যুক্তরাষ্ট্রে আবহাওয়ার পূর্বাভাস আরও কঠিন হয়ে পড়ার আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। দেশটির ন্যাশনাল ওয়েদার সার্ভিস (NWS) তাদের কর্মীদের ছাঁটাই করার কারণে আটটি স্থানে আবহাওয়া বিষয়ক বেলুন ওড়ানো কমিয়ে দিয়েছে অথবা বন্ধ করে দিয়েছে।
আবহাওয়াবিদ ও সরকারি কর্মকর্তাদের মতে, এর ফলে আবহাওয়ার পূর্বাভাস নির্ভুলভাবে দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে, বিশেষ করে যখন তীব্র আবহাওয়ার মৌসুম শুরু হয়।
সাধারণত, এই বেলুনগুলো দিনে দু’বার আকাশে ওড়ানো হতো। এগুলো প্রায় একশ’টি স্থান থেকে তথ্য সংগ্রহ করত।
এই তথ্য ব্যবহার করে আবহাওয়াবিদরা আবহাওয়ার পূর্বাভাস তৈরি করেন এবং বুঝতে পারেন যে এটি কতটা বিপদজনক হতে পারে।
তাই বেলুন ওড়ানোর সংখ্যা কমানো একটি ভুল সিদ্ধান্ত বলে মনে করছেন আবহাওয়া অফিসের প্রাক্তন শীর্ষস্থানীয় কর্মকর্তাসহ একাধিক বিজ্ঞানী।
বেলুনগুলো এক লক্ষ ফুট পর্যন্ত উপরে ওঠে। এর সাথে রেডিওসন্ড নামের সেন্সর যুক্ত থাকে, যা তাপমাত্রা, শিশির বিন্দু, আর্দ্রতা, বায়ুর চাপ, বায়ুর গতি এবং দিক পরিমাপ করে।
আবহাওয়াবিদ ওকলাহোমা বিশ্ববিদ্যালয়ের অধ্যাপক রেনি ম্যাকফারসন বলেন, “এই পদক্ষেপ সত্যি বিপজ্জনক।”
যুক্তরাষ্ট্রের ন্যাশনাল ওশেনিক অ্যান্ড অ্যাটমোস্ফিয়ারিক অ্যাডমিনিস্ট্রেশন (NOAA)-এর প্রাক্তন প্রধান ডি জেমস বেকার বলেন, “আবহাওয়া বিষয়ক বেলুন থেকে পাওয়া তথ্য অন্য কোনোভাবে পাওয়া সম্ভব নয়।
এটি পূর্বাভাস ব্যবস্থার একটি অপরিহার্য অংশ।”
গত বছর, ডোনাল্ড ট্রাম্পের শাসনামলে NOAA-এর প্রধান বিজ্ঞানী ছিলেন রায়ান মাউ।
তিনি ইমেইলে জানান, “বেলুন ওড়ানো বন্ধ করে আমরা আমাদের আবহাওয়া ব্যবস্থাকে দুর্বল করছি।
এটা শুধু NOAA-এর জন্য লজ্জাজনক নয়, বরং আবহাওয়া বিষয়ক পূর্বাভাসকেও আরও খারাপ করবে।”
কর্মীদের অভাবে নেব্রাস্কার ওমাহা এবং সাউথ ডাকোটার র্যাপিড সিটি-তে বেলুন ওড়ানো বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।
এছাড়া, সাউথ ডাকোটার অ্যাবারডিন, কলোরাডোর গ্র্যান্ড জংশন, উইসকনসিনের গ্রিন বে, মিশিগানের গেইলর্ড, নেব্রাস্কার নর্থ প্লেট এবং ওয়াইওমিংয়ের রিভারটন-এ আগে যেখানে দিনে দু’বার বেলুন ওড়ানো হতো, সেখানে এখন একবার ওড়ানো হচ্ছে।
যুক্তরাষ্ট্রের সরকার আগে কর্মীদের ছাঁটাই করেছিল। এর ফলে আবহাওয়া অফিসের কর্মীর অভাব দেখা দিয়েছে।
যুক্তরাষ্ট্রের এই পদক্ষেপের ফলে বাংলাদেশের আবহাওয়ার পূর্বাভাসেও ভবিষ্যতে সমস্যা হতে পারে।
কারণ, আবহাওয়ার পূর্বাভাস নির্ভুলভাবে দেওয়ার জন্য প্রয়োজনীয় তথ্য সংগ্রহে এটি একটি বড় বাধা।
বাংলাদেশের আবহাওয়া অধিদপ্তর (বিএমডি)-এর মতো, যুক্তরাষ্ট্রের আবহাওয়া বিভাগেও উন্নত পূর্বাভাস ব্যবস্থার জন্য প্রয়োজনীয় পদক্ষেপ নেওয়া দরকার।
আবহাওয়ার পূর্বাভাস নির্ভরযোগ্য না হলে, ঘূর্ণিঝড়, বন্যা বা অন্যান্য প্রাকৃতিক দুর্যোগের সময় জনগণের জীবন ও সম্পদের নিরাপত্তা দেওয়া কঠিন হয়ে পড়বে।
তথ্যসূত্র: অ্যাসোসিয়েটেড প্রেস