মার্কিন পরমাণু পরীক্ষা: একটি জাতির জন্য চিরকালীন ক্ষত!

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা একটি জাতির জন্য কেমন ভয়ঙ্কর পরিণতি ডেকে আনতে পারে, তার জ্বলন্ত উদাহরণ হলো প্রশান্ত মহাসাগরের দ্বীপরাষ্ট্র, মার্শাল আইল্যান্ডস। দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর, যুক্তরাষ্ট্র যখন পারমাণবিক অস্ত্রের ভাণ্ডার তৈরি করছিল, তখন তারা এই দ্বীপপুঞ্জে ১৯৬৭ থেকে ১৯৫৮ সালের মধ্যে ৬৭টি বোমা ফাটিয়েছিল।

এর ফলস্বরূপ সেখানকার মানুষ আজও ভয়াবহ স্বাস্থ্য ও পরিবেশগত ঝুঁকির সম্মুখীন। এই বোমাগুলোর বিস্ফোরণের ক্ষমতা ছিল হিরোশিমায় ফেলা বোমার সমান, যা প্রতিদিন ঘটলে ২০ বছর পর্যন্ত চলতো।

এর ফলে বিকিরণের প্রভাব মারাত্মক আকার ধারণ করে। শুধু তাই নয়, এর তেজস্ক্রিয়তা দ্বীপের বাসিন্দাদের মধ্যে ক্যান্সারের অন্যতম প্রধান কারণ হয়ে দাঁড়িয়েছে।

কিছু দ্বীপে ক্যান্সারের জন্য দায়ী ছিল প্রায় ৫৫ শতাংশ। এই পরীক্ষার ফলে বিশ্বজুড়ে অতিরিক্ত ১ লক্ষ মানুষের ক্যান্সার হয়ে মৃত্যু হয়েছে বলে জানা যায়। এমনকি শ্রীলঙ্কা ও মেক্সিকোর মতো দূরবর্তী স্থানেও এর তেজস্ক্রিয়তা ছড়িয়ে পড়েছিল।

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষার ফলে সেখানকার মানুষের জীবনযাত্রা সম্পূর্ণভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়েছিল। সেখানকার অধিবাসীদের সংস্কৃতি, ঐতিহ্য, এবং জীবন ধারণের পদ্ধতি—সবকিছুই এই পরীক্ষার কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

উদাহরণস্বরূপ, তাদের সমুদ্রপথে দিক নির্ণয়ের প্রাচীন দক্ষতা—যা বাণিজ্য, খাদ্য সংগ্রহ এবং সম্পর্কের জন্য অপরিহার্য ছিল—তাও বিলুপ্তির পথে।

মার্শাল দ্বীপপুঞ্জের একটি অংশ, রুনিত দ্বীপ। এখানে ‘ডোম’ নামে পরিচিত একটি বিশাল কংক্রিটের কাঠামো তৈরি করা হয়েছে, যার নিচে প্রায় ৮৫,০০০ ঘনমিটার তেজস্ক্রিয় বর্জ্য জমা করে রাখা হয়েছে।

বিজ্ঞানীরা মনে করেন, এই দ্বীপটি সম্ভবত বিশ্বের সবচেয়ে তেজস্ক্রিয় স্থানগুলোর মধ্যে অন্যতম। জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে সমুদ্রের উচ্চতা বৃদ্ধি পাওয়ায় এই ডোমটির কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে, যা সেখানকার মানুষের জন্য নতুন উদ্বেগের কারণ।

শুধু মার্শাল দ্বীপপুঞ্জই নয়, যুক্তরাষ্ট্রের নেভাদা পরীক্ষাস্থলেও ব্যাপক পারমাণবিক পরীক্ষা চালানো হয়েছিল। ১৯৫১ থেকে ১৯৬২ সালের মধ্যে এখানে ১০০টির বেশি বায়ুমণ্ডলীয় পরীক্ষা এবং ৮২৮টি ভূগর্ভস্থ পরীক্ষা চালানো হয়।

যদিও ভূগর্ভস্থ পরীক্ষা তুলনামূলকভাবে নিরাপদ, তবুও এর মধ্যে ৩২টি পরীক্ষায় তেজস্ক্রিয়তা বায়ুমণ্ডলে ছড়িয়ে পড়েছিল।

বর্তমানে, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প পুনরায় পারমাণবিক পরীক্ষা চালানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন, যা বিশ্বজুড়ে নতুন করে উদ্বেগ সৃষ্টি করেছে। বিশেষজ্ঞদের মতে, পারমাণবিক অস্ত্রের পরীক্ষা মানবতার জন্য ধ্বংসাত্মক পরিণতি ডেকে আনতে পারে।

মার্শাল দ্বীপপুঞ্জে পারমাণবিক পরীক্ষার ক্ষত এখনো গভীর। এখানকার প্লুটোনিয়াম-২৩৯-এর তেজস্ক্রিয়তা প্রায় ২৪,১১০ বছর পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে।

তথ্য সূত্র: সিএনএন

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *