যুক্তরাষ্ট্র (US) চাইছে ইরানের সঙ্গে তাদের পরমাণু কর্মসূচি নিয়ে আলোচনা করতে। সম্প্রতি, মার্কিন বিশেষ দূত স্টিভ উইটকফ এমনটাই জানিয়েছেন।
তার মতে, আলোচনার মূল উদ্দেশ্য হল কূটনৈতিক পথে সমস্যার সমাধান করা, যাতে সামরিক পদক্ষেপ এড়ানো যায়।
ফক্স নিউজের সঙ্গে আলাপকালে উইটকফ বলেন, “আমাদের সবকিছু সামরিক উপায়ে সমাধান করার প্রয়োজন নেই। ইরানের প্রতি আমাদের বার্তা হল, ‘আসুন, আমরা বসে আলোচনা করি, দেখি আলোচনার মাধ্যমে কোনো সমাধানে আসা যায় কিনা।”
যদি পারি, আমরা প্রস্তুত। আর যদি না পারি, তবে বিকল্প ব্যবস্থা খুব একটা ভালো হবে না।
উইটকফের এই মন্তব্যের আগে, গত ৭ই মার্চ মার্কিন প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্প ইরানের সর্বোচ্চ নেতা আয়াতুল্লাহ আলী খামেনেইকে একটি চিঠি পাঠিয়েছিলেন। চিঠিতে তিনি ইরানের পরমাণু কার্যক্রম নিয়ে আলোচনার প্রস্তাব দেন এবং আলোচনায় রাজি না হলে সামরিক পদক্ষেপের হুঁশিয়ারিও দেন।
তবে, খামেনেই এই প্রস্তাব প্রত্যাখ্যান করে বলেন, ইরান কোনো “দাদাগিরির” সঙ্গে আলোচনা করবে না।
এদিকে, ট্রাম্প ইয়েমেনের হুতি বিদ্রোহীদের প্রতি ইরানের সমর্থনের বিষয়েও তেহরানকে সতর্ক করেছেন।
উল্লেখ্য, গাজায় ইসরায়েলের অবরোধের প্রতিক্রিয়ায় হুতি বিদ্রোহীরা ইসরায়েলে হামলা চালানো শুরু করেছে। এর আগে, যুক্তরাষ্ট্র ইয়েমেনে বিমান হামলা চালায়।
ট্রাম্প এর জন্য ইরানকে দায়ী করেন, যদিও ইরান দাবি করেছে হুতিরা স্বাধীনভাবে কাজ করে।
অন্যদিকে, ইরানের পররাষ্ট্রমন্ত্রী আব্বাস আরাকচি জানিয়েছেন, যুক্তরাষ্ট্র যদি তাদের চাপ প্রয়োগের নীতি পরিবর্তন না করে, তাহলে তাদের সঙ্গে আলোচনা করা সম্ভব নয়।
তিনি আরও বলেন, ট্রাম্পের চিঠি আসলে “হুমকি” স্বরূপ ছিল এবং এর জবাব খুব শীঘ্রই দেওয়া হবে।
২০১৮ সালে ট্রাম্প ইরানের সঙ্গে হওয়া বহুল আলোচিত পরমাণু চুক্তি – জয়েন্ট কমপ্রিহেনসিভ প্ল্যান অফ অ্যাকশন (জেসিওপিএ) থেকে যুক্তরাষ্ট্রকে একতরফাভাবে বের করে নিয়েছিলেন।
এরপর ইরানের উপর নতুন করে নিষেধাজ্ঞা আরোপ করা হয়। ২০১৫ সালে এই চুক্তিটি বিশ্বের ক্ষমতাধর দেশগুলোর সঙ্গে ইরানের স্বাক্ষরিত হয়েছিল, যেখানে নিষেধাজ্ঞার বিনিময়ে ইরানের পরমাণু কর্মসূচি সীমিত করার কথা ছিল।
চুক্তি থেকে যুক্তরাষ্ট্রের সরে আসার পর ইরান তাদের ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম বাড়িয়েছে।
বর্তমানে তারা ৬০ শতাংশ পর্যন্ত ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধ করছে, যেখানে অস্ত্র তৈরির জন্য ৯০ শতাংশ সমৃদ্ধকরণ প্রয়োজন।
আন্তর্জাতিক আণবিক শক্তি সংস্থা (আইএইএ) ইরানের পরমাণু কেন্দ্রগুলোতে নিয়মিত পরিদর্শন করে থাকে।
তাদের তথ্য অনুযায়ী, ইরান ইতোমধ্যেই একাধিক বোমা তৈরির মতো উপাদান জমা করেছে, তবে তারা এখনো পর্যন্ত কোনো বোমা তৈরি করেনি।
ট্রাম্প যদিও হোয়াইট হাউসে ফেরার পর থেকে ইরানের সঙ্গে আলোচনার ইঙ্গিত দিয়েছেন, কিন্তু একইসঙ্গে তেহরানের বিরুদ্ধে “সর্বোচ্চ চাপ” প্রয়োগের নীতিও বজায় রেখেছেন।
সম্প্রতি, শীর্ষস্থানীয় হোয়াইট হাউসের কর্মকর্তারা আবারও বলেছেন, ইরানকে তাদের পরমাণু কর্মসূচি সম্পূর্ণরূপে বন্ধ করতে হবে, এমনকি সামান্য পরিমাণেও ইউরেনিয়াম সমৃদ্ধকরণ কার্যক্রম চালানো যাবে না।
যুক্তরাষ্ট্রের এই অবস্থান এবং সামরিক পদক্ষেপের হুমকির কারণে ইরানের ভেতরেও কেউ কেউ পরমাণু অস্ত্র তৈরি না করার সরকারি নীতি পরিবর্তনের কথা বলছেন।
তথ্য সূত্র: আল জাজিরা