যুক্তরাষ্ট্র মেক্সিকোর কাছে পানির বিশেষ সরবরাহ চেয়ে করা একটি অনুরোধ প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশটির অভিযোগ, দুই দেশের মধ্যে হওয়া একটি চুক্তি অনুযায়ী মেক্সিকো তাদের পানির হিস্যা দিতে ব্যর্থ হয়েছে।
এই ঘটনার মাধ্যমে ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন নতুন একটি বিতর্কের জন্ম দিয়েছে।
মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর বৃহস্পতিবার এক বিবৃতিতে জানায়, এই প্রথম যুক্তরাষ্ট্র মেক্সিকোর পানির বিশেষ চাহিদা প্রত্যাখ্যান করল।
এই পানি সরবরাহ করা হলে তা মেক্সিকোর সীমান্তবর্তী শহর টিজুয়ানাতে যাওয়ার কথা ছিল। পররাষ্ট্র দপ্তরের লাতিন আমেরিকা বিষয়ক ব্যুরো এক বিবৃতিতে জানায়, “১৯৪৪ সালের পানি-বণ্টন চুক্তির অধীনে মেক্সিকোর পানি সরবরাহে ঘাটতির কারণে যুক্তরাষ্ট্রের কৃষি ব্যবস্থা, বিশেষ করে রিও গ্র্যান্ড উপত্যকার কৃষকরা ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন।”
উল্লেখ্য, রিও গ্র্যান্ড ও কলোরাডো নদী থেকে পানি বণ্টনের বিষয়টি ১৯৪৪ সালের চুক্তি দ্বারা নির্ধারিত হয়।
জলবায়ু পরিবর্তন এবং শুষ্ক অঞ্চলে জনসংখ্যা ও কৃষিকাজের প্রসারের কারণে এই চুক্তিটি বর্তমানে কঠিন পরিস্থিতির সম্মুখীন। এই চুক্তির অধীনে, পানি বিতরণের জন্য পাঁচ বছর মেয়াদি একটি চক্র রয়েছে, যার সর্বশেষ সময়সীমা ২০২৫ সালের অক্টোবর মাস পর্যন্ত।
চুক্তি অনুযায়ী, মেক্সিকো রিও গ্র্যান্ড বেসিনের নদীগুলো থেকে পানি যুক্তরাষ্ট্রে পাঠায়, এবং এর বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্র কলোরাডো নদীর পানি মেক্সিকোতে সরবরাহ করে।
তবে, মেক্সিকোর উত্তরাঞ্চলে তীব্র খরা পরিস্থিতির কারণে দেশটি পানির হিস্যা পরিশোধে পিছিয়ে পড়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের কৃষক ও আইনপ্রণেতারা অভিযোগ করেছেন, মেক্সিকো অতীতে প্রতিটি চক্রের শেষ পর্যন্ত অপেক্ষা করেছে এবং শেষ সময়ে তাদের প্রতিশ্রুতি রক্ষা করতে ব্যর্থ হয়েছে।
সীমান্ত এলাকার দক্ষিণে এই চুক্তিটি বেশ বিতর্কিত, কারণ মেক্সিকোর কৃষকরা সাম্প্রতিক বছরগুলোতে তীব্র খরা পরিস্থিতির সঙ্গে লড়াই করছেন।
গত বছর, টেক্সাসের দক্ষিণাঞ্চলে অবস্থিত একটি চিনি কল (sugar mill) বন্ধ হয়ে যায়, যার কারণ হিসেবে মেক্সিকো থেকে পানির অভাবকে দায়ী করা হয়।
টেক্সাসের আইনপ্রণেতারা মেক্সিকোর বিরুদ্ধে ব্যবস্থা নেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন।
তারা বলছেন, যুক্তরাষ্ট্র পানি ভাগাভাগির ক্ষেত্রে তাদের দায়িত্ব পালন করেছে।
টেক্সাসের সিনেটর টেড ক্রুজ এক টুইটে লিখেছেন, “মেক্সিকোর চুক্তির শর্ত না মানার কারণে টেক্সাসের কৃষকরা সংকটে আছেন।
আমি ট্রাম্প প্রশাসনের সঙ্গে কাজ করে মেক্সিকোর উপর চাপ সৃষ্টি করব এবং টেক্সাসের কৃষকদের জন্য পানির ব্যবস্থা করব।”
এই পানি-সংকট এমন এক সময়ে দেখা দিয়েছে, যখন ট্রাম্প প্রশাসন লাতিন আমেরিকার দেশগুলোর সঙ্গে সম্পর্ক কঠোর করতে চাইছে, বিশেষ করে অভিবাসন ইস্যুতে।
ক্ষমতায় ফিরলে ট্রাম্প অবৈধ অভিবাসন বন্ধ করার অঙ্গীকার করেছেন, যাদের অধিকাংশই মধ্য আমেরিকা ও ভেনেজুয়েলা থেকে আসে এবং মেক্সিকো হয়ে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করে।
ট্রাম্প সীমান্তে সেনা মোতায়েন করেছেন এবং মেক্সিকোর উপর শুল্ক আরোপের ঘোষণা দিয়েছেন, যদিও পরে তা ২ এপ্রিল পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান