আতঙ্কে যুক্তরাষ্ট্র ভ্রমণ! সীমান্তে আটকের শিকার, কমছে পর্যটকের সংখ্যা

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে পর্যটন শিল্পে ধস নামার আশঙ্কা, অভিবাসন নীতির কড়াকড়িতে উদ্বিগ্ন ভ্রমণকারীরা। যুক্তরাষ্ট্রে অভিবাসন নীতি কঠোর হওয়ায় পর্যটন শিল্পে বড় ধরনের মন্দা দেখা দিতে পারে বলে আশঙ্কা করা হচ্ছে।

সম্প্রতি বিভিন্ন দেশের পর্যটকদের আটকের ঘটনা এই উদ্বেগকে আরও বাড়িয়ে তুলেছে। পর্যটন বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এর ফলে পর্যটকদের সংখ্যা উল্লেখযোগ্য হারে কমতে শুরু করেছে।

বিভিন্ন সূত্রে জানা গেছে, সম্প্রতি মার্কিন সীমান্তে অনেক পশ্চিমা পর্যটকদের আটক করা হয়েছে। তাদের আটক করার কারণগুলোও সুস্পষ্ট নয়। এমনকি অনেক ক্ষেত্রে সামান্য অজুহাতে তাদের আটক করে ডিটেনশন সেন্টারে দীর্ঘদিন আটকে রাখা হয়েছে।

এই পরিস্থিতিতে জার্মানি তার নাগরিকদের জন্য ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে। জার্মানির পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন আইন ভাঙলে শুধু ফেরত পাঠানোই নয়, গ্রেপ্তার অথবা আটকও করা হতে পারে।

এর আগে কোনো অপরাধ না করেও তিনজন জার্মান নাগরিককে দীর্ঘ সময় আটক করে রাখা হয়েছিল। এদের মধ্যে একজন মার্কিন গ্রিন কার্ডধারীও ছিলেন, যিনি বোস্টনের লোগান বিমানবন্দরে আটকা পড়েন।

একই রকমভাবে, যুক্তরাজ্যের পররাষ্ট্র দপ্তরও তাদের নাগরিকদের জন্য ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে। তারা সতর্ক করে বলেছে, যুক্তরাষ্ট্রে ভ্রমণের সময় আটকের ঝুঁকি রয়েছে।

জানা গেছে, যুক্তরাজ্যের নাগরিক বেকি বার্ক নামের এক পর্যটককে কানাডা সীমান্ত থেকে আটক করে তিন সপ্তাহ ডিটেনশন সেন্টারে রাখা হয়েছিল। শুধু তাই নয়, গত সপ্তাহে ব্রিটিশ একটি পাঙ্ক ব্যান্ড ইউকে সাবস-এর সদস্যদেরও লস অ্যাঞ্জেলেস আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে নামার পর আটকে দেওয়া হয়।

পর্যটন বিষয়ক গবেষণা সংস্থা ‘ট্যুরিজম ইকোনমিকস’-এর পূর্বাভাস অনুযায়ী, চলতি বছর যুক্তরাষ্ট্রে পর্যটকদের সংখ্যা ৫ শতাংশ বাড়ার পরিবর্তে ৯ শতাংশ পর্যন্ত কমে যেতে পারে। তারা বলছে, ট্রাম্প প্রশাসনের বিতর্কিত নীতি এবং শুল্ক আরোপের সিদ্ধান্তের কারণেই এমনটা হতে পারে।

এই পরিস্থিতিতে পর্যটন খাতে ৬৪ বিলিয়ন ডলারের বেশি ক্ষতির আশঙ্কা করা হচ্ছে। ট্যুরিজম ইকোনমিকসের প্রেসিডেন্ট অ্যাডাম স্যাকস ওয়াশিংটন পোস্টকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, “পর্যটকদের বিষয়ে আমাদের ধারণা একেবারে বদলে গেছে।

শুল্কের পাশাপাশি যুক্তরাষ্ট্রের অভিবাসন নীতি এবং কর্মকর্তাদের খারাপ আচরণের কারণে অর্থনীতির গতি কমে যাওয়ার আশঙ্কা তৈরি হয়েছে।” আশঙ্কা করা হচ্ছে, সবচেয়ে বেশি পর্যটক কমবে কানাডা থেকে।

কারণ, ট্রাম্প প্রশাসন কানাডার ওপর শুল্ক আরোপের হুমকি দিয়েছে এবং দেশটির কিছু অংশ নিজেদের সঙ্গে যুক্ত করারও ইঙ্গিত দিয়েছে। কানাডার সরকারি পরিসংখ্যান অনুযায়ী, ফেব্রুয়ারিতে সীমান্ত পথে যুক্তরাষ্ট্র থেকে কানাডায় ফেরা মানুষের সংখ্যা আগের বছরের তুলনায় ২৩ শতাংশ কমেছে।

একই সময়ে আকাশপথে যাত্রী কমেছে ১৩ শতাংশ। সম্প্রতি, একজন কানাডিয়ান অভিনেত্রীও অভিযোগ করেছেন যে, মার্কিন কর্তৃপক্ষ তাকে হাতকড়া পরিয়ে ডিটেনশন সেন্টারে নিয়ে যায় এবং সেখানে তাকে “অমানবিক পরিস্থিতিতে” কয়েক সপ্তাহ কাটাতে হয়েছে।

অথচ তার বিরুদ্ধে কোনো অভিযোগ ছিল না। অক্সফোর্ড ইউনিভার্সিটির উদ্যোক্তা বিষয়ক বিশেষজ্ঞ নেরি কাররা সিল্লাম্যান ফাস্ট কোম্পানিকে বলেছেন, এখন ভ্রমণকারীরা যুক্তরাষ্ট্রকে একটি “অত্যন্ত কঠিন এবং অপ্রত্যাশিত গন্তব্য” হিসেবে দেখছেন।

তিনি আরও বলেন, “ভিসা পেলেও সেখানে আটকের ঝুঁকি থাকে।” এমনকি তিনি নিজে, যিনি একজন মার্কিন নাগরিককে বিয়ে করেছেন এবং বৈধ ভিসা থাকা সত্ত্বেও, বর্তমান পরিস্থিতিতে যুক্তরাষ্ট্রে যেতে দ্বিধা বোধ করছেন।

ডেনমার্ক ও ফিনল্যান্ডও তাদের ট্রান্সজেন্ডার নাগরিকদের জন্য ভ্রমণ সতর্কতা জারি করেছে। ট্রাম্প প্রশাসনের নির্দেশে মার্কিন পররাষ্ট্র দপ্তর শুধুমাত্র দুটি লিঙ্গকে স্বীকৃতি দেওয়ার সিদ্ধান্ত নেওয়ার পরই এই সতর্কতা জারি করা হয়।

ডেনমার্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানিয়েছে, পাসপোর্ট-এ যাদের লিঙ্গ পরিচয়ের স্থানে ‘X’ লেখা রয়েছে, তাদের যুক্তরাষ্ট্রে যাওয়ার আগে দূতাবাসের সঙ্গে যোগাযোগ করতে হবে। ফিনল্যান্ড সতর্ক করে বলেছে, যাদের লিঙ্গ পরিবর্তন হয়েছে, তাদের যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে সমস্যা হতে পারে।

যুক্তরাষ্ট্রের এমন পদক্ষেপগুলো বিশেষভাবে উদ্বেগের কারণ, কারণ এর শিকার হচ্ছেন যুক্তরাষ্ট্রের মিত্র দেশগুলোর নাগরিকরাও। যদিও সম্প্রতি ভারত ও মধ্যপ্রাচ্যের অনেক শিক্ষার্থী ও অ্যাকাডেমিশিয়ানকেও বৈধ ভিসা থাকা সত্ত্বেও আটক করা হয়েছে।

অনেক অঞ্চলের মানুষের জন্য যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করা কঠিন হলেও, সাধারণত মিত্র দেশগুলোর ভ্রমণকারীদের প্রতি অভিবাসন কর্মকর্তাদের নমনীয় মনোভাব দেখা যায়। আমেরিকান ফ্রেন্ডস সার্ভিস কমিটির পরিচালক পেদ্রো রিওস এপিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে বলেছেন, তিনি গত ২২ বছর ধরে দক্ষিণ সীমান্তে কাজ করছেন।

তার অভিজ্ঞতা অনুযায়ী, পশ্চিমা ইউরোপ ও কানাডার নাগরিকদের এত ঘন ঘন আটকের ঘটনা আগে কখনো ঘটেনি। তিনি বলেন, “এসব ঘটনার সঙ্গে সঙ্গতিপূর্ণ কোনো কারণ খুঁজে পাওয়া যাচ্ছে না।

আমার মনে হয়, এর মূল কারণ হলো অভিবাসন বিরোধী মনোভাব বৃদ্ধি।” তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *