মার্কিন সীমান্ত অঞ্চলে অভিবাসী আটকের দায়িত্বে সেনা, বাড়ছে বিতর্ক। যুক্তরাষ্ট্রের দক্ষিণাঞ্চলে মেক্সিকো সীমান্ত বরাবর অবস্থিত কিছু এলাকায় অভিবাসীদের আটকের কাজে সরাসরি যুক্ত হয়েছে দেশটির সামরিক বাহিনী।
সম্প্রতি ঘোষিত সামরিক নিরাপত্তা অঞ্চলে অনুপ্রবেশের অভিযোগে তাদের আটক করা হচ্ছে। এই পদক্ষেপ সামরিক বাহিনীর ক্ষমতা বিস্তারেরই নামান্তর, এমনটাই মনে করছেন বিশেষজ্ঞরা।
মার্কিন সেনাবাহিনীর লেফটেন্যান্ট কর্নেল চ্যাড ক্যাম্পবেল বিস্তারিতভাবে জানান, গত সপ্তাহে নিউ মেক্সিকোর সান্তা টেরেসা এলাকার কাছে সামরিক নিরাপত্তা অঞ্চলে অনুপ্রবেশের দায়ে তিনজন অভিবাসীকে প্রথম আটক করা হয়।
আটককৃতদের দ্রুত সীমান্ত সুরক্ষা সংস্থা ইউএস কাস্টমস অ্যান্ড বর্ডার প্রোটেকশনের (US Customs and Border Protection) হাতে তুলে দেওয়া হয়। জানা গেছে, ডোনাল্ড ট্রাম্প প্রশাসনের নতুন সীমান্ত নিরাপত্তা নীতির আওতায়, এ পর্যন্ত ১,৪০০ জনের বেশি অভিবাসীর বিরুদ্ধে সামরিকীকৃত এলাকাগুলোতে অবৈধভাবে প্রবেশের অভিযোগ আনা হয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের ‘পসে কমিট্যাটাস অ্যাক্ট’-এর (Posse Comitatus Act) কারণে সৈন্যদের সাধারণত বেসামরিক আইন প্রয়োগের ক্ষমতা নেই। তবে কিছু বিশেষ পরিস্থিতিতে ‘সামরিক উদ্দেশ্যে’ (military purpose doctrine) এই বিধিনিষেধ শিথিল করা হয়।
কর্নেল ক্যাম্পবেল বলেন, “আমরা দেখেছি, তিনজন ব্যক্তি সীমান্ত নিরাপত্তা বেড়া অতিক্রম করে যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করছে। এরপর প্রতিরক্ষা বিভাগের সদস্যরা তাদের থামিয়ে বসতে বলে। মাত্র তিন মিনিটের মধ্যেই সীমান্তরক্ষী বাহিনী এসে তাদের আটক করে।”
ট্রাম্প প্রশাসনের এই সিদ্ধান্তের ফলে, নিউ মেক্সিকো এবং টেক্সাসের পশ্চিমাঞ্চলে, এল পাসো থেকে ফোর্ট হ্যানকক পর্যন্ত বিস্তৃত প্রায় ৬০ মাইল এলাকাজুড়ে দুটি জাতীয় সামরিক প্রতিরক্ষা অঞ্চল (National Defense Areas) ঘোষণা করা হয়েছে। এই অঞ্চলের ভূমি ব্যবস্থাপনার দায়িত্ব তিন বছরের জন্য স্বরাষ্ট্র মন্ত্রণালয় থেকে প্রতিরক্ষা বিভাগের হাতে হস্তান্তর করা হয়েছে।
এল পাসোতে এক সংবাদ সম্মেলনে সামরিক মুখপাত্র জিওফ্রে কারমাইকেল জানান, সীমান্ত অঞ্চলে আরও সামরিকীকৃত এলাকা যুক্ত করার পরিকল্পনা রয়েছে। তবে তিনি সুনির্দিষ্ট করে আর কোনো তথ্য দেননি।
সামরিক নিরাপত্তা অঞ্চলের সমর্থকরা বলছেন, এর ফলে সীমান্ত সুরক্ষার বিদ্যমান প্রচেষ্টা আরও জোরদার হবে। সীমান্ত টহল বিভাগের প্রধান এজেন্ট ওয়াল্টার স্লোসার মনে করেন, এর মাধ্যমে মানব পাচার বন্ধ করা এবং যুক্তরাষ্ট্রে প্রবেশ করতে ইচ্ছুক ব্যক্তিদের সুরক্ষায় সহায়তা করা যাবে।
তবে, এই পদক্ষেপের আইনগত বৈধতা নিয়ে প্রশ্ন উঠেছে। আইনজীবীরা বলছেন, সামরিক নিরাপত্তা অঞ্চলের ধারণাটি নতুন এবং এর প্রয়োগ নিয়ে জটিলতা রয়েছে। আটকদের বিরুদ্ধে আনা অভিযোগের গুরুতরতা নিয়েও অনেকে উদ্বেগ প্রকাশ করেছেন।
অবৈধভাবে সীমান্ত অতিক্রমের দায়ে অভিযুক্তদের ১৮ মাস পর্যন্ত কারাদণ্ড হতে পারে, যেখানে অবৈধ প্রবেশের জন্য ছয় মাসের সাজা প্রচলিত আছে।
নিউ মেক্সিকোর একজন বিচারক ইতোমধ্যে একশ’র বেশি অভিবাসীর বিরুদ্ধে আনা জাতীয় নিরাপত্তা বিষয়ক অভিযোগ খারিজ করে দিয়েছেন। তিনি বলেছেন, অভিবাসীরা যে সামরিক নিরাপত্তা অঞ্চলের বিষয়ে অবগত ছিলেন, তেমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি। যদিও তাদের বিরুদ্ধে অবৈধ প্রবেশের অভিযোগ বহাল রয়েছে।
টেক্সাসে, পেরুর এক নারীর বিরুদ্ধে সামরিক নিরাপত্তা অঞ্চলে অবৈধ প্রবেশের অভিযোগ আনা হয়েছিল। তবে বিচারে তিনি নির্দোষ প্রমাণিত হন।
পশ্চিম টেক্সাসের অ্যাটর্নি জাস্টিন সিমন্স জানিয়েছেন, তারা সামরিক অনুপ্রবেশের অভিযোগ অব্যাহত রাখবেন। তিনি বলেন, “আমরা এই ধরনের অভিযোগ দায়ের করা চালিয়ে যাব। হয়তো আমরা জিতব, হয়তো হারব। তবে যারা অবৈধভাবে এই দেশে প্রবেশ করবে, তাদের এখানে থাকার অনুমতি দেওয়া হবে না।”
এদিকে, অভিবাসন বিরোধী অভিযানে তীব্রতা বৃদ্ধি পাওয়ায় যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন শহরে বিক্ষোভ দেখা যাচ্ছে। লস অ্যাঞ্জেলেস অঞ্চলের মেয়ররা ট্রাম্প প্রশাসনের প্রতি অভিবাসন বিষয়ক অভিযান বন্ধের আহ্বান জানিয়েছেন।
পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে অতিরিক্ত ২,০০০ ন্যাশনাল গার্ড সদস্যকে মোতায়েন করা হয়েছে। এর আগে, বিক্ষোভ দমনে প্রায় ৭০০ মেরিন সেনা পাঠানো হয়েছিল।
তথ্য সূত্র: সিএনএন