মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের কংগ্রেসে একটি গুরুত্বপূর্ণ কর ও ব্যয়ের বিল পাশ হয়েছে, যা দেশটির অর্থনীতিতে বড় ধরনের প্রভাব ফেলতে পারে। রিপাবলিকান নিয়ন্ত্রিত প্রতিনিধি পরিষদে এই বিলটি সামান্য ভোটের ব্যবধানে জয়লাভ করে।
এটিকে সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের নীতিমালার একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ হিসেবে দেখা হচ্ছে।
বিলটি অনুযায়ী, করের হার কমানো হবে এবং সামরিক খাতে ও সীমান্ত সুরক্ষায় ব্যয় বৃদ্ধি করা হবে। তবে এর ফলে আগামী এক দশকে যুক্তরাষ্ট্রের ফেডারেল সরকারের ঋণের পরিমাণ প্রায় ৩.৮ ট্রিলিয়ন ডলার বৃদ্ধি পাওয়ার আশঙ্কা করা হচ্ছে।
বর্তমানে যুক্তরাষ্ট্রের মোট ঋণের পরিমাণ ৩৬.২ ট্রিলিয়ন ডলার।
এই বিলটি নিয়ে বিতর্কের মূল কারণ হলো, এটি একদিকে যেমন ট্রাম্পের নির্বাচনী প্রতিশ্রুতি পূরণ করবে, তেমনিভাবে দেশের ঋণের বোঝা আরও বাড়াবে। বিলটি পাশ হওয়ার পক্ষে ছিল ২১৫ ভোট, বিপক্ষে ছিল ২১৪ ভোট।
ডেমোক্র্যাট দলের সকল সদস্য এবং দুইজন রিপাবলিকান সদস্যের বিরোধিতার মুখে এটি পাস হয়। একজন রিপাবলিকান সদস্য ভোটদানে বিরত ছিলেন, এছাড়া আরেকজন সদস্য ঘুমিয়ে থাকার কারণে ভোট দিতে পারেননি।
বর্তমানে এই বিলটি সিনেটে যাওয়ার পথে রয়েছে, যেখানে এটি আরও পরিবর্তনের সম্ভাবনা রয়েছে। বিলটিতে ২০১৭ সালের কর হ্রাসের মেয়াদ বাড়ানো, জলবায়ু পরিবর্তন রোধে নেওয়া পদক্ষেপগুলো বাতিল করা এবং দরিদ্রদের জন্য স্বাস্থ্য ও খাদ্য কর্মসূচির সুবিধা কমানোর প্রস্তাব রয়েছে।
এছাড়া, অভিবাসন বিরোধী পদক্ষেপ জোরদার করতে সীমান্তরক্ষীর সংখ্যা বাড়ানো এবং প্রতি বছর প্রায় ১০ লক্ষ অভিবাসীকে ফেরত পাঠানোরও পরিকল্পনা রয়েছে।
এই বিল নিয়ে উদ্বেগের কারণ হলো, যুক্তরাষ্ট্রের ঋণ জিডিপি’র ১২৪ শতাংশে পৌঁছে গেছে। এর ফলে, গত সপ্তাহে মুডি’স নামক একটি সংস্থা দেশটির ক্রেডিট রেটিং কমিয়েছে।
বিশ্লেষকদের মতে, এই বিলের কারণে দেশের ঋণ আরও বাড়বে। এমনকি এই বিল পাশ না হলে অনেক আমেরিকানের জন্য কার্যত করের বোঝা বেড়ে যেতে পারে, কারণ ট্রাম্পের কর হ্রাসের মেয়াদ শেষ হতে চলেছে।
বিলটি নিয়ে বিতর্ক থাকলেও, রিপাবলিকানরা মনে করেন, এটি পাশ হওয়া জরুরি। কারণ, এর মাধ্যমে ফেডারেল সরকারের ঋণ গ্রহণের সীমা ৪ ট্রিলিয়ন ডলার পর্যন্ত বাড়ানো যাবে।
এছাড়া, এই বিল দরিদ্র জনগোষ্ঠীর ওপর কেমন প্রভাব ফেলবে, তা নিয়েও আলোচনা চলছে। বিলটিতে মেডিকেড স্বাস্থ্য কর্মসূচিতে দরিদ্রদের জন্য সুবিধা কমানোর প্রস্তাব রয়েছে।
এই বিলের ফলে যারা ধনী, তাদের সুবিধা বেশি হবে বলে অভিযোগ উঠেছে। ডেমোক্র্যাট আইনপ্রণেতা জিম ম্যাকগভর্ন বিলটিকে ‘প্রতারণা’ হিসেবে উল্লেখ করেছেন।
তিনি বলেন, এই বিলটি সাধারণ মানুষের কাছ থেকে অর্থ কেড়ে নিয়ে ট্রাম্পের বন্ধু মিলিয়নেয়ার ও বিলিয়নেয়ারদের দেবে।
শেয়ার বাজারের বিনিয়োগকারীরাও যুক্তরাষ্ট্রের আর্থিক অবস্থা এবং ট্রাম্পের বাণিজ্য নীতি নিয়ে উদ্বিগ্ন। এই বিলের প্রেক্ষাপটে ডলার এবং অন্যান্য মার্কিন সম্পদ বিক্রি হচ্ছে।
জেপি মরগান চেজের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা জ্যামি ডিমন বিলটি নিয়ে মিশ্র প্রতিক্রিয়া ব্যক্ত করেছেন। তিনি বলেন, ‘আমার মনে হয় তাদের এই কর বিলটি করা উচিত।
এটি পরিস্থিতিকে স্থিতিশীল করতে সাহায্য করবে, তবে সম্ভবত এটি ঘাটতি বাড়াবে।’
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা