যুক্তরাষ্ট্র ও ইউক্রেনের মধ্যে খনিজ সম্পদ বিষয়ক একটি গুরুত্বপূর্ণ চুক্তি স্বাক্ষরিত হয়েছে। এই চুক্তির ফলে ইউক্রেনকে সামরিক ও অর্থনৈতিক সহায়তা দেওয়ার বিনিময়ে যুক্তরাষ্ট্রের জন্য দেশটির মূল্যবান খনিজ সম্পদ ব্যবহারের সুযোগ তৈরি হয়েছে।
বুধবার (তারিখ উল্লেখ করতে হবে) ওয়াশিংটনে এই চুক্তিটি স্বাক্ষরিত হয়।
জানা গেছে, এই চুক্তির ফলে ইউক্রেন যুদ্ধের পর দেশটির পুনর্গঠনে সহায়তা করতে পারবে যুক্তরাষ্ট্র। এর বিনিময়ে ইউক্রেনের নতুন খনিজ সম্পদ ও প্রাকৃতিক সম্পদ ব্যবহারের ক্ষেত্রে অগ্রাধিকার পাবে যুক্তরাষ্ট্র।
দুই দেশের মধ্যে একটি যৌথ বিনিয়োগ তহবিল (United States-Ukraine Reinvestment Fund) তৈরি করা হবে, যা উভয় দেশ যৌথভাবে পরিচালনা করবে।
চুক্তি অনুযায়ী, ইউক্রেনীয় কর্তৃপক্ষ তাদের খনিজ সম্পদের মালিকানা ও নিয়ন্ত্রণের অধিকার বজায় রাখবে। তারা নিজেরাই সিদ্ধান্ত নেবে, কোথায় ও কোন ধরনের খনিজ সম্পদ উত্তোলন করা হবে।
এই চুক্তির মাধ্যমে যুক্তরাষ্ট্র সরাসরি অথবা নতুন সামরিক সহায়তার মাধ্যমে তহবিলে অবদান রাখবে। এছাড়া, ইউক্রেন প্রাকৃতিক সম্পদ থেকে উপার্জিত অর্থের ৫০ শতাংশ এই তহবিলে দেবে।
ইউক্রেনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই সহায়তার মধ্যে আকাশ প্রতিরক্ষা ব্যবস্থা অন্তর্ভুক্ত থাকতে পারে।
এই চুক্তির প্রেক্ষাপটে গুরুত্বপূর্ণ একটি বিষয় হলো, যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে ইউক্রেনকে অতীতে দেওয়া সামরিক সহায়তার বিষয়টি পুনর্বিবেচনা করা হয়েছে।
অর্থাৎ, অতীতে দেওয়া সহায়তা বাবদ ইউক্রেনকে কোনো ঋণ পরিশোধ করতে হবে না।
বিশ্লেষকরা বলছেন, এই চুক্তির ফলে ইউক্রেনের জন্য যুক্তরাষ্ট্রের সামরিক সহায়তা আরও সুসংহত হতে পারে।
ইউক্রেনের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, এই তহবিলের মুনাফা দেশটির উন্নয়নে ব্যয় করা হবে।
ইউক্রেনের অর্থনীতি মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, দেশটির কাছে ইউরোপীয় ইউনিয়নের (EU) গুরুত্বপূর্ণ হিসেবে চিহ্নিত ৩৪টি খনিজের মধ্যে ২২টির মজুদ রয়েছে।
এর মধ্যে রয়েছে মূল্যবান ও লৌহঘটিত নয় এমন ধাতু, যেমন— টাইটেনিয়াম, জিরকোনিয়াম, গ্রাফাইট ও লিথিয়াম।
এছাড়াও, ইউক্রেনের কাছে বিরল মৃত্তিকা মৌলের (Rare Earth Elements – REEs) ভাণ্ডারও রয়েছে। এই উপাদানগুলো ইলেকট্রনিকস, প্রতিরক্ষা, মহাকাশ ও নবায়নযোগ্য জ্বালানি খাতে অত্যাবশ্যকীয়।
জাতিসংঘের রুশ ভাষার সংবাদ সংস্থার মতে, ২০২২ সাল পর্যন্ত ইউক্রেনের খনিজ সম্পদের পরিমাণ বিশ্ব বাজারের প্রায় ৫ শতাংশ ছিল। টাইটেনিয়াম উৎপাদনে ইউক্রেনের অবদান ৭ শতাংশ।
লিথিয়ামের বিশাল ভাণ্ডারও রয়েছে, যা ইউরোপের বৃহত্তম একটি এবং এর পরিমাণ প্রায় ৫ লাখ টন।
রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এই চুক্তি ইউক্রেনের জন্য একটি কূটনৈতিক জয়।
কারণ, শুরুতে যুক্তরাষ্ট্রের পক্ষ থেকে দেশটির অতীতের সহায়তার অর্থ পরিশোধের বিষয়ে চাপ ছিল। তবে ইউক্রেন সেই শর্ত থেকে মুক্তি পেতে সক্ষম হয়েছে।
এছাড়া, এই চুক্তির মাধ্যমে ইউক্রেন তার সম্পদ রক্ষার অধিকার নিশ্চিত করতে পেরেছে এবং এটিকে ভবিষ্যতের পুনর্গঠনের জন্য একটি যৌথ বিনিয়োগ তহবিলে পরিণত করতে পেরেছে।
তবে, এই চুক্তি কার্যকর করতে হলে ইউক্রেনের পার্লামেন্টের অনুমোদন প্রয়োজন। এছাড়া, শান্তি ফিরিয়ে আনাটাও জরুরি।
কারণ, এই চুক্তির মাধ্যমে বেসরকারি বিনিয়োগের সম্ভাবনা তৈরি হবে, যা খনিজ সম্পদ উত্তোলনে সহায়তা করবে।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা