ইয়েমেনের একটি কারাগারে মার্কিন বিমান হামলায় নিহত আফ্রিকান অভিবাসীদের ঘটনায় যুদ্ধাপরাধের অভিযোগ উঠেছে। মানবাধিকার সংস্থা অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনাল এই হামলার তদন্তের দাবি জানিয়েছে।
গত এপ্রিল মাসে হুতি বিদ্রোহীদের দ্বারা পরিচালিত একটি কারাগারে চালানো এই বিমান হামলায় ৬০ জনের বেশি অভিবাসী নিহত হয়।
সংস্থাটি বলছে, হামলার শিকার হওয়া ওই কারাগারে মূলত আফ্রিকার বিভিন্ন দেশ থেকে আসা অভিবাসীদের আটক করে রাখা হয়েছিল। তারা সৌদি আরবে যাওয়ার চেষ্টা করছিলেন।
যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক বাহিনী এখনো পর্যন্ত এই হামলার বিষয়ে কোনো ব্যাখ্যা দেয়নি।
অ্যামনেস্টি ইন্টারন্যাশনালের অনুসন্ধানে জানা গেছে, হামলায় নিহতদের মধ্যে বেশিরভাগই ছিলেন ইথিওপিয়ার নাগরিক। হামলার সময় তারা কারাগারে বন্দী ছিলেন।
অ্যামনেস্টির কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, ঘটনার সময় তারা কোনো হুতি যোদ্ধাকে ওই ভবনের ভেতরে দেখেননি। আন্তর্জাতিক আইন অনুযায়ী, হাসপাতাল বা কারাগারের মতো স্থানে হামলা চালানো নিষিদ্ধ।
যদি না সেখানে হামলার পরিকল্পনা করা হচ্ছে বা অস্ত্র মজুদ করা হচ্ছে এমন প্রমাণ পাওয়া যায়। সেক্ষেত্রেও বেসামরিক নাগরিকদের হতাহতের ঝুঁকি কমাতে হয়।
মার্কিন বিমান হামলার পর হুতি বিদ্রোহীরা ধ্বংসস্তূপের কিছু অংশ প্রদর্শন করে, যা সম্ভবত মার্কিন সামরিক বাহিনীর ছোড়া দুটি জিবিইউ-৩৯ ছোট আকারের বোমার অংশ ছিল।
অ্যামনেস্টির সঙ্গে কথা বলা কয়েকজন প্রত্যক্ষদর্শী জানান, হামলার আগে তারা সতর্কতামূলক গুলি চালানোর শব্দ শুনেছিলেন।
এই ঘটনার কয়েক বছর আগে, ২০২২ সালেও একই কারাগারে সৌদি নেতৃত্বাধীন জোট হামলা চালিয়েছিল। সেই হামলায় ৬৬ জন বন্দী নিহত এবং আরও ১৩ জন আহত হয়েছিল।
জাতিসংঘের একটি প্রতিবেদনেও এই তথ্য উল্লেখ করা হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই হামলা এমন এক সময়ে হয়েছে, যখন হুতি বিদ্রোহীরা লোহিত সাগরে বাণিজ্যিক জাহাজ চলাচলে বাধা দিচ্ছিল।
এর প্রতিক্রিয়ায় যুক্তরাষ্ট্র ‘অপারেশন রাফ রাইডার’ নামে একটি সামরিক অভিযান শুরু করে, যার অংশ হিসেবে ইয়েমেনে প্রায় ১,০০০ লক্ষ্যবস্তুতে আঘাত হানা হয়।
মানবাধিকার কর্মীরা বলছেন, এই অভিযানে বেসামরিক লোকজনেরও প্রাণহানি হয়েছে। বিশেষ করে, একটি তেল ডিপোতে চালানো হামলায় ৭০ জনের বেশি মানুষ নিহত হয়েছিল।
যুক্তরাজ্যভিত্তিক সংস্থা এয়ারওয়ার্স-এর তথ্যমতে, ‘অপারেশন রাফ রাইডার’-এর সময় অন্তত ২১৪ জন বেসামরিক নাগরিক নিহত হয়েছেন।
অ্যামনেস্টির কর্মকর্তারা বলছেন, নিহত অভিবাসীরা ভালো জীবনের আশায় ইথিওপিয়া থেকে এসেছিলেন, কিন্তু তাদের পরিবারকে এখন আহতদের চিকিৎসার জন্য অর্থ পাঠাতে হচ্ছে।
মানবাধিকার সংস্থাগুলোর মতে, এই ঘটনা আন্তর্জাতিক আইনের গুরুতর লঙ্ঘন। অ্যামনেস্টির পক্ষ থেকে ঘটনার সুষ্ঠু তদন্তের দাবি জানানো হয়েছে এবং ভবিষ্যতে এ ধরনের ঘটনা প্রতিরোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানানো হয়েছে।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস