যুক্তরাষ্ট্রের শেয়ার বাজারে মঙ্গলবার বড় ধরনের উত্থান দেখা গেছে, যার মূল কারণ হলো ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) পণ্য আমদানির ওপর শুল্ক আরোপের সময়সীমা বাড়ানো হয়েছে।
এর ফলে বিশ্ব অর্থনীতিতে অস্থিরতা কিছুটা কমতে পারে বলে ধারণা করা হচ্ছে। এই ঘটনা বাংলাদেশের অর্থনীতিতে সরাসরি প্রভাব ফেলবে কিনা, তা এখনই বলা কঠিন, তবে বিশ্ব বাণিজ্যের গতিপ্রকৃতির ওপর এর একটি পরোক্ষ প্রভাব অবশ্যই থাকবে।
ডোনাল্ড ট্রাম্প যখন যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্ট ছিলেন, তখন বাণিজ্যনীতি নিয়ে প্রায়ই অস্থিরতা দেখা দিত, বিশেষ করে ইউরোপীয় ইউনিয়ন এবং চীনের সঙ্গে বাণিজ্য সম্পর্ক নিয়ে।
সম্প্রতি, ইইউ থেকে আসা পণ্যের ওপর ৫০ শতাংশ শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্ত জুলাই মাসের ৯ তারিখ পর্যন্ত স্থগিত করা হয়েছে। আগে এটি ১ জুন থেকে কার্যকর হওয়ার কথা ছিল।
এই ঘোষণার পর, বিনিয়োগকারীরা কিছুটা স্বস্তি অনুভব করেছেন এবং শেয়ার বাজারে এর ইতিবাচক প্রভাব পড়েছে।
মঙ্গলবার দিনের শুরুতে, এস অ্যান্ড পি ৫০০ সূচক ২ শতাংশ বৃদ্ধি পায়।
ডাউ জোন্স ইন্ডাস্ট্রিয়াল অ্যাভারেজ বা ডিজেআইএ (DJIA) বাণিজ্যের শুরুতে প্রায় ৭৪০ পয়েন্ট বেড়ে যায়, যা ১.৮ শতাংশের সমান।
এছাড়া, নাসডাক কম্পোজিটও ২.৫ শতাংশ বৃদ্ধি দেখিয়েছে।
মূলত, ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের কারণেই বাজারের এই ঊর্ধ্বগতি।
বিশ্লেষকরা মনে করছেন, বাণিজ্য সংক্রান্ত আলোচনা চালিয়ে গেলে যুক্তরাষ্ট্র তার প্রধান বাণিজ্য অংশীদারদের সঙ্গে একটি চুক্তিতে পৌঁছাতে পারবে, যা বিশ্ব বাণিজ্যকে সচল রাখবে এবং সম্ভাব্য মন্দা এড়াতে সহায়ক হবে।
শেয়ার বাজারের এই উত্থানের পেছনে আরও একটি গুরুত্বপূর্ণ কারণ ছিল যুক্তরাষ্ট্রের ভোক্তাদের মধ্যে অর্থনৈতিক আস্থা বৃদ্ধি।
কনফারেন্স বোর্ড প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, মে মাসে মার্কিন ভোক্তাদের আস্থা আগের ছয় মাসের তুলনায় বেড়েছে।
এই সূচক বৃদ্ধি মূলত স্বল্পমেয়াদে আয়, ব্যবসা এবং চাকরির বাজারের প্রত্যাশার উন্নতি নির্দেশ করে।
যদিও এই বৃদ্ধি এখনও মন্দা নির্দেশ করার মতো পর্যায়ে পৌঁছায়নি, তবে এটি ইতিবাচক একটি দিক।
শেয়ার বাজারে প্রযুক্তি খাতের কোম্পানিগুলোর মধ্যে এনভিডিয়া (Nvidia)-র শেয়ারের দাম উল্লেখযোগ্যভাবে বেড়েছে, যা এস অ্যান্ড পি ৫০০ সূচকের বৃদ্ধিতে সবচেয়ে বেশি সহায়তা করেছে।
বুধবার তাদের মুনাফার হিসাব প্রকাশের কথা রয়েছে।
আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (Artificial Intelligence) বা এআই প্রযুক্তির প্রসারের কারণে এনভিডিয়ার ব্যবসা বেড়েছে, তবে তাদের শেয়ারের উচ্চ মূল্য নিয়েও অনেকে সমালোচনা করছেন।
অন্যদিকে, সেলসফোর্স (Salesforce) প্রায় ৮ বিলিয়ন ডলারে আর্টিফিশিয়াল ইন্টেলিজেন্স (AI) নির্ভর ক্লাউড ডেটা ম্যানেজমেন্ট কোম্পানি ইনফরমেটিকা (Informatica)-কে কিনে নেওয়ার ঘোষণা দেওয়ার পর ইনফরমেটিকার শেয়ারের দাম ৬ শতাংশ বেড়েছে।
এছাড়া, অটোজোন (AutoZone) নামের একটি কোম্পানির মুনাফা প্রত্যাশা মতো না হওয়ায় তাদের শেয়ারের দর কমেছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বাজারের এই উত্থান একদিকে যেমন ইতিবাচক, তেমনি বাণিজ্য যুদ্ধের অনিশ্চয়তা এখনো উদ্বেগের কারণ।
কারণ, শুল্কের কারণে মার্কিন পরিবার এবং ব্যবসায়ীরা তাদের বিনিয়োগ ও খরচ কমাতে পারে, যা অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর হতে পারে।
তবে আপাতত, বাজারের এই ঊর্ধ্বগতি কিছুটা হলেও স্বস্তি এনেছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস