যুক্তরাষ্ট্রে ভয়াবহ ঝড়: ১৮ জনের প্রাণহানি, বাড়ছে বন্যার শঙ্কা!

যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণ ও মধ্যাঞ্চলে কয়েক দিনের প্রবল বৃষ্টি ও ঝড়ে অন্তত ১৮ জন নিহত হয়েছে। এর ফলে নদীর পানি বেড়ে বন্যা দেখা দিয়েছে, যা সেখানকার ক্ষতিগ্রস্ত জনপদগুলোর জন্য নতুন হুমকি হয়ে দাঁড়িয়েছে।

টেক্সাস থেকে ওহাইও পর্যন্ত বিভিন্ন এলাকার বিদ্যুৎ ও গ্যাস সরবরাহ বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে। শহরগুলোতে রাস্তাঘাট বন্ধ করে এবং বাড়িঘর ও ব্যবসা প্রতিষ্ঠান রক্ষার জন্য বালুর বস্তা ব্যবহার করা হচ্ছে।

কেন্টাকিতে রাজ্যের রাজধানী ফ্রাঙ্কফোর্ট শহর পানির নিচে তলিয়ে গেছে। স্থানীয় একটি রেস্টুরেন্টের জেনারেল ম্যানেজার ওয়েন্ডি কুইয়ার জানান, “আমার ৫২ বছরের জীবনে এমন ভয়াবহ পরিস্থিতি দেখিনি।”

কেন্টাকি নদীর পানি ক্রমাগত বাড়তে থাকায় কর্মকর্তাদের শহরটির ব্যবসা কেন্দ্রগুলোতে বিদ্যুৎ ও গ্যাস সংযোগ বন্ধ করে দিতে হয়েছে। কুইয়ার আরও বলেন, “বৃষ্টি যেন থামছেই না। একটানা কয়েক দিন ধরে চলছে।”

জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে যুক্তরাষ্ট্রে ভারী বৃষ্টিপাতের ঘটনা বাড়ছে, যার ফলে বন্যাও বাড়ছে। ক্লাইমেট সেন্ট্রালের গবেষণা অনুযায়ী, দেশটির মধ্যাঞ্চল এবং ওহাইও নদীর উপত্যকা অঞ্চল সবচেয়ে বেশি ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, কেন্টাকি, টেনেসী এবং আলাবামার মতো রাজ্যগুলোতে বন্যা কয়েক দিন পর্যন্ত স্থায়ী হতে পারে। এছাড়া, আলাবামা, জর্জিয়া ও ফ্লোরিডায় টর্নেডোরও সম্ভবনা রয়েছে।

বুধবার থেকে শুরু হওয়া ঝড়গুলোর কারণে এখন পর্যন্ত ১৮ জন মারা গেছে, যাদের মধ্যে ১০ জন টেনেসীর বাসিন্দা। কেন্টাকিতে নয় বছর বয়সী এক শিশু স্কুলের বাসে যাওয়ার সময় বন্যার পানিতে ভেসে যায়।

আরকানসাসে একটি গাছের নিচে চাপা পড়ে পাঁচ বছর বয়সী এক শিশুর মৃত্যু হয়েছে। এছাড়া, মিসৌরিতে ঝড়ে আটকে পড়া মানুষদের উদ্ধার করতে গিয়ে এক ১৬ বছর বয়সী স্বেচ্ছাসেবক দমকলকর্মীর মৃত্যু হয়েছে।

ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস (NWS) জানিয়েছে, বিভিন্ন রাজ্যের অনেক স্থানে ‘মারাত্মক বন্যা পরিস্থিতি’ সৃষ্টি হতে পারে, যার ফলে ঘরবাড়ি, রাস্তাঘাট, সেতু এবং অন্যান্য গুরুত্বপূর্ণ অবকাঠামোর ব্যাপক ক্ষতি হওয়ার আশঙ্কা রয়েছে।

যুক্তরাষ্ট্রে শনিবার ৫২১টি অভ্যন্তরীণ ও আন্তর্জাতিক ফ্লাইট বাতিল করা হয়েছে এবং ৬,৪০০টির বেশি ফ্লাইট দেরিতে ছেড়েছে। ফ্লাইটঅ্যাওয়ার.কম নামের একটি ওয়েবসাইটে রবিবার সকালে ৭৪টি ফ্লাইট বাতিল এবং ৪৭৮টি ফ্লাইট দেরিতে ছাড়ার খবর পাওয়া গেছে।

বিশেষজ্ঞরা এই ভয়াবহ আবহাওয়ার কারণ হিসেবে উষ্ণ তাপমাত্রা, অস্থির বায়ুমণ্ডল, শক্তিশালী বাতাস এবং উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে আসা প্রচুর জলীয় বাষ্পকে দায়ী করেছেন।

দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতিতে আশ্রয়কেন্দ্রগুলোতে মানুষজন আশ্রয় নিতে শুরু করেছে। টেনেসীর ডাইয়ার্সবার্গে, শনিবার এক স্কুলের কাছে আশ্রয়কেন্দ্রে কম্বল, বালিশ ও প্রয়োজনীয় জিনিসপত্র নিয়ে জড়ো হয়েছিলেন অনেকে।

তাদের মধ্যে ৭৭ বছর বয়সী জর্জ ম্যানস নামের একজন জানান, টর্নোডোর পূর্বাভাস পাওয়ার পর তিনি তার অ্যাপার্টমেন্ট থেকে আশ্রয়কেন্দ্রে চলে আসেন। কয়েক দিন আগেই এই শহরে টর্নোডোর আঘাতে কোটি কোটি টাকার ক্ষতি হয়েছিল।

আবহাওয়ার পূর্বাভাসে বলা হয়েছে, পরিস্থিতি আরও কয়েক দিন চলতে পারে।

তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *