মার্কিন নৌবাহিনীর বেহাল অবস্থা! এগিয়ে আসতে পারে দক্ষিণ কোরিয়া?

মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজ নির্মাণে অচলাবস্থা: সমাধানে এগিয়ে আসছে দক্ষিণ কোরিয়া।

যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীর জাহাজ নির্মাণে দীর্ঘসূত্রিতা এবং অতিরিক্ত ব্যয়ের সমস্যা দীর্ঘদিনের। দেশটির কর্মকর্তারাও বিষয়টি স্বীকার করেছেন।

এমন পরিস্থিতিতে, দক্ষিণ কোরিয়ার দুটি শীর্ষস্থানীয় জাহাজ নির্মাণকারী প্রতিষ্ঠান – এইচডি হিউন্দাই হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ এবং হ্যানওয়া ওশান – এই সংকট সমাধানে এগিয়ে আসার প্রস্তাব দিয়েছে। তাদের মতে প্রযুক্তি এবং দক্ষতা বিনিময়ের মাধ্যমে তারা যুক্তরাষ্ট্রের নৌবাহিনীকে সহায়তা করতে প্রস্তুত।

নৌবাহিনীর জাহাজ নির্মাণে যুক্তরাষ্ট্রের সংকট।

মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজ নির্মাণ কর্মসূচিগুলো দীর্ঘদিন ধরেই সময়মতো শেষ হচ্ছে না। অনেক ক্ষেত্রে বাজেটও ছাড়িয়ে যাচ্ছে।

মার্কিন নৌ-সচিব জন ফেলান সম্প্রতি এক শুনানিতে স্বীকার করেছেন, তাদের প্রায় সব প্রোগ্রামেই সমস্যা রয়েছে। এমনকি সবচেয়ে ভালো প্রোগ্রামটিও নির্ধারিত সময়ের ছয় মাস পরে চলছে এবং অতিরিক্ত ৫৭ শতাংশ খরচ হয়েছে।

দক্ষিণ কোরিয়ার অভিজ্ঞতা।

অন্যদিকে, দক্ষিণ কোরিয়া জাহাজ নির্মাণে ঈর্ষণীয় সাফল্য অর্জন করেছে। এইচডি হিউন্দাই হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ এবং হ্যানওয়া ওশান-এর মতো প্রতিষ্ঠানগুলো সময়মতো এবং বাজেটের মধ্যে যুদ্ধজাহাজ তৈরি করে সুনাম অর্জন করেছে।

এই দুটি কোম্পানি এখন তাদের প্রযুক্তি এবং অভিজ্ঞতা যুক্তরাষ্ট্রের সঙ্গে ভাগ করে নিতে চায়। তারা ক্ষেপণাস্ত্র বিধ্বংসী জাহাজ, ফ্রিগেট এবং সাবমেরিন তৈরিতে সাহায্য করতে প্রস্তুত।

দক্ষিণ কোরিয়ার সাফল্যের কারণ।

দক্ষিণ কোরিয়ার জাহাজ নির্মাণ শিল্পের সাফল্যের পেছনে রয়েছে দক্ষ জনশক্তি এবং উন্নত লজিস্টিক ব্যবস্থা। এইচডি হিউন্দাই হেভি ইন্ডাস্ট্রিজ-এর ভাইস প্রেসিডেন্ট লি জিন জানান, তাদের কারখানায় কর্মীদের গড় অভিজ্ঞতা ১৬ বছর।

এছাড়া, তারা সামরিক এবং বাণিজ্যিক – উভয় ধরনের জাহাজ নির্মাণের অভিজ্ঞতাকে কাজে লাগায়। এর ফলে কর্মীদের দক্ষতা বজায় থাকে এবং নতুন ব্যবসার সুযোগ তৈরি হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের জন্য সুযোগ।

বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, দক্ষিণ কোরিয়ার এই অভিজ্ঞতা যুক্তরাষ্ট্রের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হতে পারে। তবে, মার্কিন আইন অনুযায়ী, দেশটির নৌবাহিনী সরাসরি বিদেশি জাহাজ কিনতে পারে না।

এছাড়া, বিদেশি কোনো দেশে জাহাজ নির্মাণেরও সুযোগ নেই।

ভবিষ্যতের সম্ভাবনা।

এই পরিস্থিতিতে, যুক্তরাষ্ট্র এবং দক্ষিণ কোরিয়ার মধ্যে সহযোগিতা কিভাবে বৃদ্ধি করা যায়, তা নিয়ে আলোচনা চলছে। ফিনল্যান্ডের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের একটি চুক্তির উদাহরণ দেওয়া যেতে পারে, যেখানে ফিনিশ শিপইয়ার্ডে চারটি মার্কিন কোস্ট গার্ডের বরফ-ভাঙা জাহাজ নির্মাণের পরিকল্পনা করা হয়েছে।

এই ধরনের মডেল অনুসরণ করে, দক্ষিণ কোরিয়ায় মার্কিন নৌবাহিনীর জাহাজ নির্মাণের সম্ভাবনাও দেখা যেতে পারে।

হ্যানওয়া ওশানের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, তারা ফিলাডেলফিয়াতে অবস্থিত “ফিলি শিপইয়ার্ড”-এ প্রায় ৫ বিলিয়ন ডলার (প্রায় ৫৫ হাজার কোটি টাকা) বিনিয়োগ করেছে, যা বাণিজ্যিক এবং সামরিক উভয় ধরনের জাহাজ নির্মাণের জন্য সহায়ক হবে।

দক্ষিণ কোরিয়ার জাহাজ নির্মাণ প্রতিষ্ঠানগুলো চায়, তাদের তৈরি করা যুদ্ধজাহাজগুলো যেন যুক্তরাষ্ট্রের নৌবহরে যুক্ত হয়।

এক্ষেত্রে, দুই দেশের মধ্যে বিদ্যমান আইন ও বিধি-নিষেধ পরিবর্তন করতে হবে।

জাহাজ নির্মাণে বাংলাদেশের জন্য শিক্ষা।

যুক্তরাষ্ট্র ও দক্ষিণ কোরিয়ার এই অভিজ্ঞতা থেকে বাংলাদেশেরও অনেক কিছু শেখার আছে। বাংলাদেশের নৌবাহিনীকে শক্তিশালী করতে হলে, আধুনিক প্রযুক্তির ব্যবহার এবং দক্ষ জনশক্তির উন্নয়ন অপরিহার্য।

দক্ষ ব্যবস্থাপনার মাধ্যমে সময়মতো এবং সাশ্রয়ী মূল্যে জাহাজ নির্মাণ করা সম্ভব।

তথ্যসূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *