যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী অভিবাসী ও ভিসাধারীদের সংখ্যা নিয়ে সামাজিক মাধ্যমে ভুল তথ্যের ছড়াছড়ি চলছে। সম্প্রতি, দেশটির প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন প্রায় ৫৫ মিলিয়ন মানুষের ভিসা যাচাই করার ঘোষণা দেওয়ার পর, সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে অনেকে এই সংখ্যাটিকে অতিরঞ্জিত করে প্রচার করতে শুরু করেছে।
তাদের দাবি, এই ৫৫ মিলিয়ন ভিসা হোল্ডার এবং আরও প্রায় ২৫ মিলিয়ন অবৈধভাবে বসবাসকারী মানুষকে যোগ করলে, যুক্তরাষ্ট্রের জনসংখ্যার প্রায় এক-চতুর্থাংশ থেকে এক-তৃতীয়াংশই নাকি বিদেশি নাগরিক।
প্রকৃতপক্ষে, সরকারি তথ্য এই দাবির সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ নয়। সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ২০২৩ সাল পর্যন্ত যুক্তরাষ্ট্রে বসবাসকারী বিদেশি নাগরিকের সংখ্যা ছিল প্রায় ২ কোটি ২০ লাখ।
এই সংখ্যাটিতে বৈধ এবং অবৈধ উভয়ভাবে বসবাসকারীরা অন্তর্ভুক্ত।
সোশ্যাল মিডিয়ায় যে ৫৫ মিলিয়নের হিসাব দেওয়া হচ্ছে, সেটি মূলত বিভিন্ন ধরনের ভিসাধারীর সংখ্যা। এর মধ্যে পর্যটন ভিসাও অন্তর্ভুক্ত, যা অনেক ক্ষেত্রে দীর্ঘ সময়ের জন্য দেওয়া হয়।
উদাহরণস্বরূপ, স্টেট ডিপার্টমেন্ট (State Department) গত বছর প্রায় ৬৫ লক্ষ পর্যটন ভিসা ইস্যু করেছে। তবে, ভিসাধারী সবাই যে যুক্তরাষ্ট্রে স্থায়ীভাবে বসবাস করেন, তা নয়।
অন্যদিকে, অবৈধভাবে বসবাসকারীর সংখ্যা নিয়েও বিভ্রান্তি ছড়ানো হচ্ছে। সাম্প্রতিক এক গবেষণা অনুসারে, যুক্তরাষ্ট্রে অবৈধভাবে বসবাস করছেন এমন মানুষের সংখ্যা প্রায় ১ কোটি ৪০ লাখ।
বিভিন্ন গবেষণা সংস্থা এই সংখ্যা নিয়ে ভিন্নমত পোষণ করলেও, এটি সোশ্যাল মিডিয়ার প্রচারিত তথ্যের থেকে অনেক কম। যেমন, সেন্টার ফর ইমিগ্রেশন স্টাডিজের হিসাব অনুযায়ী, এই সংখ্যা ১ কোটি ৪২ লাখ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভিসা এবং অভিবাসন সংক্রান্ত তথ্য নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়ানোর মূল কারণ হল, মানুষ সঠিক পরিসংখ্যান সম্পর্কে অবগত নয়। উদাহরণস্বরূপ, যারা বিভিন্ন মেয়াদে যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণ করেন, তাদের অনেকের ভিসার মেয়াদ কয়েক বছর পর্যন্ত থাকে, কিন্তু তারা সবাই যুক্তরাষ্ট্রের স্থায়ী বাসিন্দা নন।
যুক্তরাষ্ট্রের স্বরাষ্ট্র নিরাপত্তা বিভাগ (Department of Homeland Security) এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৪ সালে প্রায় ৩৬ লক্ষ মানুষ স্বল্পমেয়াদী ভিসায় (যেমন: কূটনীতিক, শিক্ষার্থী, অথবা অস্থায়ী কর্মী) যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করছিলেন।
এদের মধ্যে পর্যটন ভিসাধারীদের হিসাব ধরা হয়নি। এছাড়াও, ১ কোটি ২৮ লক্ষ মানুষের গ্রিন কার্ড রয়েছে।
সুতরাং, সোশ্যাল মিডিয়ায় প্রচারিত তথ্যের ভিত্তিতে, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন পরিস্থিতি সম্পর্কে ভুল ধারণা তৈরি হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। সঠিক তথ্য জানা থাকলে, এই ধরনের বিভ্রান্তি এড়ানো যেতে পারে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস (Associated Press)