খাবারে বিষ? যুক্তরাষ্ট্রের অর্ধেক রাজ্যে নিষিদ্ধ হতে চলেছে, আপনার করণীয়?

যুক্তরাষ্ট্রে খাদ্য রং নিয়ে উদ্বেগ বাড়ছে, অনেক রাজ্যে নিষেধাজ্ঞা জারির প্রস্তুতি।

যুক্তরাষ্ট্রের বিভিন্ন রাজ্যে খাদ্য পণ্যে ব্যবহৃত কৃত্রিম রং ব্যবহারের বিরুদ্ধে পদক্ষেপ গ্রহণ করা হচ্ছে। সম্প্রতি, শিশুদের স্বাস্থ্য এবং শেখার উপর এর সম্ভাব্য ক্ষতিকর প্রভাবের কারণে এই পদক্ষেপগুলি নেওয়া হয়েছে। অনেক রাজ্যে ইতোমধ্যে এই রংগুলো নিষিদ্ধ করার প্রস্তাবনা এসেছে, যা খাদ্য নিরাপত্তা নিয়ে নতুন করে আলোচনার জন্ম দিয়েছে।

পশ্চিম ভার্জিনিয়া রাজ্যে রিপাবলিকান আইনপ্রণেতা অ্যাডাম বার্কহ্যামার-এর অভিজ্ঞতা থেকে জানা যায়, তার ছেলের আচরণে কৃত্রিম রং মেশানো খাবার-এর প্রভাব নজরে আসার পরেই তিনি এই বিষয়ে সচেতন হন। এর ফলস্বরূপ, তিনি রাজ্যের আইনসভায় একটি বিল পেশ করেন, যা স্কুলের খাবার এবং পরবর্তীতে রাজ্যের সকল খাদ্য পণ্য থেকে এই রংগুলি নিষিদ্ধ করার প্রস্তাব দেয়। রাজ্যপাল প্যাট্রিক মরিসির স্বাক্ষরের মাধ্যমে বিলটি আইনে পরিণত হয়।

পশ্চিম ভার্জিনিয়ার এই পদক্ষেপটি অন্যান্য রাজ্যের থেকেও বেশি বিস্তৃত। এখানে সাত ধরনের রং এবং দুটি প্রিজারভেটিভ (সংরক্ষণকারী উপাদান) নিষিদ্ধ করা হয়েছে। এই রংগুলির মধ্যে রয়েছে রেড নং ৩ ও ৪০, ইয়োলো নং ৫ ও ৬, ব্লু নং ১ ও ২, এবং গ্রিন নং ৩। এছাড়াও, বিউটাইলেটেড হাইড্রোক্সিয়ানিজল এবং প্রোপাইলপ্যারাবেন-ও এই তালিকায় রয়েছে। এই রংগুলি মূলত পেট্রোলিয়াম থেকে তৈরি করা হয় এবং খাদ্য ও পানীয়কে আকর্ষণীয় করতে ব্যবহৃত হয়।

পশ্চিম ভার্জিনিয়ার গভর্নর প্যাট্রিক মরিসি বলেছেন, “ক্ষতিকর রাসায়নিক দ্রব্য খাদ্য থেকে অপসারণ করার মাধ্যমে আমরা আমাদের বাসিন্দাদের স্বাস্থ্য উন্নত করার দিকে এবং শিশুদের দীর্ঘমেয়াদী স্বাস্থ্য ও শিক্ষার ক্ষেত্রে সুরক্ষা দিতে পারব।

ক্যালিফোর্নিয়া রাজ্যেও খাদ্য রং নিষিদ্ধ করার ক্ষেত্রে অগ্রণী ভূমিকা পালন করা হয়েছে। গত বছর, সেখানে রেড ডাই নং ৩ নিষিদ্ধ করা হয়। এছাড়াও, আরও ছয়টি সাধারণ রং স্কুলের খাবারে ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করা হয়েছে। ফেডারেল সরকারও এই বিষয়ে পদক্ষেপ নিয়েছে এবং ২০২৩ সালের জানুয়ারিতে রেড ডাই নং ৩ খাদ্যদ্রব্যে ব্যবহারের উপর নিষেধাজ্ঞা জারি করে, যা ২০২৭ সাল থেকে কার্যকর হবে।

বিশেষজ্ঞদের মতে, এই কৃত্রিম রংগুলি শিশুদের মধ্যে মনোযোগের অভাব, অস্থিরতা এবং ঘুমের সমস্যা সৃষ্টি করতে পারে। এছাড়াও, কিছু গবেষণায় এই রংগুলির সঙ্গে পশুর টিউমার এবং ক্যান্সারের সম্পর্কও পাওয়া গেছে।

বর্তমানে, ক্যালিফোর্নিয়া, ভার্জিনিয়া ও পশ্চিম ভার্জিনিয়ার পাশাপাশি আরও ২৩টি রাজ্যে খাদ্য রং এবং অন্যান্য রাসায়নিক উপাদান নিষিদ্ধ করার প্রক্রিয়া চলছে। পরিবেশ বিষয়ক সংস্থা এনভায়রনমেন্টাল ওয়ার্কিং গ্রুপের মতে, এটি খাদ্য ব্যবস্থাকে আরও নিরাপদ করার জন্য একটি গুরুত্বপূর্ণ পদক্ষেপ।

বিশেষজ্ঞরা বলছেন, ভোক্তাদের খাদ্য কেনার সময় উপাদান তালিকা ভালোভাবে দেখে নেওয়া উচিত। এছাড়াও, প্রক্রিয়াজাত খাবার ও পানীয়ের ব্যবহার কমানো এবং খাদ্য প্রস্তুতকারকদের কাছ থেকে স্বচ্ছতা নিশ্চিত করা প্রয়োজন।

যদিও এই বিষয়ে যুক্তরাষ্ট্রের খাদ্য ও ঔষধ প্রশাসন (এফডিএ)-এর পক্ষ থেকে এখনো কোনো মন্তব্য পাওয়া যায়নি, তবে খাদ্য শিল্পের সঙ্গে জড়িত সংস্থাগুলো সরকারের এই পদক্ষেপের সঙ্গে একমত পোষণ করেছে। তারা মনে করে, খাদ্য নিরাপত্তা বিধানে এফডিএ-এর গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা রয়েছে।

বাংলাদেশে এখনো খাদ্য রং ব্যবহারের নিয়মকানুন এবং এর স্বাস্থ্যগত প্রভাব নিয়ে বিস্তারিত গবেষণা হয়নি। তবে, জনস্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, খাদ্য নিরাপত্তা এবং শিশুদের স্বাস্থ্য সুরক্ষায় এ ধরনের পদক্ষেপ নেওয়া জরুরি।

তথ্য সূত্র: সিএনএন।

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *