মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের সিদ্ধান্তে ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের কপালে অশনি সংকেত!

মার্কিন সুপ্রিম কোর্টের এক গুরুত্বপূর্ণ সিদ্ধান্তে ভেনেজুয়েলার কয়েক লক্ষ অভিবাসীর নিজ দেশে ফেরত পাঠানোর পথ সুগম হলো। সোমবার আদালতের এই রায়ের ফলে ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নেওয়া একটি পদক্ষেপ বহাল রইল, যা অস্থায়ী সুরক্ষা মর্যাদা (Temporary Protected Status – TPS) পাওয়া ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের ওপর প্রভাব ফেলবে।

আদালতের এই সিদ্ধান্তের ফলে সান ফ্রান্সিসকোর একটি নিম্ন আদালতের আগের রায় বাতিল হয়ে গেল। নিম্ন আদালতটি ট্রাম্প প্রশাসনের অভিবাসন নীতির অংশ হিসেবে প্রায় ৩ লাখ ৪৮ হাজার ভেনেজুয়েলার নাগরিকের টিপিএস বাতিলের সিদ্ধান্তকে আটকে দিয়েছিল। টিপিএস হলো এমন একটি ব্যবস্থা, যার মাধ্যমে কোনো দেশের নাগরিকরা, বিশেষ করে যারা যুদ্ধ, প্রাকৃতিক দুর্যোগ অথবা রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে নিজ দেশে ফিরতে পারছেন না, তাদের যুক্তরাষ্ট্রে সাময়িকভাবে থাকার অনুমতি দেওয়া হয় এবং কিছু সুযোগ-সুবিধা প্রদান করা হয়।

যুক্তরাষ্ট্রের হোমল্যান্ড সিকিউরিটি বিভাগ (Department of Homeland Security – DHS) টিপিএস প্রদান করে থাকে। এই সুবিধার আওতায় থাকা ব্যক্তিরা সাধারণত দেশে ফেরত যাওয়ার ঝুঁকিমুক্ত থাকেন এবং তাদের কাজের অনুমতিও দেওয়া হয়। এমনকি, তাদের ভ্রমণ করারও সুযোগ থাকে। টিপিএস সাধারণত ৬ মাস থেকে ১৮ মাস পর্যন্ত সময়ের জন্য দেওয়া হয়, যা প্রয়োজনে বাড়ানো যেতে পারে।

ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের টিপিএস বাতিলের পক্ষে যুক্তি দিতে গিয়ে ট্রাম্প প্রশাসন কিছু অভিযোগ এনেছিল। তাদের দাবি ছিল, কিছু ভেনেজুয়েলার নাগরিক গ্যাংয়ের সঙ্গে জড়িত। যদিও, এর স্বপক্ষে কোনো প্রমাণ তারা দিতে পারেনি। বিভিন্ন মানবাধিকার সংস্থা এবং আইনজীবীরা এই সিদ্ধান্তের তীব্র প্রতিবাদ জানিয়েছেন। তাদের মতে, ভেনেজুয়েলার বর্তমান রাজনৈতিক ও অর্থনৈতিক পরিস্থিতি বিবেচনা করে এই ধরনের সুরক্ষা প্রত্যাহার করা উচিত নয়।

জাতিসংঘের তথ্য অনুযায়ী, ২০১৪ সাল থেকে অর্থনৈতিক ও রাজনৈতিক অস্থিরতার কারণে প্রায় ৮০ লক্ষ ভেনেজুয়েলার নাগরিক দেশ ছেড়েছেন। এদের মধ্যে অনেকে যুক্তরাষ্ট্রে আশ্রয় নিয়েছেন এবং টিপিএস-এর সুবিধা ভোগ করছেন। বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রে প্রায় ৬ লক্ষ ভেনেজুয়েলার নাগরিক টিপিএস-এর আওতায় রয়েছেন।

আদালতের এই সিদ্ধান্তের ফলে, বাইডেন প্রশাসনের আমলে যারা টিপিএস পেয়েছিলেন, তাদের ভবিষ্যৎ অনিশ্চিত হয়ে পড়েছে। বাইডেন প্রশাসন এই সুবিধা বাড়িয়ে বেশ কয়েকজন নাগরিককে টিপিএস দিয়েছিল। তবে ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের কারণে তাদের সুরক্ষা ঝুঁকির মুখে পড়েছে। যদিও, বাইডেন প্রশাসন টিপিএস-এর মেয়াদ অক্টোবর, ২০২৬ পর্যন্ত বাড়িয়েছিল।

আদালতের এই রায়ের বিরুদ্ধে ইতিমধ্যে অনেকেই সরব হয়েছেন। তাদের মতে, ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের ওপর চরম নির্যাতন চলছে, তাদের প্রায়ই অন্যায়ভাবে আটক করা হচ্ছে এবং বিচারবহির্ভূতভাবে হত্যা করা হচ্ছে। দেশটির জনগণের জীবনযাত্রার মান দ্রুত কমছে, বিদ্যুৎ, জল এবং চিকিৎসা সেবার মতো মৌলিক চাহিদাগুলোও দুষ্প্রাপ্য হয়ে পড়েছে। এমন পরিস্থিতিতে টিপিএস বাতিল করা মানবিকতার পরিপন্থী।

এই সিদ্ধান্তের ফলে যুক্তরাষ্ট্রে বসবাস করা ভেনেজুয়েলার নাগরিকদের মধ্যে গভীর উদ্বেগ সৃষ্টি হয়েছে। তারা এখন তাদের ভবিষ্যৎ নিয়ে শঙ্কিত।

তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *