মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী কর্তৃক ক্যারিবিয়ান সাগরে চালানো একটি হামলায় কলম্বিয়ার নাগরিকদের নিহত হওয়ার সম্ভাবনা দেখা দিয়েছে। কলম্বিয়ার প্রেসিডেন্ট গুস্তাভো পেত্রো বুধবার এ তথ্য জানিয়েছেন।
ভেনেজুয়েলার উপকূলের কাছে একটি নৌকায় চালানো ওই হামলায় কলম্বিয়ার নাগরিক নিহত হয়েছে এমন ‘কিছু ইঙ্গিত’ পাওয়া গেছে বলে তিনি জানান।
সামাজিক মাধ্যম এক্সে (সাবেক টুইটার) দেওয়া এক পোস্টে প্রেসিডেন্ট পেত্রো লেখেন, “যুদ্ধের নতুন ফ্রন্ট তৈরি হয়েছে: ক্যারিবিয়ান সাগর। ইঙ্গিত পাওয়া যাচ্ছে, সর্বশেষ বোমা হামলায় ক্ষতিগ্রস্ত নৌযানটিতে কলম্বিয়ার নাগরিকরা ছিলেন।”
তবে তিনি কিভাবে এই তথ্য পেয়েছেন সে বিষয়ে বিস্তারিত কিছু জানাননি। তিনি আরও বলেন, “আমি আশা করি, তাদের পরিবারগুলো এগিয়ে আসবে এবং বিষয়টি জানাবে।”
যুক্তরাষ্ট্র সরকার বা কলম্বিয়ার প্রতিরক্ষা মন্ত্রণালয় এ বিষয়ে তাৎক্ষণিকভাবে কোনো মন্তব্য করেনি।
এর আগে গত শুক্রবার মার্কিন প্রতিরক্ষামন্ত্রী পেট হেগসেথ এক বিবৃতিতে জানান, ভেনেজুয়েলার জলসীমায় মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত সন্দেহে একটি ছোট নৌকায় হামলা চালানো হয়েছে, এতে চারজন নিহত হয়েছে।
তবে নিহতদের পরিচয় সম্পর্কে কোনো তথ্য দেননি তিনি।
এর আগে, গত ২ সেপ্টেম্বর চালানো এক হামলায় ১১ জন নিহত হয়।
তৎকালীন মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসন জানায়, মাদক পাচারে জড়িত একটি স্পিডবোটকে লক্ষ্য করে এই হামলা চালানো হয়।
ট্রাম্প দাবি করেন, ভেনেজুয়েলার কারাগার থেকে গঠিত ‘ট্রেন দে আরাগুয়া’ নামের একটি গ্যাং এই নৌযান পরিচালনা করছিল।
চলতি বছরের শুরুতে যুক্তরাষ্ট্র এই গ্যাংটিকে সন্ত্রাসী সংগঠন হিসেবে তালিকাভুক্ত করে।
পরবর্তীতে ১৫ সেপ্টেম্বর ট্রাম্প ঘোষণা করেন, যুক্তরাষ্ট্র সরকার ভেনেজুয়েলা থেকে মাদক বহনকারী আরেকটি নৌকার ওপর হামলা চালিয়েছে, যেখানে তিনজন নিহত হয়েছে।
১৯ সেপ্টেম্বর ট্রাম্প সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে দেওয়া এক পোস্টে জানান, মাদক পাচারের সঙ্গে জড়িত একটি ‘চিহ্নিত সন্ত্রাসী সংগঠনের’ নৌযানের ওপর হামলা চালানো হয়েছে, যেখানে আরও তিনজন নিহত হয়।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এর আগে মার্কিন আইনপ্রণেতাদের বলেছিলেন, মাদক পাচারকারীদের তিনি অবৈধ যোদ্ধা হিসেবে বিবেচনা করেন এবং তাদের বিরুদ্ধে সামরিক শক্তি প্রয়োগ করা প্রয়োজন।
এদিকে, বুধবার ভেনেজুয়েলার প্রতিরক্ষামন্ত্রী ভ্লাদিমির পাদরিনো সামরিক কর্মকর্তাদের উদ্দেশ্যে বলেন, যুক্তরাষ্ট্রের সরকার সাম্প্রতিক সময়ে ক্যারিবিয়ানে চালানো এসব অভিযানের স্বপক্ষে মাদক পাচারের যে অভিযোগ এনেছে, তা মিথ্যা।
তার মতে, এর আসল উদ্দেশ্য হলো ভেনেজুয়েলায় ‘সরকার পরিবর্তন’ করা।
তিনি আরও বলেন, ভেনেজুয়েলা সরকার মার্কিন যুদ্ধজাহাজের এই উপস্থিতি নিছক ‘প্রচারমূলক’ কার্যক্রম হিসেবে দেখছে না এবং পরিস্থিতি আরও খারাপ হতে পারে বলে সতর্ক করেছেন।
পাদরিনো এক টেলিভিশন ভাষণে বলেন, “আমি জনগণকে সতর্ক করতে চাই: আমাদের প্রস্তুত থাকতে হবে, কারণ মার্কিন সাম্রাজ্য যে ধরনের অ reasonযুক্ত আচরণ করছে, তা স্বাভাবিক নয়। এটি রাজনীতি, মানবতা এবং শান্তির পরিপন্থী, রুক্ষ ও অমার্জিত।”
এই ঘটনার প্রেক্ষাপটে আন্তর্জাতিক সম্পর্ক ও বৈশ্বিক নিরাপত্তা নিয়ে আলোচনা চলছে।
বিশ্লেষকরা বলছেন, ক্যারিবিয়ান সাগরে যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক তৎপরতা আন্তর্জাতিক সম্পর্কের ক্ষেত্রে নতুন উদ্বেগের জন্ম দিয়েছে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস