মার্কিন শুল্ক: প্রতিশোধের আগুনে কি জ্বলবে বিশ্ব?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র সম্প্রতি বেশ কয়েকটি দেশের উপর ‘পাল্টা শুল্ক’ আরোপ করেছে, যার জেরে বিশ্বজুড়ে বাণিজ্য নিয়ে উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। এই পদক্ষেপের মূল লক্ষ্য হলো বাণিজ্য ঘাটতি কমানো, কিন্তু বিশ্লেষকরা বলছেন, এর ফল উল্টো হতে পারে।

এই শুল্ক নীতি বিশ্ব অর্থনীতিকে মন্দার দিকে ঠেলে দিতে পারে, যা বাংলাদেশের জন্য উদ্বেগের কারণ হতে পারে।

গত ২ এপ্রিল, যুক্তরাষ্ট্র চীন সহ কাতার, সৌদি আরব, জর্ডান এবং ইরাকের মতো দেশগুলোর উপর এই শুল্ক আরোপ করে।

চীনের উপর ৩৪ শতাংশ এবং অন্যান্য আরব দেশগুলোর উপর ১০ থেকে ৩৯ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক বসানো হয়েছে। এই পদক্ষেপের ফলে আন্তর্জাতিক বাণিজ্যে বিদ্যমান নিয়ম-কানুন লঙ্ঘিত হচ্ছে এবং বিশ্ব বাণিজ্য সংস্থা (World Trade Organization – ডব্লিউটিও)-এর নীতিকে দুর্বল করে দিচ্ছে।

ডব্লিউটিওর প্রাথমিক হিসাব অনুযায়ী, যুক্তরাষ্ট্রের এই শুল্ক নীতির কারণে সম্ভবত ২০২৩ সালে বিশ্বজুড়ে পণ্য বাণিজ্যে প্রায় ১ শতাংশ পর্যন্ত হ্রাস হতে পারে। বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, এর ফলে বিশ্বব্যাপী শিল্প এবং সরবরাহ শৃঙ্খলে অস্থিরতা দেখা দেবে।

এমন পরিস্থিতিতে বিশ্ব অর্থনীতির ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়তে পারে এবং একটি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক সংকট সৃষ্টি হওয়ারও সম্ভাবনা রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে বিভিন্ন দেশ প্রতিক্রিয়া জানানো শুরু করেছে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং কানাডার মতো দেশগুলোও পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার কথা ঘোষণা করেছে।

বিশ্লেষকরা বলছেন, যদি অন্যান্য দেশগুলোও একই ধরনের পদক্ষেপ নেয়, তাহলে যুক্তরাষ্ট্রে পণ্যের দাম ২.১ শতাংশ পর্যন্ত বাড়তে পারে এবং দেশটির মোট দেশজ উৎপাদন (Gross Domestic Product – জিডিপি) ১ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে।

বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্রে ভোক্তাদের মধ্যে আস্থা কমছে এবং এই শুল্কের কারণে পরিবারের সদস্যদের জিনিসপত্রের জন্য আরও বেশি অর্থ খরচ করতে হবে।

এর ফলে মার্কিন ব্যবসাগুলোর প্রতিযোগিতার ক্ষমতা হ্রাস পাবে এবং দেশটির অর্থনীতি সম্ভবত মন্দার দিকে যাবে।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাণিজ্য যুদ্ধ কারও জন্যই লাভজনক নয়।

এই ধরনের সংরক্ষণবাদী নীতি কোনো সমাধান দিতে পারে না। চীন এই পদক্ষেপের তীব্র বিরোধিতা করে বাণিজ্য বিরোধ আলোচনার মাধ্যমে সমাধান করার আহ্বান জানিয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের জন্য কিছু ঝুঁকি তৈরি হতে পারে।

কারণ, বিশ্ব বাণিজ্যে অস্থিরতা দেখা দিলে, বাংলাদেশের রপ্তানি বাণিজ্যেও তার প্রভাব পড়তে পারে। এছাড়া, আমদানি করা পণ্যের দাম বাড়লে, তা দেশের বাজারেও প্রভাব ফেলবে।

তাই, বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের এই পরিস্থিতি বিবেচনা করে প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নিতে হবে।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *