মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র অলিম্পিক ও প্যারালিম্পিক কমিটি (ইউএসওপিসি) সম্প্রতি এক নতুন নীতি ঘোষণা করেছে, যেখানে ট্রান্সজেন্ডার নারীদের নারী ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণে কার্যত বাধা দেওয়া হয়েছে। এই সিদ্ধান্তের ফলে আন্তর্জাতিক ক্রীড়াঙ্গনে, বিশেষ করে নারী ক্রীড়াবিদদের অধিকার ও অংশগ্রহণের বিষয়টি নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।
খবর অনুযায়ী, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের একটি নির্বাহী আদেশকে অনুসরণ করে এই পদক্ষেপ নেওয়া হয়েছে, যেখানে ট্রান্সজেন্ডার অ্যাথলেটদের নারী ইভেন্টে অংশগ্রহণের অনুমতি দিলে তহবিল প্রত্যাহারের হুমকি দেওয়া হয়েছিল।
ইউএসওপিসি’র এই সিদ্ধান্তের পর বিভিন্ন ক্রীড়া ফেডারেশনগুলোকে তাদের নীতিমালায় পরিবর্তন আনার নির্দেশ দেওয়া হয়েছে। এর কারণ হিসেবে বলা হয়েছে, নারীদের জন্য একটি সুষ্ঠু ও নিরাপদ প্রতিযোগিতার পরিবেশ নিশ্চিত করা জরুরি।
এই পরিবর্তনের ফলে সাঁতার, অ্যাথলেটিক্স এবং অন্যান্য খেলার জাতীয় সংস্থাগুলো তাদের বিদ্যমান নীতি পর্যালোচনা করতে বাধ্য হবে। উদাহরণস্বরূপ, মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সাঁতার ফেডারেশন (ইউএসএ সুইমিং) জানিয়েছে যে তারা ইউএসওপিসি’র পরিবর্তনের বিষয়ে অবগত এবং কিভাবে তাদের নিয়মাবলী পরিবর্তন করা যায়, সে বিষয়ে তারা আলোচনা করছে।
এই পদক্ষেপের কড়া সমালোচনা করেছে ন্যাশনাল উইমেন’স ল সেন্টার। তারা মনে করে, ইউএসওপিসি রাজনৈতিক চাপের কাছে নতি স্বীকার করে তাদের অ্যাথলেটদের প্রয়োজন ও নিরাপত্তা বিসর্জন দিচ্ছে।
এই সিদ্ধান্তের ফলে স্থানীয় ক্লাব পর্যায় থেকে শুরু করে আন্তর্জাতিক মানের খেলা পর্যন্ত নিয়ম-কানুন পরিবর্তনের সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে।
ট্রান্সজেন্ডার নারী ক্রীড়াবিদদের নিয়ে বিতর্কটি যুক্তরাষ্ট্র সহ বিশ্বের বিভিন্ন দেশে বেশ কয়েক বছর ধরেই চলছে। অনেকে এই বিষয়টিকে খেলার মাঠে ‘ন্যায্যতা’ প্রতিষ্ঠার লড়াই হিসেবে দেখছেন।
এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি রাজ্য ট্রান্সজেন্ডার নারী ও মেয়েদের নির্দিষ্ট কিছু ক্রীড়া প্রতিযোগিতায় অংশগ্রহণে বাধা দিয়ে আইন তৈরি করেছে। তবে এই ধরনের নীতির বিরুদ্ধে বৈষম্যমূলক আচরণের অভিযোগ তুলে আদালতের দ্বারস্থ হয়েছেন অনেকে।
আন্তর্জাতিক অলিম্পিক কমিটি (আইওসি)-ও নারী ক্রীড়াবিদদের অংশগ্রহণের বিষয়টি গুরুত্বের সঙ্গে বিবেচনা করছে। আইওসি’র নতুন প্রেসিডেন্ট সম্প্রতি নারী ক্রীড়াবিদদের সুরক্ষা দেওয়ার ওপর জোর দিয়েছেন এবং প্রতিটি খেলার ফেডারেশনকে তাদের নিজস্ব নিয়ম তৈরি করার স্বাধীনতা দিয়েছেন।
সাঁতার, সাইক্লিং এবং ট্র্যাক অ্যান্ড ফিল্ডের মতো খেলাধুলায় ইতোমধ্যে এমন কিছু নিয়ম চালু করা হয়েছে, যেখানে পুরুষদের বয়ঃসন্ধিকাল অতিক্রম করা কোনো ক্রীড়াবিদকে নারী ইভেন্টে অংশগ্রহণের অনুমতি দেওয়া হচ্ছে না।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এই ধরনের নীতি পরিবর্তনের ফলে খেলাধুলায় ট্রান্সজেন্ডার অ্যাথলেটদের অংশগ্রহণ আরও কঠিন হয়ে পড়বে। তবে, এই বিতর্কের মূল বিষয় হলো, খেলাধুলায় সবার জন্য একটি ন্যায্য এবং অন্তর্ভুক্তিমূলক পরিবেশ তৈরি করা।
ভবিষ্যতে এই নীতিমালাগুলো কিভাবে পরিবর্তিত হয় এবং এর প্রভাব কেমন হয়, সেদিকেই এখন সকলের দৃষ্টি।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।