্ঠা করাটা আসলে যুক্তরাষ্ট্র-রাশিয়ার মধ্যে বৃহত্তর সম্পর্ক পুনর্গঠনের একটি অংশ, যেখানে জ্বালানি চুক্তি, মহাকাশ গবেষণা এবং খনিজ উত্তোলনের মতো বিষয়গুলো জড়িত।

ট্রাম্প হয়তো সেই সম্পর্ক নষ্ট করতে চাইছেন না।

প্যারিসে রুবিও সম্ভবত দ্বিতীয় একটি বিকল্পের ইঙ্গিত দিয়েছেন, যা বেশি বাস্তবসম্মত।

তিনি জোর দিয়ে বলেন, “এটা আমাদের যুদ্ধ নয়।

আমরা এর সূত্রপাত করিনি।

যুক্তরাষ্ট্র গত তিন বছর ধরে ইউক্রেনকে সাহায্য করছে এবং আমরা চাই যুদ্ধটা শেষ হোক, কিন্তু এটা আমাদের যুদ্ধ নয়।

এর মাধ্যমে সম্ভবত বোঝানো হচ্ছে, যুক্তরাষ্ট্র হয়তো একাই ইউক্রেন ও তার ইউরোপীয় মিত্রদের রাশিয়ার বিরুদ্ধে লড়াই করতে ছেড়ে দিতে পারে।

এমনটা হলে ইউক্রেনের সীমিত সম্পদ এবং ইউরোপের অপর্যাপ্ত সামরিক সরঞ্জামের কারণে পরিস্থিতি আরও কঠিন হয়ে পড়বে।

ক্রেমলিনের জন্য, যুক্তরাষ্ট্রের এই ধরনের পদক্ষেপ একটি দ্বিমুখী তলোয়ারের মতো হবে।

অন্যদিকে এটি ইউক্রেনে তাদের সেনাদের আরও সুবিধা দেবে, কিন্তু ভ্লাদিমির পুতিন (Vladimir Putin) যেমনটা চাইছেন, সেই বিজয় এতে নাও আসতে পারে।

বরং, এর ফলে যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হবে।

রাশিয়ান সৈন্যরা, যারা ইতোমধ্যে ব্যাপক হারে হতাহত হচ্ছে, তাদের ইউক্রেনীয় যুদ্ধক্ষেত্রে ‘মাংসের কল’-এ পাঠানো হতে পারে, যা দেশের অভ্যন্তরে ক্রেমলিনের উপর সামাজিক চাপ আরও বাড়িয়ে দেবে।

যুদ্ধের কারণে দুর্বল হয়ে পড়া রাশিয়ার অর্থনীতিতেও এর বিরূপ প্রভাব পড়বে।

শান্তি চুক্তি না হলে, রাশিয়ার উপর আরোপিত আন্তর্জাতিক নিষেধাজ্ঞাগুলো শিথিল হওয়ার সম্ভাবনাও কম।

তবে, ট্রাম্প প্রশাসন এখনো হাল ছাড়েনি বলেই জানা যাচ্ছে।

ভাইস প্রেসিডেন্ট জে ডি ভেন্স (JD Vance) বলেছেন, হোয়াইট হাউস এখনো যুদ্ধ শেষ করতে ‘আশাবাদী’।

তবে, রুবিও’র মন্তব্য এবং অন্যান্য ইঙ্গিতে মনে হচ্ছে, সেই সময় দ্রুত ফুরিয়ে আসছে।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র দ্রুত সিদ্ধান্ত নিতে চাইছে।

রুবিও ওয়াশিংটনে ফেরার আগে বলেছিলেন, “আমাদের খুব দ্রুত, আমি বলছি কয়েক দিনের মধ্যেই, সিদ্ধান্ত নিতে হবে যে এটা (শান্তি) সম্ভব কিনা।”

ক্রেমলিনও আলোচনার জন্য প্রস্তুত আছে।

তাদের মুখপাত্র জানিয়েছেন, “এই সপ্তাহে কোনো আলোচনার পরিকল্পনা নেই, তবে আলোচনা শুরু করার জন্য আমাদের মধ্যে যোগাযোগ রয়েছে।”

সবকিছু বিবেচনা করে, এখনো পর্যন্ত একটি সম্মানজনক সমাধানে আসার সামান্য সুযোগ রয়েছে।

তবে ইউক্রেন যুদ্ধ বন্ধের জন্য ওয়াশিংটনের ধৈর্য দ্রুত ফুরিয়ে আসছে বলেই মনে হচ্ছে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *