মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে মার্চ মাসে খুচরা বিক্রি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যা দেশটির অর্থনীতির জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ সূচক। এই বৃদ্ধি মূলত তৎকালীন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের প্রতিক্রিয়া হিসেবে দেখা গেছে, যেখানে ভোক্তারা আসন্ন মূল্যবৃদ্ধির আশঙ্কায় জিনিসপত্র কেনার দিকে ঝুঁকেছিলেন।
বাণিজ্য বিভাগ সূত্রে জানা যায়, মার্চ মাসে খুচরা বিক্রি আগের মাসের তুলনায় ১.৪ শতাংশ বেড়েছে। বিশ্লেষকরা বলছেন, এই বৃদ্ধি গত দুই বছরের মধ্যে সর্বোচ্চ।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই সময়টাতে গাড়ির যন্ত্রাংশ এবং গৃহসজ্জার সামগ্রীর বিক্রি উল্লেখযোগ্য হারে বেড়েছে। তবে, আসবাবপত্র, ডিপার্টমেন্টাল স্টোর এবং গ্যাস স্টেশনে বিক্রি কিছুটা কমেছে।
মূলত শুল্ক বৃদ্ধির কারণে জিনিসপত্রের দাম বাড়তে পারে, এমন ধারণা থেকেই মানুষজন দ্রুত কেনাকাটা সেরেছেন।
অর্থনীতিবিদদের মতে, ভোক্তাদের এই কেনাকাটার প্রবণতা এপ্রিল মাস পর্যন্ত চলতে পারে, তবে এরপরে তা কমে যাওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে। এর কারণ হিসেবে তারা বলছেন, বাজারের এই অস্থিরতা ফেডারেল রিজার্ভকে (ফেড) ভোক্তা ব্যয়ের প্রকৃত চিত্র বুঝতে সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে।
ফেডারেল রিজার্ভ হল মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কেন্দ্রীয় ব্যাংক, যা দেশের মুদ্রানীতি নিয়ন্ত্রণ করে এবং মূল্য স্থিতিশীলতা বজায় রাখতে কাজ করে।
আন্তর্জাতিক অর্থনীতিবিদ জেমস নাইটলি, যিনি আইএনজি-তে কর্মরত আছেন, তিনি সিএনএন-কে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “নিকট ভবিষ্যতে আমরা সম্ভবত ভোক্তা ব্যয়ের শক্তিশালী কিছু সংখ্যা দেখতে পাব, তবে এটি ফেডের জন্য কিছুটা কঠিন পরিস্থিতি তৈরি করবে।” তিনি আরও যোগ করেন, “এর মানে হল কেন্দ্রীয় ব্যাংককে পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে হবে এবং পরবর্তী পদক্ষেপের জন্য অপেক্ষা করতে হবে।”
মার্চ মাসে খাদ্য ও পানীয়ের দোকানগুলোতেও বিক্রি বেড়েছে, যা ইঙ্গিত করে ভোক্তারা তখনও তাদের পছন্দের জিনিসগুলো উপভোগ করতে আগ্রহী। তবে, অনেক অর্থনীতিবিদ মনে করেন, ট্রাম্প প্রশাসনের বাণিজ্য নীতি ভোক্তাদের মধ্যে এক ধরনের অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।
মিশিগান বিশ্ববিদ্যালয়ের সাম্প্রতিক ভোক্তা sentimento survey-তেও এমনটা দেখা গেছে।
বিশেষজ্ঞদের মতে, ট্রাম্পের শুল্ক নীতি মূল্যস্ফীতি এবং বেকারত্ব দুটোই বাড়িয়ে দিতে পারে, যা অর্থনীতির জন্য একটি উদ্বেগের কারণ। এই পরিস্থিতিতে অর্থনীতি ‘স্ট্যাগফ্লেশন’-এর দিকে যেতে পারে, যেখানে অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি কমে যায় এবং একইসঙ্গে মূল্যস্ফীতি বাড়ে।
ফেডারেল রিজার্ভের কর্মকর্তাদের মতে, শুল্কের কারণে বাজারে নেতিবাচক প্রভাব পড়তে পারে। শিকাগো ফেডের প্রেসিডেন্ট আউস্টান গউলসবি এক অনুষ্ঠানে বলেছিলেন, “শুল্ক হল এক ধরনের নেতিবাচক সরবরাহ ধাক্কা। এটি এমন একটি ধাক্কা যা একই সময়ে ফেডের দ্বৈত ম্যান্ডেটের উভয় দিককে আরও খারাপ করে তোলে।”
ট্রাম্প প্রশাসন বিভিন্ন পণ্যের ওপর শুল্ক আরোপ করেছে, যার মধ্যে অ্যালুমিনিয়াম ও স্টিলের ওপর ২৫ শতাংশ, মেক্সিকো ও কানাডা থেকে আসা পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ, চীনের পণ্য আমদানির ওপর ১৪৫ শতাংশ পর্যন্ত শুল্ক এবং গাড়ির যন্ত্রাংশের ওপর আলাদা শুল্ক অন্তর্ভুক্ত রয়েছে। যদিও, এই শুল্কের কিছু অংশ পরবর্তীতে স্থগিত করা হয়েছে।
এই ঘটনাগুলো বিশ্ব অর্থনীতির জন্য গুরুত্বপূর্ণ এবং এর প্রভাব বিভিন্ন দেশে পড়তে পারে। বাংলাদেশের মতো উন্নয়নশীল দেশগুলোতেও এর প্রভাব পড়তে পারে, বিশেষ করে আমদানি খরচ বেড়ে যাওয়ার সম্ভবনা রয়েছে।
তথ্য সূত্র: সিএনএন