মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে বাণিজ্য শুল্কের কারণে ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীরা ক্ষতির সম্মুখীন
যুক্তরাষ্ট্রের বাজারে আমদানি শুল্ক বেড়ে যাওয়ায় দেশটির ছোট ব্যবসায়ীরা এখন টিকে থাকার লড়াইয়ে নেমেছেন। পোশাক থেকে শুরু করে খাদ্যপণ্য—বিভিন্ন ধরনের ব্যবসার উপর এর মারাত্মক প্রভাব পড়েছে। শুল্কের কারণে উৎপাদন খরচ বেড়ে যাওয়ায় অনেক ব্যবসায়ী হয়রানির শিকার হচ্ছেন, কেউ কেউ ব্যবসা গুটিয়ে নেওয়ার কথা ভাবছেন।
যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ক্ষমতায় আসার পর চীন থেকে আমদানি করা পণ্যের উপর ১৪৫ শতাংশ এবং অন্যান্য দেশ থেকে আসা পণ্যের উপর ১০ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেন। ট্রাম্পের দাবি ছিল, এর ফলে ব্যবসায়ীরা যুক্তরাষ্ট্রেই পণ্য উৎপাদন করতে উৎসাহিত হবেন। কিন্তু বাস্তবে দেখা যাচ্ছে, এর ফলে অনেক ছোট ব্যবসায়ী বিপাকে পড়েছেন।
আইডাহো অঙ্গরাজ্যের ওয়াইল্ড রাই (Wild Rye) নামক একটি নারী পোশাক প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের মালিক ক্যাসি অ্যাবেল জানান, চীনের সরবরাহকারীদের কাছ থেকে শীতের পোশাক তৈরির জন্য তিনি প্রায় ৭ লাখ ডলারের (বাংলাদেশি মুদ্রায় প্রায় ৭ কোটি ৭৭ লাখ টাকা) অর্ডার করেছেন। কিন্তু শুল্কের কারণে তাকে প্রায় ১২ লাখ ডলার (১৩ কোটি ৩২ লাখ টাকা) অতিরিক্ত শুল্ক দিতে হবে। অ্যাবেল বলেন, “আমার কাছে এত টাকা নেই যে আমি শুল্ক পরিশোধ করতে পারি। পণ্য দেশে ঢোকার সময়ই এই শুল্ক পরিশোধ করতে হবে। পণ্য বিক্রি করার আগেই হয়তো আমাদের ব্যবসা বন্ধ হয়ে যাবে।”
শুধু পোশাক শিল্পই নয়, খাদ্যপণ্য প্রস্তুতকারক এবং অন্যান্য ছোট ব্যবসায়ীরাও এই শুল্কের কারণে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন। নিউইয়র্কের ব্রুকলিন দিল্লী (Brooklyn Delhi) নামক একটি ভারতীয় মশলার খাদ্য প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের মালিক চিত্রা আগারওয়াল জানান, তাঁর পণ্যের প্রায় ৭০ শতাংশ উপকরণ আসে ভারতসহ বিভিন্ন দেশ থেকে। শুল্কের কারণে তাঁর ব্যবসার খরচ বাড়ছে। তিনি বলেন, “আমরা এমন সব খাঁটি ভারতীয় পণ্য তৈরি করি যার জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণগুলো যুক্তরাষ্ট্রে সেভাবে পাওয়া যায় না।”
একই ধরনের সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছেন আঞ্জালিস কাপ (Anjali’s Cup) -এর প্রতিষ্ঠাতা অঞ্জলি ভার্গাভা। তিনি জানান, তাঁর ব্র্যান্ডের মশলা এবং চা তৈরির জন্য প্রয়োজনীয় উপকরণ যেমন—আদা আসে ভিয়েতনাম থেকে, হলুদ থাইল্যান্ড থেকে এবং চা আসে ভারত থেকে। শুল্কের কারণে তাঁর ব্যবসার উৎপাদন খরচ বাড়ছে।
ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের সংগঠন ‘স্মল বিজনেস মেজরিটি’র পরিচালক অ্যালেক্সিস ডি’আমাতো বলেন, “ক্ষুদ্র ব্যবসায়ীদের পক্ষে এই বাড়তি খরচ বহন করা কঠিন হয়ে পড়েছে। তারা হয় এই খরচ ক্রেতাদের উপর চাপিয়ে দিতে বাধ্য হচ্ছেন, নয়তো তাদের লোকসান গুনতে হচ্ছে।”
বিভিন্ন ধরনের ব্যবসার উপর এই শুল্কের প্রভাব ইতোমধ্যে পড়তে শুরু করেছে। যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য বিভাগ জানিয়েছে, চলতি বছরের প্রথম প্রান্তিকে দেশটির জিডিপি (মোট দেশজ উৎপাদন) ০.৩ শতাংশ কমেছে। এমন পরিস্থিতিতে অনেক ব্যবসায়ী তাঁদের পণ্য মজুদ করতে শুরু করেছেন। ওহাইও অঙ্গরাজ্যের ট্যালন ইলেকট্রিক (Tallon Electric) নামক একটি গিটার প্রস্তুতকারক প্রতিষ্ঠানের মালিক শন ম্যাকওস্কি জানান, “আমরা অনেক পণ্য মজুদ করেছি। আশা করছি, এর মাধ্যমে এই পরিস্থিতি মোকাবিলা করা যাবে।”
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, শুল্কের কারণে ব্যবসায়ীরা একদিকে যেমন ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছেন, তেমনি ভোক্তাদের উপরও এর প্রভাব পড়ছে। পণ্যের দাম বাড়ার কারণে অনেক ক্রেতা এখন জিনিসপত্র কেনা কমিয়ে দিয়েছেন।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা