যুক্তরাষ্ট্রের সেরা ইতালীয় পাড়া: যেখানে আজও লেগে আছে ইতালির ছোঁয়া!

যুক্তরাষ্ট্রের বুকে ইতালীয় সংস্কৃতির এক ঝলক: আটটি “লিটল ইতালি”।

যুক্তরাষ্ট্রে ইতালীয় অভিবাসীদের সংস্কৃতি আজও উজ্জ্বল হয়ে আছে। এখানকার কয়েকটি অঞ্চলে, বিশেষ করে ‘লিটল ইতালি’ নামে পরিচিত জায়গাগুলোতে, ইতালীয় ঐতিহ্য ও সংস্কৃতির এক দারুণ মেলবন্ধন দেখা যায়। এই স্থানগুলো ইতালীয়-আমেরিকান সম্প্রদায়ের জন্য পরিচিত, যেখানে তাদের সংস্কৃতি, খাদ্য এবং জীবনযাত্রার এক অনন্য প্রতিচ্ছবি বিদ্যমান।

আসুন, আজ আমরা এমনই আটটি “লিটল ইতালি” সম্পর্কে জানি, যেখানে ইতালীয় সংস্কৃতির স্বাদ এখনো অমলিন।

১. নিউ ইয়র্কের “লিটল ইতালি”: ম্যানহাটনের এই অংশে একসময় ইতালীয় অভিবাসীদের প্রধান বসতি ছিল। এখানে আপনারা আমেরিকার প্রাচীনতম পিজ্জার দোকান, লোম্বার্ডির (১৯০৫), প্রথম ইতালীয় ক্যাফে, ফেরারার বেকারি (১৮৯২) এবং বারবেত্তার মতো পুরনো রেস্টুরেন্ট খুঁজে পাবেন।

প্রতি বছর সেপ্টেম্বরে এখানে অনুষ্ঠিত হয় “ফিস্ট অফ সান জেনারো” উৎসব, যেখানে নানা ধরনের ইতালীয় খাবার ও সঙ্গীতের আয়োজন করা হয়।

২. বোস্টনের “নর্থ এন্ড”: বোস্টনের এই ঐতিহাসিক এলাকাটি ইতালীয় সংস্কৃতির কেন্দ্র। এখানে একশোর বেশি ইতালীয় রেস্টুরেন্ট রয়েছে, যেগুলোর অধিকাংশই এখনো ইতালীয় বংশোদ্ভূত পরিবারগুলো পরিচালনা করে।

এখানকার “ক্যাফে ভিক্টোরিয়া” (১৯২৯) এবং “পিৎজেরিয়া রেজিনা”র (১৯২৬) মতো পুরনো প্রতিষ্ঠানগুলো আজও ঐতিহ্য ধরে রেখেছে। বোস্টনের “ক্যানোলি যুদ্ধ” -এর জন্য বিখ্যাত বেকারিগুলোও এখানে অবস্থিত।

৩. সান ফ্রান্সিসকোর “নর্থ বিচ”: একসময় সোনার খোঁজে আসা ইতালীয় শ্রমিকেরা সান ফ্রান্সিসকোতে তাদের আবাস গড়ে তুলেছিল। এখানকার “লিগুরিয়া”র মতো পুরনো বেকারিগুলোতে চমৎকার ফোকাসিয়া পাওয়া যায়।

বর্তমানে, নর্থ বিচ-এ ইতালীয় সংস্কৃতির পুনর্জাগরণ হচ্ছে, যেখানে “টোনি’স পিৎজা নেপোলিটানা”র মতো পিৎজা দোকানগুলো জনপ্রিয়তা লাভ করেছে।

৪. শিকাগোর “লিটল ইতালি”: শিকাগোতে ইতালীয় অভিবাসীরা মূলত কারখানায় কাজ করতে এসেছিল। এখানে “পিৎজেরিয়া উনো”র (১৯৪৩) মতো জায়গাগুলোতে প্রথম “ডিপ-ডিশ” পিৎজা তৈরি হয়েছিল।

“টেইলর স্ট্রিট”-এ ইতালীয়-আমেরিকান ঐতিহ্য আজও উজ্জ্বল। এখানে আপনারা “আল’স বিফ”-এর মতো বিখ্যাত রেস্টুরেন্ট খুঁজে পাবেন।

৫. ক্লিভল্যান্ডের “লিটল ইতালি”: এখানে ইতালীয় সংস্কৃতির একটি গুরুত্বপূর্ণ অংশ বিদ্যমান। “গুয়ারিনো’স” (১৯১৮) এবং “মামা সান্টা’স”-এর মতো পুরনো প্রতিষ্ঠানগুলো আজও তাদের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।

এখানকার “প্রেস্টি’স” ক্লিভল্যান্ডের সবচেয়ে পুরনো বেকারি, যেখানে নানান ধরনের ইতালীয় খাবার পাওয়া যায়।

৬. সান দিয়েগোর “লিটল ইতালি”: একসময় টুনা মাছ ধরার জন্য পরিচিত এই এলাকাটি বর্তমানে তার নতুন রূপে ফিরে এসেছে। এখানে ইতালীয় খাবার দোকান ও “পিয়াজ্জা ডেলা ফ্যামিগ্লিয়া”র মতো স্থানগুলোতে ইতালীয় সংস্কৃতির ছোঁয়া পাওয়া যায়।

৭. ফিলাডেলফিয়ার “বেলা ভিস্তা”: ফিলাডেলফিয়ার এই অঞ্চলে ইতালীয় অভিবাসীদের বসবাস ছিল। এখানে “সাউথ নাইনথ স্ট্রিট ইতালিয়ান মার্কেট”-এর মতো পুরনো বাজারগুলোতে ইতালীয় খাবারের স্বাদ নেওয়া যায়।

“রাফ’স” (১৯০০) এবং “ডান্তে & লুইগি’স করোনা ডি ফেরো”র মতো পুরনো রেস্টুরেন্টগুলো এখনো চালু আছে।

৮. প্রভিডেন্সের “ফেডারেল হিল”: প্রভিডেন্স শহরেও ইতালীয় সংস্কৃতির গভীর প্রভাব রয়েছে। এখানকার “ক্যামিল’স” এবং “সিয়ালো ব্রাদার্স বেকারি”-এর মতো রেস্টুরেন্টগুলোতে প্রজন্মের পর প্রজন্ম ধরে ইতালীয় খাবার পরিবেশন করা হচ্ছে।

যুক্তরাষ্ট্রের এই “লিটল ইতালি” অঞ্চলগুলো ইতালীয় সংস্কৃতির জীবন্ত উদাহরণ। তাদের খাদ্য, উৎসব এবং জীবনযাত্রার মাধ্যমে এই সংস্কৃতি আজও টিকে আছে।

আমাদের দেশের পুরান ঢাকার সংস্কৃতি বা চট্টগ্রামের খাবারের সংস্কৃতিও একইভাবে তাদের ঐতিহ্য ধরে রেখেছে।

তথ্য সূত্র: ন্যাশনাল জিওগ্রাফিক

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *