নতুন দিগন্তে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা: চীনকে টেক্কা দিতে যুক্তরাষ্ট্রের প্রস্তুতি
যুক্তরাষ্ট্রে কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তা (Artificial Intelligence – AI) প্রযুক্তির ভবিষ্যৎ নিয়ে আলোচনা করতে সিনেটের শুনানিতে হাজির হয়েছিলেন প্রযুক্তি খাতের শীর্ষস্থানীয় ব্যক্তিরা। ওপেনএআই (OpenAI)-এর প্রধান নির্বাহী স্যাম অল্টম্যান, মাইক্রোসফটের প্রতিনিধি এবং চিপ নির্মাতা এএমডি’র (AMD) শীর্ষ কর্মকর্তারা এই শুনানিতে অংশ নেন।
তাঁদের মূল বক্তব্য ছিল, এই গুরুত্বপূর্ণ প্রযুক্তিখাতে চীনকে (China) টেক্কা দিতে যুক্তরাষ্ট্রের করণীয় কী এবং এর সম্ভাবনা ও ঝুঁকিগুলো কেমন।
বৈঠকে বক্তারা কৃত্রিম বুদ্ধিমত্তার ব্যাপক সম্ভাবনা নিয়ে কথা বলেন। স্যাম অল্টম্যান একে ‘ইন্টারনেটের থেকেও বড়’ হিসেবে অভিহিত করেন এবং এর বিকাশে অবকাঠামো বিনিয়োগের উপর জোর দেন। তাঁর মতে, এআই এবং নবায়নযোগ্য জ্বালানির যুগান্তকারী পরিবর্তন বিশ্বকে ইতিবাচক দিকে নিয়ে যাবে।
শুনানিতে অংশগ্রহণকারীরা নীতিগত বিষয়গুলো সহজ করার জন্য আইনপ্রণেতাদের প্রতি আহ্বান জানান। তাঁরা বিশেষ করে এআই সম্পর্কিত প্রকল্পগুলোতে অর্থায়ন এবং নিয়ন্ত্রক কাঠামো সহজ করার কথা বলেন। একই সঙ্গে, চীন ও ইউরোপীয় ইউনিয়নের (European Union) সঙ্গে বিশ্বজুড়ে চলা এই প্রযুক্তিগত প্রতিযোগিতার বিষয়েও আলোচনা হয়।
আলোচনায় উঠে আসে, চীন ২০৩০ সালের মধ্যে এআই-তে বিশ্বনেতা হওয়ার লক্ষ্য নিয়ে কাজ করছে। এই পরিস্থিতিতে, যুক্তরাষ্ট্রের সামনে দুটি পথ খোলা আছে: উদ্ভাবন ও উদ্যোক্তা মনোভাবে উৎসাহিত করা, নাকি ইউরোপের মতো নিয়ন্ত্রিত ব্যবস্থা গ্রহণ করা।
উভয় দলের আইনপ্রণেতারা এআই-এর নিরাপত্তা, তথ্যের গোপনীয়তা এবং ভুল তথ্য তৈরির ক্ষমতা নিয়ে উদ্বেগ প্রকাশ করেন। তবে, কিছু বিষয়ে ভিন্নমতও দেখা যায়।
উদাহরণস্বরূপ, একজন রিপাবলিকান সিনেটর জানতে চান, বাইডেন প্রশাসনের পরিবেশবান্ধব জ্বালানি নীতি এআই-এর জন্য প্রয়োজনীয় বিদ্যুতের উৎপাদনকে বাধাগ্রস্ত করছে কিনা। অন্যদিকে, ডেমোক্রেটিক পার্টির একজন সিনেটর, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প এবং ইলন মাস্কের (Elon Musk) ফেডারেল গবেষণা তহবিলে কাটছাঁটকে সমালোচনা করেন।
প্রযুক্তিবিদরা সতর্ক করে বলেন, রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের কারণে অন্যান্য দেশ চীনের এআই প্রযুক্তির দিকে ঝুঁকতে পারে। এএমডি’র প্রধান নির্বাহী লিসা সু (Lisa Su) জানান, জাতীয় নিরাপত্তার গুরুত্ব তাঁরা বোঝেন, তবে তাঁদের প্রযুক্তি যদি বিশ্বজুড়ে ব্যবহৃত না হয়, তবে অন্য প্রযুক্তিগুলো জায়গা করে নেবে।
এই আলোচনায় বাণিজ্য নীতিও গুরুত্বপূর্ণ ছিল। স্যাম অল্টম্যানের মতে, বিশ্বজুড়ে যুক্তরাষ্ট্রের তৈরি প্রযুক্তি, যেমন আইফোন (iPhone) ও গুগল (Google) -এর জনপ্রিয়তা দেশটির জন্য বিশাল সুবিধা নিয়ে আসে। তাঁর মতে, এই প্রযুক্তিগুলোর পাশাপাশি চিপ এবং অন্যান্য অবকাঠামোও বিশ্বে ব্যাপকভাবে ব্যবহৃত হওয়া উচিত।
যুক্তরাষ্ট্র ও চীনের মধ্যেকার বাণিজ্য যুদ্ধ এআই শিল্পকে প্রভাবিত করছে। এর ফলস্বরূপ, কিছু মার্কিন চিপ প্রস্তুতকারক, যেমন এনভিদিয়া (Nvidia) এবং এএমডি, রপ্তানি নিয়ন্ত্রণের কারণে ক্ষতির সম্মুখীন হচ্ছে।
এপ্রিল মাসে ট্রাম্প প্রশাসন এনভিদিয়ার এইচ20 চিপস এবং এএমডি’র এমআই308 চিপস চীনে (China) বিক্রির উপর বিধিনিষেধ আরোপ করে। এনভিদিয়ার হিসাবে, এই নিয়ন্ত্রণের কারণে তাদের ৫.৫ বিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষতি হবে। এএমডি’রও ১.৫ বিলিয়ন ডলার ক্ষতির আশঙ্কা রয়েছে।
অন্যদিকে, এআই ডেটা সেন্টার (Data Center) সম্প্রসারণ নিয়েও আলোচনা হয়। টেক্সাসের অ্যাবিলিনে (Abilene) ওপেনএআই-এর জন্য বিশাল ডেটা সেন্টার তৈরি করা হচ্ছে, যেখানে ওরাকল (Oracle) ও অন্যান্য সহযোগী প্রতিষ্ঠান কাজ করছে।
এই ডেটা সেন্টারটি সম্ভবত বিশ্বের বৃহত্তম এআই প্রশিক্ষণ কেন্দ্র হবে। তবে, অল্টম্যান এআই-এর জন্য বিভিন্ন রাজ্যের আলাদা আলাদা নিয়ন্ত্রক কাঠামোর বিষয়ে সতর্ক করেন।
যুক্তরাষ্ট্রের জ্বালানি বিভাগ (Department of Energy) এর একটি প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, গত এক দশকে ডেটা সেন্টারের বিদ্যুতের চাহিদা তিনগুণ বেড়েছে এবং ২০২৮ সাল নাগাদ তা আরও বাড়তে পারে, যা দেশের মোট বিদ্যুতের প্রায় ১২ শতাংশ পর্যন্ত হতে পারে।
তথ্য সূত্র: এসোসিয়েটেড প্রেস (Associated Press)।