ট্রাম্পের শুল্কের ধাক্কা: ১,২০০ পয়েন্ট পড়ল ডাউ, আতঙ্কিত শেয়ার বাজার!

ডোনাল্ড ট্রাম্পের নতুন শুল্ক ঘোষণার পর বিশ্বজুড়ে অস্থিরতা দেখা দিয়েছে, যার প্রভাব সরাসরি এসে পড়েছে শেয়ার বাজারে। মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজার ব্যাপক দরপতনের শিকার হয়েছে, যার ফলস্বরূপ বিশ্ব অর্থনীতিতে তৈরি হয়েছে চরম অনিশ্চয়তা।

বৃহস্পতিবার দিনের শুরুতে, ডাউ জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল এভারেজ ১,২০০ পয়েন্টের বেশি কমে যায়, যা প্রায় ২.৯ শতাংশ। এস&পি ৫০০ সূচকও কমেছে ৩.৩ শতাংশ, এবং নাসডাক কম্পোজিট ৪.৩ শতাংশ পর্যন্ত নিচে নেমে যায়।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই পরিস্থিতিতে সবচেয়ে উদ্বেগের বিষয় হলো একদিকে যেমন মূল্যস্ফীতি বাড়ছে, তেমনই অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধিও দুর্বল হয়ে পড়ছে। ট্রাম্প প্রশাসনের এই শুল্ক নীতি সম্ভবত এই অবস্থার সৃষ্টি করেছে।

এর ফলস্বরূপ, শুধু বৃহৎ প্রযুক্তি কোম্পানিগুলোই নয়, বরং ছোট ছোট অনেক ব্যবসাও ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে। এমনকি বিনিয়োগের নিরাপদ আশ্রয় হিসেবে পরিচিত সোনাও কিছুটা দর হারিয়েছে।

ডলারের মূল্যও অন্যান্য প্রধান মুদ্রার বিপরীতে কমে গেছে, যা বিশ্ব অর্থনীতির জন্য একটি খারাপ সংকেত।

যুক্তরাষ্ট্র সরকার বিভিন্ন দেশ থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর ১০ শতাংশ বা তার বেশি শুল্ক আরোপ করেছে। এই পদক্ষেপের কারণে, বিশেষজ্ঞরা আশঙ্কা করছেন যে চলতি বছরে আমেরিকার অর্থনৈতিক প্রবৃদ্ধি ২ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে এবং মূল্যস্ফীতি ৫ শতাংশের কাছাকাছি পৌঁছাতে পারে।

অর্থনীতিবিদদের মতে, এমন পরিস্থিতি তৈরি হলে তা “স্ট্যাগফ্লেশন”-এর দিকে নিয়ে যেতে পারে, যেখানে অর্থনৈতিক স্থবিরতা এবং উচ্চ মূল্যস্ফীতি একসঙ্গে দেখা যায়।

ওয়াল স্ট্রিট দীর্ঘদিন ধরে ধারণা করে আসছিল যে, ট্রাম্প শুল্ককে শুধুমাত্র অন্য দেশের সঙ্গে দর কষাকষির হাতিয়ার হিসেবে ব্যবহার করবেন। কিন্তু বর্তমান পদক্ষেপ সম্ভবত বাণিজ্য যুদ্ধকে দীর্ঘমেয়াদী নীতি হিসেবে গ্রহণের ইঙ্গিত দেয়, যা যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন খাতকে পুনরায় শক্তিশালী করার চেষ্টা হিসেবে দেখা হচ্ছে।

বাজার বিশেষজ্ঞরা বলছেন, যদি শুল্কের হার বহাল থাকে, তাহলে শেয়ার বাজারের পতন আরো বাড়তে পারে, যা বিশ্বজুড়ে মন্দা ডেকে আনতে পারে। তবে ফেডারেল রিজার্ভ সুদের হার কমিয়ে অর্থনীতিকে সহায়তা করতে পারে কিনা, সেই বিষয়েও সন্দেহ রয়েছে।

কারণ সুদের হার কমালে একদিকে যেমন অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বাড়ানো যেতে পারে, তেমনি তা মূল্যস্ফীতিকেও আরও বাড়িয়ে দিতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে, বিভিন্ন কোম্পানির শেয়ারেও দরপতন হয়েছে। উদাহরণস্বরূপ, নাইকির শেয়ার ১২ শতাংশ কমেছে, কারণ তাদের অনেক পণ্য যুক্তরাষ্ট্রের বাইরে তৈরি হয়।

ইউনাইটেড এয়ারলাইন্সের শেয়ার ১০.৬ শতাংশ এবং ডিসকাউন্ট খুচরা বিক্রেতা ডলার ট্রির শেয়ার ৮.৫ শতাংশ কমেছে।

আন্তর্জাতিক বাজারেও এর প্রভাব পড়েছে। ফ্রান্সের সিএসি ৪০ সূচক ২.৯ শতাংশ, জার্মানির ডিএএক্স ২.১ শতাংশ, জাপানের নিক্কেই ২২৫ সূচক ২.৮ শতাংশ, হংকংয়ের হ্যাং সেং ১.৫ শতাংশ এবং দক্ষিণ কোরিয়ার কোস্পি ০.৮ শতাংশ কমেছে।

এই পরিস্থিতি বাংলাদেশের অর্থনীতির জন্য একটি সতর্কবার্তা। বিশ্ব অর্থনীতির এই টালমাটাল পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের বাণিজ্য এবং বিনিয়োগের ক্ষেত্রেও কিছু প্রভাব পড়তে পারে।

বিশেষ করে, তৈরি পোশাক শিল্প, যা বাংলাদেশের অর্থনীতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ, এর ওপর শুল্কের প্রভাব পড়তে পারে। বাংলাদেশের আমদানি-রপ্তানি নীতি এবং বৈদেশিক মুদ্রার বিনিময় হারেও পরিবর্তন আসার সম্ভাবনা রয়েছে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *