যুক্তরাষ্ট্রের প্রতিনিধি পরিষদে নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতে রিপাবলিকানদের তৎপরতা। যুক্তরাষ্ট্রের আসন্ন নির্বাচনে প্রতিনিধি পরিষদে নিজেদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতে নতুন করে নির্বাচনী এলাকার সীমানা নির্ধারণের কথা ভাবছে রিপাবলিকান পার্টি।
ওহাইও এবং টেক্সাস রাজ্যে ডেমোক্র্যাটদের আসন সংখ্যা কমানোর লক্ষ্যে এই পরিকল্পনা করা হচ্ছে বলে জানা গেছে। রাজনৈতিক বিশ্লেষকদের মতে, এর মাধ্যমে তারা বেশ কয়েকজন ডেমোক্রেট আইনপ্রণেতাকে নির্বাচনে হারাতে চাইছে।
**পুনর্গঠনের কারণ ও কৌশল**
যুক্তরাষ্ট্রের আইনসভা কংগ্রেসের নিম্নকক্ষ হলো প্রতিনিধি পরিষদ। আগামী নির্বাচনে এই পরিষদের নিয়ন্ত্রণ কার হাতে থাকবে, তা নিয়ে রাজনৈতিক দলগুলোর মধ্যে চলছে তীব্র লড়াই।
ডেমোক্র্যাটরা চাইছে, কোনোমতে প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা অর্জন করতে। অন্যদিকে, রিপাবলিকানরা চাইছে তাদের বর্তমান অবস্থান ধরে রাখতে।
এই পরিস্থিতিতে, নির্বাচনী এলাকার সীমানা নতুন করে নির্ধারণের বিষয়টি তাদের জন্য গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
ওহাইও রাজ্যে, স্থানীয় একটি আইনের কারণে রিপাবলিকান আইনপ্রণেতারা আবারও তাদের রাজ্যের ১৫টি কংগ্রেসনাল জেলার সীমানা পরিবর্তনের সুযোগ পাচ্ছেন।
তাঁদের প্রধান লক্ষ্য হলো, ডেমোক্রেটদের অন্তত দুটি আসন নিশ্চিত করা এবং রাজ্যে নিজেদের ১২-৩ ব্যবধানে এগিয়ে যাওয়া।
এমনকি তাঁরা তৃতীয় একটি ডেমোক্রেট আসনও টার্গেট করতে পারেন।
অন্যদিকে, টেক্সাসে রিপাবলিকানরা একটি বিশেষ অধিবেশন ডাকার কথা বিবেচনা করছেন, যেখানে তাঁরা নির্বাচনী এলাকার সীমানা পরিবর্তনের পরিকল্পনা করতে পারেন।
তাঁদের ধারণা, এর ফলে তাঁরা অতিরিক্ত পাঁচটি আসন পেতে পারেন।
ডেমোক্র্যাটদের প্রতিনিধি পরিষদে সংখ্যাগরিষ্ঠতা পেতে হলে মাত্র তিনটি আসন দরকার।
ফলে রিপাবলিকান এবং সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের জন্য এই লড়াই অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ হয়ে উঠেছে।
কারণ, ডেমোক্র্যাটদের জয় হলে তারা ট্রাম্পের নীতিমালার বিরোধিতা করতে পারে এবং তাঁর বিরুদ্ধে নতুন তদন্ত শুরু করতে পারে।
তবে নির্বাচনী এলাকার সীমানা পরিবর্তনের এই কৌশল উভয় দলের জন্যই ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
কারণ, নতুন সীমানা নির্ধারণের ফলে অনেক সময় রিপাবলিকান অধ্যুষিত এলাকাগুলো ডেমোক্রেটদের নির্বাচনী এলাকার অন্তর্ভুক্ত হয়ে যেতে পারে।
ন্যাশনাল রিপাবলিকান রেডিস্ট্রিক্টিং ট্রাস্টের প্রেসিডেন্ট ও নির্বাহী পরিচালক অ্যাডাম কিনকেইড এই ধরনের আগ্রাসী পদক্ষেপের পক্ষে মত দিয়েছেন।
প্রতিনিধি পরিষদে নিজেদের নিয়ন্ত্রণ ধরে রাখাটা আমাদের জন্য অগ্রাধিকারের বিষয়, এবং আমরা যত বেশি সম্ভব আসন জেতার চেষ্টা করব।
কিনকেইড আরও যোগ করেন, ২০২২ সালের নির্বাচনে রিপাবলিকানদের পাওয়া আসনগুলো তাঁদের সংখ্যাগরিষ্ঠতা ধরে রাখতে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রেখেছিল।
তাঁর মতে, ২০২৬ সালের নির্বাচনের আগে এই ধরনের চেষ্টা করাটা রিপাবলিকানদের জন্য বুদ্ধিমানের কাজ হবে।
কিন্তু ২০২৬ সাল যদি ডেমোক্র্যাটদের জন্য অনুকূল হয়, তাহলে এই পদক্ষেপ রিপাবলিকানদের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ হতে পারে।
কারণ, ওই বছর ট্রাম্প নির্বাচনে প্রার্থী থাকবেন না, যা রক্ষণশীল ভোটারদের মধ্যে প্রভাব ফেলতে পারে।
ভার্জিনিয়ার সেন্টার ফর পলিটিকসের সাবাতো’স ক্রিস্টাল বল-এর ব্যবস্থাপনা সম্পাদক কাইল কন্ডিক বলেন, ‘এটা একইসঙ্গে একটি জুয়া এবং সুযোগ।
হোয়াইট হাউসের দৃষ্টিকোণ থেকে দেখলে, টেক্সাসের এই ধরনের আগ্রাসী পদক্ষেপ কি তাদের আগামী নির্বাচনে প্রতিনিধি পরিষদ ধরে রাখার সম্ভাবনা বাড়াবে? সম্ভবত হ্যাঁ, তবে এটি কোনো নিশ্চয়তা দেয় না।’
**ডেমোক্র্যাটদের প্রতিক্রিয়া ও অন্যান্য রাজ্যের চিত্র**
নির্বাচনী এলাকার সীমানা পরিবর্তনের এই ধরনের পদক্ষেপের বিরুদ্ধে ডেমোক্র্যাটরা ইতোমধ্যে সোচ্চার হয়েছেন।
তাঁদের অভিযোগ, রিপাবলিকানরা এই প্রক্রিয়াকে নিজেদের সুবিধার জন্য ব্যবহার করতে চাইছে।
ন্যাশনাল ডেমোক্রেটিক রেডিস্ট্রিক্টিং কমিটির নির্বাহী পরিচালক মারিনা জেনকিন্স বলেন, ‘রিপাবলিকানরা ভোটারদের ভয় পায় বলেই টেক্সাস ও ওহাইওর মতো রাজ্যে এই ধরনের ঘৃণ্য কারসাজি করার চেষ্টা করছে।
এটা হলো ভোটের মাধ্যমে জবাবদিহিতা থেকে নিজেদের বাঁচানোর একটি জঘন্য প্রচেষ্টা, যা অবশ্যই বন্ধ করতে হবে।’
এদিকে, উইসকনসিনেও নির্বাচনী এলাকার সীমানা নিয়ে একটি আইনি লড়াই চলছে।
সেখানে ডেমোক্র্যাট-অধ্যুষিত সুপ্রিম কোর্ট বিদ্যমান রয়েছে।
টেক্সাসে, নতুন করে সীমানা নির্ধারণের ফলে সীমান্ত এলাকার ডেমোক্র্যাটদের জন্য পরিস্থিতি কঠিন হয়ে যেতে পারে।
কারণ, সাম্প্রতিক বছরগুলোতে এই এলাকাগুলোতে ভোটারদের মধ্যে রক্ষণশীলতা বেড়েছে।
২০১৬ সালের নির্বাচনে ডোনাল্ড ট্রাম্প এই এলাকাগুলোতে জয়লাভ করেছিলেন।
প্রতিনিধি পরিষদের সংখ্যালঘু নেতা হাকিম জেফ্রিস সতর্ক করে বলেছেন, এমন আগ্রাসী পদক্ষেপ রিপাবলিকানদের জন্য হিতে বিপরীত হতে পারে।
তিনি জানান, এতে করে চার থেকে ছয় জন রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা ঝুঁকিতে পড়বেন।
টেক্সাসের ডেমোক্রেট ককাসের চেয়ারম্যান, রাজ্য প্রতিনিধি জেন উ বলেছেন, ‘টেক্সাসের রিপাবলিকানদের উচিত চার বছর আগের আইন অনুযায়ী কাজ করা, অথবা ডেমোক্র্যাটদের সঙ্গে মিলে একটি সুষ্ঠু ও নিরপেক্ষ নির্বাচনী মানচিত্র তৈরি করা।
এর অন্যথা হলে, এটা হবে এমন একটি দলের desesperate ক্ষমতা দখলের চেষ্টা, যারা জানে টেক্সাসের ভোটাররা তাদের প্রত্যাখ্যান করতে প্রস্তুত।’
টেক্সাসের গভর্নর গ্রেগ অ্যাবট জানিয়েছেন, তিনি বিশেষ অধিবেশন ডাকার প্রয়োজনীয়তা এখনো দেখেননি।
তবে, তিনি এই সম্ভাবনা একেবারে উড়িয়ে দেননি।
তথ্য সূত্র: সিএনএন