আতঙ্কের ঝড়! আমেরিকায় টর্নেডোর ধ্বংসলীলা, নিহত ১!

যুক্তরাষ্ট্রের মধ্য ও পশ্চিমাঞ্চলে শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড় আঘাত হেনেছে, যার ফলে অন্তত একজনের মৃত্যু হয়েছে এবং ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। এই ঝড়ে টর্নেডো ও তীব্র ঝড়ের সৃষ্টি হয়, যা বিদ্যুতের খুঁটি ও গাছ উপড়ে ফেলেছে এবং ঘরবাড়ির ছাদ ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে।

আবহাওয়াবিদরা জানিয়েছেন, দিনের বেলা তাপমাত্রা বৃদ্ধি এবং অস্থির আবহাওয়ার কারণে এই দুর্যোগপূর্ণ পরিস্থিতি তৈরি হয়েছে। এর সঙ্গে ছিল শক্তিশালী বায়ুপ্রবাহ এবং উপসাগরীয় অঞ্চল থেকে প্রচুর জলীয় বাষ্পের আগমন। বুধবার রাতে আরকানসাস, ইলিনয়, ইন্ডিয়ানা, মিসৌরি ও মিসিসিপির কিছু অংশে ঘূর্ণিঝড়ের সতর্কতা জারি করা হয়েছিল।

মিসৌরির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চলে একজন নিহত হয়েছেন বলে জানা গেছে। ইন্ডিয়ানাপোলিসের একটি শহরতলীতে একটি গুদামঘরের অংশ ভেঙে পড়লে সেখানে একজন আটকা পড়েন। এছাড়া, উত্তর-পূর্ব আরকানসাসে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল। সেখানকার আকাশে ধ্বংসাবশেষ কয়েক হাজার ফুট পর্যন্ত উড়ে যায়।

আবহাওয়া দপ্তর জানিয়েছে, আগামী দিনগুলোতে এই অঞ্চলে মারাত্মক বন্যা দেখা দিতে পারে। বৃহস্পতিবার থেকে শনিবার পর্যন্ত “জীবন-হুমকি সৃষ্টিকারী বন্যা” হতে পারে। আগামী চার দিনে ৩০ সেন্টিমিটারের বেশি বৃষ্টি হতে পারে, যা “কয়েক প্রজন্মের মধ্যে একবার” অথবা “জীবনে একবার” ঘটে এমন ঘটনা। এতে “ঐতিহাসিক বৃষ্টিপাত” হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।

ওকলাহোমাভিত্তিক স্টর্ম প্রেডিকশন সেন্টার-এর তথ্য অনুযায়ী, টেক্সাস থেকে শুরু করে মিনেসোটা এবং মেইন পর্যন্ত বিস্তৃত বিশাল অঞ্চলের প্রায় ৯০ মিলিয়নের বেশি মানুষ দুর্যোগের ঝুঁকিতে রয়েছে।

বুধবার সন্ধ্যায় আরকানসাসের ব্ল্যাকভিল এলাকার আশেপাশে জরুরি অবস্থা ঘোষণা করা হয়েছিল। আবহাওয়াবিদ চেলি আমিন জানিয়েছেন, “ভোরবেলায় ওই এলাকাগুলোতে পরিস্থিতি খুবই খারাপ হবে।

আরকানসাসের হ্যারিসবার্গের কাছেও একটি টর্নেডোর খবর পাওয়া গেছে। আরকানসাস বিভাগীয় জরুরি ব্যবস্থাপনা জানিয়েছে, টর্নেডো, ঘূর্ণিঝড়, শিলাবৃষ্টি এবং আকস্মিক বন্যায় ২২টি কাউন্টিতে ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে। বুধবার সন্ধ্যা পর্যন্ত হতাহতের কোনো খবর পাওয়া যায়নি।

কেন্টাকিতে একটি টর্নেডো লুইসভিলের একটি শহরতলীতে আঘাত হানে। ইন্ডিয়ানার ব্রাউনসবার্গে একটি গুদামঘরের অংশ ভেঙে পড়েছে। লোয়েলের কাছে পাঁচটি সেমি-ট্রাক উল্টে যায়। মিসৌরির পাইলট গ্রোভে বেশ কয়েকটি কাঠামো ক্ষতিগ্রস্ত হয়েছে, গাড়ি উল্টে গেছে এবং বিদ্যুতের খুঁটি ভেঙে পড়েছে।

বিদ্যুৎ বিভ্রাটের কারণে আরকানসাস, মিসিসিপি, মিসৌরি, ইলিনয়, কেনটাকি ও টেনেসির প্রায় ৯০ হাজার গ্রাহক বিদ্যুৎহীন হয়ে পড়েন। ইন্ডিয়ানাতে ঝড়ের কারণে ১ লাখ ৮২ হাজারের বেশি গ্রাহক বিদ্যুৎ সংযোগ বিচ্ছিন্ন হয়ে পড়েন।

মেমফিসসহ পশ্চিম টেনেসির কিছু অংশ, উত্তর-পূর্ব আরকানসাস, মিসৌরির দক্ষিণ-পূর্বাঞ্চল এবং পশ্চিম কেনটাকি ও দক্ষিণ ইলিনয়ের কিছু অংশে প্রায় ২৫ লক্ষাধিক মানুষ “উচ্চ ঝুঁকিপূর্ণ” অঞ্চলে বসবাস করে।

বৃষ্টির কারণে রাস্তাঘাট জলমগ্ন হয়ে পড়ায় ইন্ডিয়ানাপলিসের একটি রাস্তায় পানি কয়েকটি গাড়ির জানালা পর্যন্ত উঠে গিয়েছিল। টেক্সাস, মিসিসিপি উপত্যকা এবং ওহাইও উপত্যকার কিছু অংশে ভারী বৃষ্টিপাতের পূর্বাভাস দেওয়া হয়েছে। আবহাওয়াবিদরা সতর্ক করেছেন যে, একই অঞ্চলে বারবার বৃষ্টি হতে পারে, যার ফলে মারাত্মক বন্যা হতে পারে এবং গাড়ি ভেসে যেতে পারে।

তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *