মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে টর্নেডোর সংখ্যা বৃদ্ধি, আবহাওয়া অফিসের কর্মীর অভাব : দুর্যোগ ব্যবস্থাপনায় সতর্কবার্তা।
যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে সম্প্রতি টর্নেডোর সংখ্যা উদ্বেগজনক হারে বেড়ে যাওয়ায় সেখানকার আবহাওয়া দপ্তর এক সংকটপূর্ণ পরিস্থিতির সম্মুখীন হয়েছে। একই সময়ে, কর্মী সংকটের কারণে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়ার পূর্বাভাস প্রদানেও সমস্যা হচ্ছে।
আবহাওয়া অফিসের কর্মকর্তাদের মতে, এই পরিস্থিতিতে জনগণের নিরাপত্তা বিঘ্নিত হওয়ার আশঙ্কা বাড়ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস (NWS) এর তথ্য অনুযায়ী, চলতি বছরে টর্নেডোর সংখ্যা স্বাভাবিকের তুলনায় প্রায় ৩৫ শতাংশ বেশি। কানসাস, কেনটাকি, মিসৌরি, আরকানসাস, ওকলাহোমা এবং টেক্সাসের মতো রাজ্যগুলোতে প্রায়ই শক্তিশালী টর্নেডোর আঘাত হানছে।
এর ফলে ব্যাপক ক্ষয়ক্ষতি হয়েছে এবং বহু মানুষ হতাহত হয়েছে। স্থানীয় সূত্রে জানা গেছে, শুধু কেনটাকি রাজ্যে সাম্প্রতিক ঘূর্ণিঝড়ে প্রায় ২০ জনের বেশি মানুষের মৃত্যু হয়েছে।
আবহাওয়া অফিসের কর্মীরা বলছেন, কর্মী সংকটের কারণে পূর্বাভাস তৈরি এবং দুর্যোগের সময় দ্রুত পদক্ষেপ নেওয়া কঠিন হয়ে পড়েছে। বিশেষ করে, কিছু অফিসের কর্মীর সংখ্যা এতটাই কমে গেছে যে জরুরি পরিস্থিতিতে কাজ করা কষ্টকর হয়ে দাঁড়াচ্ছে।
উদাহরণস্বরূপ, কেনটাকির জ্যাকসন অফিসের প্রায় ২৫ শতাংশ পদ শূন্য রয়েছে। এছাড়া, লুইভিলে ২৯ শতাংশ এবং উইচিটা অফিসে ৩২ শতাংশ কর্মী পদ শূন্য রয়েছে।
এমন পরিস্থিতিতে, দুর্যোগের পূর্বাভাস দিতে এবং জনগণের কাছে দ্রুত তথ্য পৌঁছে দিতে সমস্যা হচ্ছে।
আবহাওয়াবিদ এবং প্রাক্তন সরকারি কর্মকর্তারা মনে করেন, জলবায়ু পরিবর্তনের কারণে টর্নেডোর সংখ্যা এবং তীব্রতা উভয়ই বাড়ছে।
তারা বলছেন, উষ্ণ উপসাগরীয় অঞ্চলের আর্দ্রতা বেড়ে যাওয়ায় শক্তিশালী ঘূর্ণিঝড়ের সম্ভাবনা বাড়ছে, যা একটি উদ্বেগের বিষয়।
আগে যেখানে টর্নেডো দেখা যেত না, এখন শীতকালে, বিশেষ করে জানুয়ারি, ফেব্রুয়ারি ও মার্চ মাসেও আলাবামা, জর্জিয়া, মিসিসিপি এবং টেনেসির মতো রাজ্যে টর্নেডো দেখা যাচ্ছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন, প্রযুক্তিগত উন্নতির ফলে টর্নেডো সম্পর্কে পূর্বাভাস দেওয়ার প্রক্রিয়া সহজ হয়েছে, তবে পর্যাপ্ত কর্মী না থাকলে পূর্বাভাস দেওয়া কঠিন হয়ে পড়ে।
তাঁরা আরো যোগ করেন, আবহাওয়ার পূর্বাভাস তৈরি এবং দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার জন্য দক্ষ কর্মীর পাশাপাশি পর্যাপ্ত বাজেট ও উন্নত প্রযুক্তির প্রয়োজন।
বাংলাদেশের জন্য এই পরিস্থিতি একটি গুরুত্বপূর্ণ সতর্কবার্তা। আমাদের দেশেও ঘূর্ণিঝড় ও বন্যার মতো প্রাকৃতিক দুর্যোগের ঝুঁকি রয়েছে।
তাই, দুর্যোগ ব্যবস্থাপনার ক্ষেত্রে আবহাওয়া অফিসের সক্ষমতা বৃদ্ধি করা এবং পূর্বাভাস ব্যবস্থার উন্নতি করা জরুরি। একইসঙ্গে, জনগণের মধ্যে সচেতনতা তৈরি এবং দুর্যোগ মোকাবিলার জন্য প্রস্তুতি নেওয়া প্রয়োজন।
তথ্য সূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস