মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র থেকে বিভিন্ন প্রকার অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় রপ্তানি বাণিজ্যে গত বছর এক নতুন রেকর্ড সৃষ্টি হলেও, শুল্কের কারণে সেই সাফল্যে শীঘ্রই ভাটা পড়তে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে। সংশ্লিষ্ট শিল্পগোষ্ঠীর সতর্কবার্তা অনুযায়ী, বাণিজ্য সংক্রান্ত জটিলতা অব্যাহত থাকলে এই খাতে ব্যবসার ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়বে।
যুক্তরাষ্ট্রের ডিস্টিলড স্পিরিটস কাউন্সিল (DISCUS)-এর তথ্য অনুযায়ী, ২০২৩ সালে দেশটির অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় রপ্তানি হয়েছে প্রায় ২.৪ বিলিয়ন মার্কিন ডলারের, যা একটি নতুন রেকর্ড। এই সাফল্যের পেছনে প্রধান কারণ ছিল যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে বাণিজ্য সম্পর্ক পুনরায় স্থাপন। বিশেষ করে, ইউরোপীয় ইউনিয়নে (ইইউ) যুক্তরাষ্ট্রে তৈরি পানীয় রপ্তানি গত বছর প্রায় ৩৯ শতাংশ বৃদ্ধি পেয়েছে।
তবে, বিভিন্ন বাণিজ্য বিরোধের কারণে অনেক মার্কিন কোম্পানি এখন ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
ডিস্কাস-এর প্রেসিডেন্ট এবং প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা ক্রিস সোয়াংগার এক বিবৃতিতে জানিয়েছেন, “দুর্ভাগ্যজনকভাবে, আমাদের খাতের সঙ্গে সম্পর্কহীন চলমান বাণিজ্য বিরোধের ফলে অনিশ্চয়তা তৈরি হয়েছে। এর কারণে অনেক মার্কিন প্রস্তুতকারক ব্যবসা গুটিয়ে নিতে বাধ্য হচ্ছেন, যা বিক্রয় বৃদ্ধিতে বাধা সৃষ্টি করছে।”
এই বাণিজ্য বিরোধের কেন্দ্রবিন্দুতে রয়েছে মার্কিন হুইস্কি। ইইউ ২০২২ সালে যুক্তরাষ্ট্রের হুইস্কির ওপর থেকে শুল্ক প্রত্যাহার করে নিয়েছিল। এরপর থেকে দেশটিতে যুক্তরাষ্ট্রের হুইস্কি রপ্তানি প্রায় ৬০ শতাংশ বেড়ে ৬৯৯ মিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
যদিও সম্প্রতি, সাবেক মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প অন্যান্য দেশের ওপর শুল্ক আরোপের বিষয়ে ৯০ দিনের বিরতি ঘোষণা করেছিলেন, যার ফলে ইইউ’র পক্ষ থেকে মার্কিন হুইস্কির ওপর নতুন করে শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত আপাতত স্থগিত করা হয়েছে। সোয়াংগার এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়ে বলেছেন, “এটি যুক্তরাষ্ট্র ও ইইউ’র মধ্যে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য পুনরায় চালুর ক্ষেত্রে একটি ইতিবাচক পদক্ষেপ।”
ইইউ’র শুল্ক আরোপ মার্কিন প্রস্তুতকারকদের জন্য একটি বড় ধাক্কা হতো। কারণ, ইইউ হলো যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়ের সবচেয়ে বড় বাজার। গত বছর যুক্তরাষ্ট্রের মোট রপ্তানির প্রায় অর্ধেক, অর্থাৎ ১.২ বিলিয়ন ডলারের পণ্য সেখানে রপ্তানি হয়েছে।
শুধু ইইউ নয়, কানাডাও যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়ের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাজার। গত বছর দেশটিতে প্রায় ২২১ মিলিয়ন ডলারের পণ্য রপ্তানি হয়েছে। তবে, কানাডা গত মাস থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সব ধরনের অ্যালকোহলযুক্ত পণ্যের ওপর ২৫ শতাংশ শুল্ক আরোপ করেছে।
এর ফলে অনেক মার্কিন ব্র্যান্ডের পণ্য কানাডার দোকান থেকে সরিয়ে নেওয়া হয়েছে, যা এই বছরের বাণিজ্য পরিস্থিতি নিয়ে অনিশ্চয়তা তৈরি করেছে।
শুল্ক ছাড়াও, কোভিড-১৯ অতিমারীর পর চাহিদা কমে যাওয়ায় অনেক বড় প্রস্তুতকারক বিভিন্ন সমস্যার সম্মুখীন হচ্ছে। ডিস্কাস জানিয়েছে, অতিমারীর সময় ব্যবসার যে প্রসার ঘটেছিল, সেটি এখন কমে গেছে।
বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালকোহলযুক্ত পানীয় রপ্তানি প্রায় ১০ শতাংশ হ্রাস পেয়েছে। এর ফলস্বরূপ, প্রধান প্রস্তুতকারক যেমন- উডফোর্ড রিজার্ভ এবং জ্যাক ড্যানিয়েলস-এর মূল কোম্পানি ব্রাউন-ফরম্যান কর্মী ছাঁটাই করতে বাধ্য হয়েছে। এমনকি, ডায়াজিও-র সহায়তায় পরিচালিত ওয়েস্টওয়ার্ড হুইস্কির মতো কিছু কোম্পানি দেউলিয়াও হয়ে গেছে।
যদিও সম্প্রতি দুর্বলতা দেখা যাচ্ছে, গত আড়াই দশকে যুক্তরাষ্ট্রের অ্যালকোহলযুক্ত পানীয়ের বিক্রি উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে। ২০০০ সালে যেখানে রপ্তানির পরিমাণ ছিল মাত্র ৪৭৮ মিলিয়ন ডলার, সেখানে ২০২৩ সালে তা ২.৪ বিলিয়ন ডলারে পৌঁছেছে।
ডিস্কাস মনে করে, এর কারণ হলো ৫১টি দেশের সঙ্গে শুল্কমুক্ত বাণিজ্য চুক্তি, যার মধ্যে ইইউ, কানাডা এবং মেক্সিকো অন্যতম।
তথ্য সূত্র: CNN