মার্কিন শুল্ক: ইউরোপের সাথে বাণিজ্য যুদ্ধে কি ভাঙন ধরছে?

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ? বাংলাদেশের জন্য এর প্রভাব কতখানি?

যুক্তরাষ্ট্র ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (ইইউ) মধ্যে বাণিজ্যিক সম্পর্ক বিশ্বের বৃহত্তম দ্বিমুখী বাণিজ্য সম্পর্কগুলোর মধ্যে অন্যতম। কিন্তু সম্প্রতি এই সম্পর্কে ফাটল ধরার সম্ভবনা দেখা দিয়েছে।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইউরোপীয় ইউনিয়নের পণ্যগুলোর ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছেন, যা দুই পক্ষের মধ্যে বাণিজ্য যুদ্ধ শুরুর ইঙ্গিত দিচ্ছে। এই পরিস্থিতিতে, বাংলাদেশের অর্থনীতিতে এর কী প্রভাব পড়তে পারে, তা নিয়ে আলোচনা করা জরুরি।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন একটি শক্তিশালী অর্থনৈতিক জোট, যেখানে ২৭টি দেশ রয়েছে। এই জোটের সঙ্গে যুক্তরাষ্ট্রের বাণিজ্য কয়েক ট্রিলিয়ন ডলারের।

উভয় পক্ষই একে অপরের থেকে বিপুল পরিমাণ পণ্য আমদানি ও রপ্তানি করে থাকে। ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে যুক্তরাষ্ট্রে প্রধান রপ্তানি পণ্যগুলোর মধ্যে রয়েছে ওষুধ, গাড়ি, উড়োজাহাজ, রাসায়নিক দ্রব্য, চিকিৎসা সরঞ্জাম, মদ ও স্পিরিট ইত্যাদি।

অন্যদিকে, যুক্তরাষ্ট্র থেকে ইউরোপে যায় অপরিশোধিত তেল, ওষুধ, উড়োজাহাজ, গাড়ি এবং চিকিৎসা ও রোগ নির্ণয় করার সরঞ্জাম।

মার্কিন প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প এর আগে ইউরোপীয় ইউনিয়ন থেকে আমদানি করা পণ্যের ওপর শুল্ক বসানোর ইঙ্গিত দিয়েছেন। প্রথমে ২০ শতাংশ শুল্ক আরোপের প্রস্তাব করা হলেও পরে তা কমিয়ে ১০ শতাংশ করা হয়।

কিন্তু এরপর তিনি এই শুল্কের হার ৫০ শতাংশ পর্যন্ত বাড়ানোর কথা বলেছেন। এমনটা হলে ফরাসি পনির, ইতালীয় চামড়ার সামগ্রী থেকে শুরু করে জার্মান ইলেকট্রনিক্স এবং স্প্যানিশ ফার্মাসিউটিক্যালস-এর মতো বিভিন্ন পণ্যের দাম যুক্তরাষ্ট্রে বেড়ে যেতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের এমন সিদ্ধান্তের কারণ হিসেবে বাণিজ্য ঘাটতির কথা উল্লেখ করা হয়েছে। ট্রাম্প অভিযোগ করেছেন, ইউরোপীয় ইউনিয়ন তাদের থেকে বেশি পণ্য কিনে থাকে।

যদিও বাণিজ্য ঘাটতি কমাতে পরিষেবা খাতের ব্যবসা গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখে।

এই পরিস্থিতিতে ইউরোপীয় ইউনিয়নও পাল্টা ব্যবস্থা নেওয়ার প্রস্তুতি নিচ্ছে। তারা জানিয়েছে, যুক্তরাষ্ট্র যদি শুল্ক আরোপ করে, তবে তারাও তাদের দেশের বিভিন্ন পণ্যের ওপর শুল্ক বসাবে।

এই তালিকায় গরুর মাংস, গাড়ির যন্ত্রাংশ, বিয়ার এবং বোয়িং উড়োজাহাজের মতো পণ্য রয়েছে।

এখন প্রশ্ন হলো, এই বাণিজ্য যুদ্ধের ফলে বাংলাদেশের ওপর কী প্রভাব পড়বে?

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, বিশ্ব অর্থনীতির এই পরিবর্তনে বাংলাদেশের অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হতে পারে।

ইউরোপীয় ইউনিয়ন বাংলাদেশের একটি গুরুত্বপূর্ণ বাণিজ্য অংশীদার। ইউরোপে বাংলাদেশের তৈরি পোশাক (আরএমজি) রপ্তানি হয়।

যদি এই বাণিজ্য যুদ্ধ দীর্ঘায়িত হয়, তাহলে ইউরোপীয় ইউনিয়নের দেশগুলোতে মার্কিন পণ্যের দাম বাড়লে, সেখানকার ভোক্তারা বিকল্প হিসেবে বাংলাদেশের পণ্য বেছে নিতে পারে।

ফলে বাংলাদেশের রপ্তানি কিছুটা বাড়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

তবে, বাণিজ্য শুল্ক বাড়লে বিশ্বজুড়ে পণ্যের দাম বাড়বে, যা বাংলাদেশের বাজারেও প্রভাব ফেলতে পারে।

এর ফলে আমদানি করা পণ্যের দাম বাড়লে, তা দেশের অর্থনীতিতে মূল্যস্ফীতি বাড়াতে পারে এবং ভোক্তাদের ওপর চাপ সৃষ্টি করতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের সতর্ক থাকতে হবে। বাণিজ্য যুদ্ধের কারণে উদ্ভূত পরিস্থিতি মোকাবিলায় প্রস্তুতি নেওয়া এবং বিকল্প বাজার অনুসন্ধান করা জরুরি।

একই সঙ্গে, দেশের অর্থনীতিকে স্থিতিশীল রাখতে অভ্যন্তরীণ বাজারকে শক্তিশালী করার দিকেও মনোযোগ দিতে হবে।

সবচেয়ে গুরুত্বপূর্ণ হলো, পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করা এবং দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া।

কারণ বিশ্ব অর্থনীতির এই অস্থিরতা বাংলাদেশের জন্য সুযোগ এবং ঝুঁকি দুটোই নিয়ে আসতে পারে।

তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *