যুক্তরাষ্ট্রে প্রথম ‘শান্ত পথ’ (Shanto Poth) -এর স্বীকৃতি: শব্দদূষণের বিরুদ্ধে এক নতুন দিগন্ত।
প্রকৃতির নীরবতা, যা আজকাল যেন সোনার হরিণ, তা উপভোগ করার সুযোগ খুব কম মানুষেরই হয়। কোলাহলপূর্ণ শহরে তো বটেই, এমনকি নির্জন স্থানে গেলেও মানুষের তৈরি শব্দ – উড়োজাহাজের আওয়াজ অথবা গাড়ির একটানা ভোঁ – কানে আসতেই থাকে।
শব্দদূষণের এই ক্রমবর্ধমান সমস্যা মোকাবিলায় ‘কুইয়েট পার্কস ইন্টারন্যাশনাল’ নামের একটি সংস্থা এগিয়ে এসেছে, যারা বিশ্বের সবচেয়ে শান্ত স্থানগুলো খুঁজে বের করে সেগুলোকে চিহ্নিত করছে।
সম্প্রতি, যুক্তরাষ্ট্রের নেব্রাস্কা অঙ্গরাজ্যের নিওব্রারা ন্যাশনাল সিনিক রিভার (Niobrara National Scenic River)-কে ‘কুইয়েট ট্রেইল’ (শান্ত পথ)-এর স্বীকৃতি দেওয়া হয়েছে। এটি যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম স্থান, যা এই বিরল সম্মাননা অর্জন করেছে।
নদীটি তার শান্ত পরিবেশ এবং জীববৈচিত্র্যের জন্য বিখ্যাত।
কেন এই নদীর বিশেষত্ব?
নিওব্রারা নদীটি প্রায় ৭৬ মাইল (১২২ কিলোমিটার) জুড়ে বিস্তৃত। এখানে ছয়টি ভিন্ন বাস্তুসংস্থান (ecosystems)-এর মিলন ঘটেছে, যা প্রায় ১৬০ প্রজাতির উদ্ভিদ ও প্রাণীর আবাসস্থল।
ক্যানোইং (canoeing) বা টিউবে চড়ে শান্ত সকালে নদীর জলে ভেসে বেড়ানো—এখানে প্রকৃতির নীরবতা উপভোগ করার অসংখ্য উপায় রয়েছে। ‘কুইয়েট পার্কস ইন্টারন্যাশনাল’-এর পরীক্ষায় নদীর পরিবেশ, আবহাওয়া এবং বন্যজীবনকে বিশেষভাবে বিবেচনা করা হয়েছে।
তাদের মূল্যায়নের অংশ হিসেবে, শব্দ বিষয়ক ডেটা সংগ্রহ করা হয়েছে এবং বিশেষজ্ঞদের একটি দল নিশ্চিত করেছে যে পরীক্ষার সময় প্রাকৃতিক নীরবতা বজায় ছিল।
নিওব্রারা নদীর ভূ-প্রকৃতি, বিশেষ আবহাওয়া এবং অসাধারণ বন্যজীবন একটি ইতিবাচক ফলাফলের জন্য সহায়ক হয়েছে।
শব্দদূষণ থেকে মুক্তির গুরুত্ব।
বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৯৭ শতাংশ মানুষ শব্দদূষণের শিকার। ব্যস্ত শহরগুলোতে তো বটেই, এমনকি গ্রামাঞ্চলেও যানবাহনের আওয়াজ আর কলকারখানার শব্দে শান্তির লেশমাত্র নেই।
নিওব্রারা ন্যাশনাল সিনিক রিভারের মতো জায়গাগুলো, যেখানে প্রকৃতির আসল শব্দ শোনা যায়, দিন দিন দুর্লভ হয়ে উঠছে।
প্রকৃতির নীরবতা উপভোগ করার সুযোগ পাওয়া আজকাল কঠিন হয়ে দাঁড়িয়েছে। আমরা আনন্দিত যে নিওব্রারাতে এই সুযোগটি বিদ্যমান।
আন্তর্জাতিক উদাহরণ।
যুক্তরাষ্ট্রে নিওব্রারা প্রথম ‘শান্ত পথ’ হলেও, এর আন্তর্জাতিক উদাহরণও রয়েছে। তাইওয়ানের কুইফেং লেক সার্কুলার ট্রেইল এবং স্পেনের মন্তানাস ভ্যাসিয়াস বাইক প্যাকিং ট্রেইলও এই স্বীকৃতি পেয়েছে।
ফিনল্যান্ডের কভার্কেন দ্বীপপুঞ্জের ফিনহামেন এবং হাওয়াইয়ের হালেআকালা ন্যাশনাল পার্কে বর্তমানে এই ধরনের মূল্যায়ন চলছে।
বাংলাদেশের জন্য শিক্ষা।
আমাদের দেশেও নদীমাতৃক বাংলার অনেক জায়গা রয়েছে, যেখানে প্রকৃতির নীরবতা এখনো বিদ্যমান। সুন্দরবনের মতো বিশাল বনভূমি আমাদের গর্ব, যেখানে এখনো অনেক বন্যপ্রাণীর আবাস রয়েছে।
শব্দদূষণ থেকে আমাদের পরিবেশকে বাঁচাতে এবং প্রকৃতির নীরবতা রক্ষার জন্য আমাদের সচেতন হতে হবে।
নিওব্রারা নদীর এই স্বীকৃতি আমাদের জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ উদাহরণ, যা থেকে আমরা শিখতে পারি কীভাবে প্রকৃতির শান্ত রূপকে বাঁচিয়ে রাখা যায়।
তথ্য সূত্র: ট্রাভেল অ্যান্ড লিজার