বিশ্বকাপ ফুটবলের আসর: যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে নারী বিশ্বকাপের আয়োজন, বিশ্ব ফুটবলে এর প্রভাব
আগামী ২০৩০ ও ২০৩৫ সালের নারী ফুটবল বিশ্বকাপের আসর বসতে যাচ্ছে যথাক্রমে যুক্তরাষ্ট্র এবং যুক্তরাজ্যে।
ফিফা’র পক্ষ থেকে সম্প্রতি এই ঘোষণা আসলেও, অন্য কোনো দেশ টুর্নামেন্ট আয়োজনের জন্য আগ্রহ না দেখানোয় অনেক ফুটবল প্রেমীর মনে কিছুটা হতাশা সৃষ্টি হয়েছে। কারণ, নারী ফুটবলের উন্নয়নে এই সিদ্ধান্ত কতটা প্রভাব ফেলবে, তা নিয়ে ইতিমধ্যেই আলোচনা শুরু হয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্র ও যুক্তরাজ্যে নারী ফুটবলের জনপ্রিয়তা বেশ চোখে পড়ার মতো।
এই দুটি দেশে নারী ফুটবল খেলোয়াড় এবং তাদের খেলা উপভোগ করার জন্য বিপুল সংখ্যক দর্শক রয়েছে। আধুনিক স্টেডিয়াম এবং উন্নত সুযোগ-সুবিধা থাকার কারণে টুর্নামেন্ট দুটি নিঃসন্দেহে দারুণ আকর্ষণ সৃষ্টি করবে।
তবে, এই দুটি দেশ নারী ফুটবলে ইতিমধ্যে অনেক এগিয়ে গেছে। ফলে, তাদের বিশ্বকাপ আয়োজন করার সুযোগ পাওয়াটা, বিশ্ব ফুটবলের বৃহত্তর প্রেক্ষাপটে অন্যরকম বার্তা দেয়।
বিশেষজ্ঞরা মনে করেন, নারী ফুটবলকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে হলে, এমন দেশগুলোতে এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করা দরকার, যেখানে এই খেলার সম্ভাবনা রয়েছে, কিন্তু সুযোগের অভাব রয়েছে।
যেমন, আফ্রিকার দেশগুলোতে এখনো পর্যন্ত একবারও নারী বিশ্বকাপের আয়োজন করা হয়নি। এমনকি এশিয়ার দেশগুলোর মধ্যে শুধুমাত্র চীন একবার এই টুর্নামেন্ট আয়োজন করেছে।
ফিফা সভাপতি জিয়ান্নি ইনফান্তিনো’র এমন ঘোষণার পর অনেকেই মনে করছেন, এতে করে বিশ্বের অন্যান্য দেশ, যেখানে নারী ফুটবল এখনো সেভাবে জনপ্রিয় হয়নি, তারা পিছিয়ে পড়তে পারে।
কারণ, উন্নত দেশগুলোতে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হলে, সেখানকার সুযোগ-সুবিধা এবং খেলার মান অনেক উন্নত হবে। তবে, এমন পরিস্থিতিতে অন্য দেশগুলোর জন্য নিজেদের প্রস্তুত করা কঠিন হয়ে পড়বে।
অবশ্য, খেলোয়াড় এবং দর্শকদের জন্য সেরা ভেন্যু, সুবিধা এবং শহরগুলি নির্বাচন করা গুরুত্বপূর্ণ।
উদাহরণস্বরূপ, ক্যালিফোর্নিয়ার মতো স্থানে বিশ্বকাপ অনুষ্ঠিত হলে, যেখানে নারী ফুটবল সমর্থক এবং বিনিয়োগকারীর সংখ্যা অনেক, সেখানে খেলার পরিবেশ আরও আকর্ষণীয় হবে।
অন্যদিকে, ২০৩১ সালে যুক্তরাষ্ট্র এবং সম্ভবত মেক্সিকোতে এই টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হতে পারে।
যুক্তরাষ্ট্র এর আগে একবার (১৯৯৯) নারী বিশ্বকাপের সফল আয়োজন করেছে।
তবে, একই দেশ বারবার বিশ্বকাপ আয়োজন করলে, অন্য দেশগুলোর সম্ভাবনা কমে যায়।
যুক্তরাষ্ট্রের পাশাপাশি যুক্তরাজ্যেও এই টুর্নামেন্টের আয়োজন নিয়ে অনেক আলোচনা হচ্ছে।
ধারণা করা হচ্ছে, ২০৩৫ সালের বিশ্বকাপের জন্য দেশটির বিভিন্ন আধুনিক স্টেডিয়াম প্রস্তুত করা হচ্ছে।
এর মধ্যে নিউ ট্র্যাফোর্ড, বার্মিংহামের একটি স্পোর্টস কোয়ার্টারে প্রস্তাবিত ৬০,০০০ আসনের স্টেডিয়াম, আধুনিক সেন্ট জেমস পার্ক অথবা নিউক্যাসল স্টেডিয়াম এবং ওয়েক্সহ্যামের রেসকোর্স গ্রাউন্ডের মতো ভেন্যুগুলো অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
এই টুর্নামেন্টগুলো নারী খেলার উন্নতিতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রাখবে, এতে কোনো সন্দেহ নেই।
তবে, অন্যান্য দেশগুলোর এগিয়ে আসার সুযোগ তৈরি করাটাও জরুরি।
নারী ফুটবলের উন্নয়নের জন্য ফিফা’র নেওয়া এই সিদ্ধান্ত নিয়ে ফুটবলবোদ্ধাদের মধ্যে মিশ্র প্রতিক্রিয়া রয়েছে।
তারা মনে করেন, উন্নত দেশগুলোতে টুর্নামেন্ট অনুষ্ঠিত হলে, খেলার মান বাড়বে, তবে, খেলাটিকে বিশ্বব্যাপী ছড়িয়ে দিতে হলে, তৃণমূল পর্যায়ে এর বিকাশ ঘটানো প্রয়োজন।
যদিও এই মুহূর্তে, বাংলাদেশের নারী ফুটবল দল ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে খুব বেশি এগিয়ে নেই, তবে, এখানেও এই খেলার সম্ভাবনা বাড়ছে।
জাতীয় পর্যায়ে মেয়েদের খেলাধুলার সুযোগ আরও বাড়াতে পারলে, ভবিষ্যতে বাংলাদেশের মেয়েরাও বিশ্ব মঞ্চে নিজেদের প্রমাণ করতে পারবে।
তথ্য সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান