বিজ্ঞান গবেষণা: আমেরিকায় বিপর্যয়, চাকরি হারাচ্ছেন বিজ্ঞানীরা! বিদেশে যাওয়ার হিড়িক

যুক্তরাষ্ট্রে বৈজ্ঞানিক গবেষণায় অর্থ বরাদ্দ হ্রাস হওয়ায় দেশটির বহু বিজ্ঞানী চাকরি হারাচ্ছেন বা তাদের গবেষণা প্রকল্পের তহবিল বন্ধ হয়ে যাচ্ছে। এমন পরিস্থিতিতে বিশ্বের বিভিন্ন দেশের বিশ্ববিদ্যালয় ও গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো সুযোগের সদ্ব্যবহার করতে চাইছে।

তারা মার্কিন বিজ্ঞানীদের আকৃষ্ট করতে আকর্ষণীয় প্রস্তাব নিয়ে এগিয়ে আসছে।

ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন ফেডারেল সরকারের বৈজ্ঞানিক গবেষণায় কয়েক বিলিয়ন ডলারের বেশি বরাদ্দ কমিয়ে দেয়। এর ফলে হাজার হাজার বিজ্ঞানী চাকরি হারিয়েছেন অথবা তাদের গবেষণা প্রকল্পের জন্য প্রয়োজনীয় তহবিল বন্ধ হয়ে গেছে।

পরিস্থিতি এমন দাঁড়িয়েছে যে, উন্নত দেশগুলো এখন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিজ্ঞানী আকৃষ্ট করতে চাইছে। উদাহরণস্বরূপ, কানাডা ‘কানাডা লিডস’ নামে একটি প্রোগ্রাম চালু করেছে, যার মূল লক্ষ্য হলো তরুণ বায়োমেডিকেল গবেষকদের কানাডায় নিয়ে আসা। ফ্রান্সে ‘সেফ প্লেস ফর সায়েন্স’ প্রোগ্রাম শুরু হয়েছে, যেখানে যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীদের আশ্রয় দেওয়ার প্রতিশ্রুতি দেওয়া হয়েছে। অস্ট্রেলিয়ার ‘গ্লোবাল ট্যালেন্ট অ্যাট্রাকশন প্রোগ্রাম’ আকর্ষণীয় বেতন এবং পুনর্বাসন প্যাকেজের প্রস্তাব দিচ্ছে।

বিজ্ঞান বিষয়ক জার্নাল ‘সায়েন্স’-এর প্রধান সম্পাদক হোল্ডেন থর্পের মতে, দ্বিতীয় বিশ্বযুদ্ধের পর থেকে যুক্তরাষ্ট্র বিজ্ঞান গবেষণায় বিপুল পরিমাণ অর্থ বিনিয়োগ করেছে। এর ফলস্বরূপ, দেশটি বিশ্বজুড়ে বিজ্ঞান ও প্রযুক্তির নেতৃত্ব দিয়েছে।

বর্তমানে এই গবেষণা খাতে বরাদ্দ কমানোর ফলে সেই অবস্থানে চিড় ধরছে। হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে বলা হয়েছে, গবেষণা খাতে অর্থ ব্যয় পুনর্বিন্যাস করে আমেরিকান জনগণের অগ্রাধিকারের সঙ্গে সামঞ্জস্য রাখা হবে।

বিভিন্ন আন্তর্জাতিক গণমাধ্যমের খবর অনুযায়ী, এরই মধ্যে বেশ কয়েকটি বিশ্ববিদ্যালয় কর্মী নিয়োগ স্থগিত করেছে, কর্মীদের ছাঁটাই করেছে এবং নতুন স্নাতকদের ভর্তি বন্ধ করে দিয়েছে। হার্ভার্ড ইউনিভার্সিটির আন্তর্জাতিক শিক্ষার্থী তালিকাভুক্তিও বাতিল করা হয়েছে, যদিও পরে আদালতের নির্দেশে তা স্থগিত করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে থাকা গবেষণা প্রতিষ্ঠানগুলো তাদের সহযোগীদের ভবিষ্যৎ নিয়ে উদ্বিগ্ন। তবে তারা প্রতিভার সম্ভাব্য স্থানান্তরের সুযোগও দেখছে।

কানাডার ইউনিভার্সিটি হেলথ নেটওয়ার্কের ব্র্যাড ওয়াউটার্স বলেন, “যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে বিজ্ঞানীদের জন্য এক ধরনের হুমকি তৈরি হয়েছে। আমরা দেখছি, প্রতিভার একটি বিশাল ভাণ্ডার এই মুহূর্তে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছে।”

বিশ্ববিদ্যালয়গুলো সবসময়ই অন্য জায়গা থেকে শিক্ষক ও গবেষক নিয়োগের চেষ্টা করে। তবে বর্তমান পরিস্থিতি ভিন্ন।

এখন অনেক নিয়োগকর্তা এমন একটি বিষয় নিয়ে কাজ করছেন, যা সম্ভবত হুমকির মুখে পড়েছে— সেটি হলো অ্যাকাডেমিক স্বাধীনতা। ইউরোপীয় ইউনিয়নের প্রেসিডেন্ট উরসুলা ভন দের লেয়েন ঘোষণা করেছেন, তাঁরা “বৈজ্ঞানিক গবেষণার স্বাধীনতাকে আইনে অন্তর্ভুক্ত করতে চান।” ফ্রান্সের ‘সেইফ প্লেস ফর সায়েন্স’ প্রোগ্রামের প্রেসিডেন্ট এরিক বের্তন জানিয়েছেন, আবেদনকারীরা অর্থকে খুব একটা গুরুত্ব দিচ্ছেন না, বরং তাঁরা তাঁদের গবেষণা চালিয়ে যেতে এবং অ্যাকাডেমিক স্বাধীনতা বজায় রাখতে চান।

তবে কতজন বিজ্ঞানী যুক্তরাষ্ট্র ছাড়বেন, তা বলা কঠিন। কারণ, বিশ্ববিদ্যালয়গুলোর আবেদন পর্যালোচনা করতে এবং তহবিল দিতে মাসখানেক সময় লাগবে। এছাড়া, জীবনযাত্রায় পরিবর্তন আনাও সময়সাপেক্ষ।

যুক্তরাষ্ট্র গবেষণা ও উন্নয়নে সবচেয়ে বেশি অর্থ বিনিয়োগ করে থাকে। ২০২৩ সালে দেশটি বিশ্বের মোট গবেষণা ও উন্নয়নের ২৯ শতাংশে অর্থ জুগিয়েছে।

তবে বিভিন্ন দেশ থেকে পাওয়া খবর অনুযায়ী, এরই মধ্যে যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীরা বিদেশি প্রোগ্রামগুলোতে আগ্রহ দেখাচ্ছেন।

ফ্রান্সের ‘ইনস্টিটিউট অফ জেনেটিক্স, মলিকিউলার অ্যান্ড সেলুলার বায়োলজি’র গবেষণা প্রোগ্রামে গত বছরের তুলনায় এবার আবেদনকারীর সংখ্যা প্রায় দ্বিগুণ হয়েছে। জার্মানির ‘লিস মেইটনার এক্সিলেন্স প্রোগ্রাম’-এ যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীদের আবেদন গত বছরের তুলনায় তিনগুণ বেড়েছে।

যুক্তরাজ্যভিত্তিক একটি নিয়োগকারী সংস্থার মতে, তাঁরা যুক্তরাষ্ট্রের বিজ্ঞানীদের কাছ থেকে পাওয়া আবেদনের সংখ্যা ২৫ থেকে ৩৫ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি হতে দেখছেন।

এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের জন্য একটি সুযোগ সৃষ্টি করতে পারে। আন্তর্জাতিক গবেষণায় অংশগ্রহণের মাধ্যমে বাংলাদেশের বিজ্ঞানীরা উপকৃত হতে পারেন।

তথ্য সূত্র: আন্তর্জাতিক সংবাদ সংস্থা।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *