যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিরক্ষামন্ত্রী সম্প্রতি পানামায় সামরিক ঘাঁটি স্থাপনের সম্ভাবনা নিয়ে আলোচনা করেছেন, যার তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছে পানামার সরকার। কৌশলগত দিক থেকে গুরুত্বপূর্ণ পানামা খাল নিয়ে চীনের ক্রমবর্ধমান প্রভাবের মধ্যে এমন প্রস্তাব আসে।
পানামায় সফরকালে মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পিটার হেগসেথ ‘আমন্ত্রণ’ পেলে দেশটির সামরিক ঘাঁটি অথবা নৌ-বিমানঘাঁটিগুলো পুনরায় চালু করার কথা বলেন। এর মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনীর সদস্যদের সেখানে নিয়মিত আনাগোনা (rotational deployment) সম্ভব হবে। উল্লেখ্য, প্রায় ৩৫ বছর আগে যুক্তরাষ্ট্র পানামায় সামরিক অভিযান চালিয়েছিল।
হেগসেথ আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্র চায় তাদের নৌবাহিনীর জাহাজগুলো যেন খাল দিয়ে নির্বিঘ্নে চলাচল করতে পারে। সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর আগে অভিযোগ করেছিলেন, পানামা খাল দিয়ে যাওয়ার সময় মার্কিন জাহাজগুলোকে অতিরিক্ত মাশুল দিতে হয় এবং তাদের সঙ্গে ন্যায্য আচরণ করা হয় না।
যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতা গ্রহণের পর থেকেই চীনকে নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করে আসছেন। তিনি মনে করেন, পানামা খালের ওপর চীনের প্রভাব বাড়ছে। এই খাল দিয়ে যুক্তরাষ্ট্রের প্রায় ৪০ শতাংশ পণ্যবাহী কনটেইনার এবং বিশ্ব বাণিজ্যের প্রায় ৫ শতাংশ সম্পন্ন হয়। যুক্তরাষ্ট্র একসময় এই খাল নির্মাণ ও নিয়ন্ত্রণ করত। ট্রাম্প প্রশাসন এখন চাচ্ছে কৌশলগত এই জলপথের নিয়ন্ত্রণ তারা ‘পুনরুদ্ধার’ করবে।
হেগসেথ জানান, পানামায় যুক্তরাষ্ট্রের পুরোনো সামরিক ঘাঁটিগুলো আবার ব্যবহার করা যেতে পারে। তিনি বলেন, পানামার সঙ্গে সম্প্রতি স্বাক্ষরিত একটি চুক্তির মাধ্যমে ‘সামরিক ঘাঁটি, নৌ-বিমানঘাঁটি অথবা এমন স্থানগুলো, যেখানে মার্কিন সেনারা পানামার সেনাদের সঙ্গে মিলে কাজ করতে পারবে, সেগুলোর পুনরুজ্জীবন সম্ভব’।
যদিও হেগসেথ যৌথ মহড়ার সম্ভাবনার কথা উল্লেখ করেছেন, তবে নিয়মিত সেনা মোতায়েনের বিষয়টি পানামার জন্য উদ্বেগের কারণ। কারণ, পানামার কাছে খালের মালিকানা একটি জাতীয় গর্বের বিষয়।
পানামার সরকার দ্রুত এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করেছে। দেশটির নিরাপত্তা মন্ত্রী ফ্রাঙ্ক অ্যাব্রেগো হেগসেথের সঙ্গে এক যৌথ সংবাদ সম্মেলনে বলেন, ‘পানামা প্রেসিডেন্ট মুলিনোর মাধ্যমে পরিষ্কারভাবে জানিয়েছে, আমরা সামরিক ঘাঁটি বা প্রতিরক্ষা স্থাপনা গ্রহণ করতে পারি না।’
হেগসেথ আরও জানান, যুক্তরাষ্ট্র চাইছে তাদের যুদ্ধজাহাজগুলো যেন সবার আগে এবং কোনো মাশুল ছাড়া খাল দিয়ে যেতে পারে। পানামার খাল বিষয়ক মন্ত্রী জোসে রামোন ইকাজা বলেন, ‘আমরা এমন একটি ব্যবস্থা চাই, যেখানে যুদ্ধজাহাজ ও সহায়ক জাহাজগুলোর জন্য সেবামূলক ক্ষতিপূরণ ব্যবস্থা থাকবে, যা তাদের জন্য খরচ-নিরপেক্ষ হবে, তবে বিনামূল্যে নয়।’
পানামা খাল কর্তৃপক্ষ (PCA) জানিয়েছে, তারা যুদ্ধজাহাজগুলোর টোল বাবদ নিরাপত্তা বিষয়ক পরিষেবা দেওয়ার জন্য ‘খরচ-নিরপেক্ষ পরিকল্পনা’ চাইছে।
বর্তমান চুক্তি অনুযায়ী, সব দেশের জাহাজ এই খাল ব্যবহার করতে পারে এবং তাদের বহন ক্ষমতা ও মালপত্রের ওপর ভিত্তি করে একই হারে মাশুল দিতে হয়, যা তাদের দেশ বা গন্তব্যের ওপর নির্ভরশীল নয়।
পেন্টাগন প্রধানের এই সফরে চীন এবং ল্যাটিন আমেরিকায় তাদের প্রভাব বিস্তারের বিষয়টি বারবার উঠে এসেছে। হেগসেথ বলেন, যুক্তরাষ্ট্র চীনের সঙ্গে যুদ্ধ চায় না, তবে এই অঞ্চলে বেইজিংয়ের ‘হুমকি’ মোকাবিলা করবে।
চীনের পক্ষ থেকে হেগসেথের মন্তব্যের কড়া জবাব দেওয়া হয়েছে। তারা বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রের কর্মকর্তারা ‘চীনকে বিদ্বেষপূর্ণভাবে আক্রমণ করেছে, যা তাদের আগ্রাসী মনোভাবের প্রমাণ’।
যুক্তরাষ্ট্রের অভিযোগ, একটি হংকংভিত্তিক কোম্পানি, যারা দীর্ঘদিন ধরে খালের দুই প্রান্তে অবস্থিত বন্দর পরিচালনা করছে, তারা চুক্তি অনুযায়ী তাদের দায়িত্ব পালন করতে ব্যর্থ হয়েছে। কোম্পানিটি তাদের বিরুদ্ধে আনা ১.২ বিলিয়ন ডলার পরিশোধ না করার অভিযোগ অস্বীকার করেছে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান