যুক্তরাষ্ট্রের কিছু বিশিষ্ট সমাজসেবী ডোনাল্ড ট্রাম্পের সম্ভাব্য নীতির কারণে তাঁদের উদ্বেগের কথা জানিয়েছেন। তাঁদের আশঙ্কা, ট্রাম্পের ক্ষমতা ফিরে আসার ফলে দেশে জনকল্যাণমূলক কাজ এবং বিভিন্ন দাতব্য সংস্থার স্বাধীনতা হুমকির মুখে পড়তে পারে। তাঁরা মনে করেন, এই পরিস্থিতিতে ঝুঁকি না নিয়ে প্রতিবাদ জানানো জরুরি।
খবর অনুযায়ী, তাঁরা তাঁদের কার্যক্রম চালিয়ে যেতে দৃঢ়প্রতিজ্ঞ।
জন ডি. অ্যান্ড ক্যাথরিন টি. ম্যাকআর্থার ফাউন্ডেশনের প্রেসিডেন্ট জন পালফ্রে’র মতে, এখন সময় এসেছে ঐক্যবদ্ধ হয়ে কাজ করার এবং গুরুত্বপূর্ণ নীতিগুলোর সমর্থনে একসঙ্গে দাঁড়ানোর। তিনি মনে করেন, এর মাধ্যমে আমেরিকার প্রতিটি সম্প্রদায়ের সেবা করা সম্ভব হবে এবং দেশের ভবিষ্যৎ আরও সুদৃঢ় হবে।
বিভিন্ন সূত্রে জানা যায়, ট্রাম্পের প্রত্যাবর্তনের পর থেকেই এমন কিছু পদক্ষেপ দেখা যাচ্ছে, যা কর্তৃত্ববাদী শাসনের ইঙ্গিত দেয়। এর ফলে আইন বিষয়ক সংস্থা, প্রযুক্তি প্রতিষ্ঠান, মিডিয়া এবং শিক্ষা প্রতিষ্ঠানগুলো চাপে পড়েছে। অনেকে ইতিমধ্যে নতি স্বীকার করেছে।
এমন পরিস্থিতিতে জনকল্যাণমূলক সংস্থাগুলোর স্বাধীনতা রক্ষার জন্য এগিয়ে আসার আহ্বান জানানো হয়েছে।
ম্যাকআর্থার ফাউন্ডেশন ১৯৭৮ সাল থেকে সামাজিক ন্যায়বিচার, জলবায়ু পরিবর্তন, অপরাধ বিষয়ক বিচার সংস্কার, গণমাধ্যম, কমিউনিটি ডেভলপমেন্ট এবং আন্তর্জাতিক শান্তি ও নিরাপত্তা বিষয়ক বিভিন্ন খাতে অর্থ সহায়তা দিয়ে আসছে। এই সংস্থার বর্তমান সম্পদের পরিমাণ প্রায় ৭ বিলিয়ন মার্কিন ডলার।
পালফ্রে’র সঙ্গে আরও কয়েকজন সমাজসেবী একটি যৌথ নিবন্ধ প্রকাশ করেছেন, যেখানে দাতব্য সংস্থাগুলোর স্বাধীনতা রক্ষার ওপর গুরুত্ব দেওয়া হয়েছে। তাঁদের মতে, অতীতের বিভিন্ন সময়ে এমন ঘটনা ঘটেছে, যেখানে স্বচ্ছতার নামে ভীতি প্রদর্শনের চেষ্টা হয়েছে।
শিকাগোতে ম্যাকআর্থার ফাউন্ডেশনের সদর দফতর থেকে জুমের মাধ্যমে কথা বলার সময় পালফ্রে তাঁর উদ্বেগের কথা জানান। তিনি মনে করেন, কথা বলার স্বাধীনতা, সাহায্য করার স্বাধীনতা এবং বিনিয়োগের স্বাধীনতা—এগুলো একটি জনকল্যাণমূলক সংস্থার জন্য অপরিহার্য।
তাঁর মতে, আমেরিকার ইতিহাসে এমন অনেক সময় এসেছে, যখন দেশের মানুষ রাজার শাসন চায়নি। বরং আইনের শাসন চেয়েছিল। সংবিধানে মতপ্রকাশের স্বাধীনতাকে সবার উপরে স্থান দেওয়া হয়েছে।
পালফ্রে আশঙ্কা প্রকাশ করে বলেন, পরিস্থিতি যদি হাঙ্গেরির মতো হয়, তাহলে আমেরিকার বিভিন্ন সম্প্রদায়ের জন্য তা ভালো হবে না। তিনি আরও বলেন, সমাজের কণ্ঠরোধ করা উচিত নয়। বরং সকলের স্বাধীনভাবে কথা বলার অধিকার থাকা উচিত।
অন্যদিকে, ট্রাম্পের মিত্র হিসেবে পরিচিত বিশ্বের শীর্ষ ধনী ইলন মাস্ক, ইউএসএআইডি (USAID) নামক উন্নয়ন সংস্থার তহবিল কমিয়ে দরিদ্র দেশগুলোতে খাদ্য ও চিকিৎসা সহায়তা বন্ধ করে দিয়েছেন।
পালফ্রে মনে করেন, তাঁদের সংস্থা মূলত যুক্তরাষ্ট্রেই অর্থ দেয়, তবে বাইরের কিছু দেশেও তাদের কার্যক্রম রয়েছে। তাই, বাইরের দেশগুলো যুক্তরাষ্ট্রের কাছ থেকে সাহায্য পাওয়ার বিষয়ে কতটুকু নিশ্চিত হতে পারবে, তা এখন একটি গুরুত্বপূর্ণ প্রশ্ন।
ম্যাকআর্থার ফাউন্ডেশন ২০২৫ ও ২০২৬ সালে তাদের অনুদান ২০ শতাংশের বেশি বৃদ্ধি করার সিদ্ধান্ত নিয়েছে। পালফ্রের মতে, বেসরকারি পর্যায়ে সাহায্য-সহযোগিতা বাড়ানো দরকার।
কারণ, বর্তমানে সরকারি বিভিন্ন খাতে যে পরিমাণ অর্থ হ্রাস করা হচ্ছে, তা পূরণ করার জন্য আরও বেশি কাজ করা প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান