কত হাজার কোটি ডলার! যুক্তরাষ্ট্রের সরকারি খরচে দুর্নীতি?

মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রে সরকারি ব্যয়ের হিসাব নিয়ে বিতর্ক চলছে, যেখানে বিপুল পরিমাণ অর্থ অপচয় ও দুর্নীতির শিকার হচ্ছে বলে অভিযোগ উঠেছে। দেশটির ফেডারেল সরকারের হিসাব নিরীক্ষণ সংস্থা, গভর্মেন্ট অ্যাকাউন্টিবিলিটি অফিস (GAO) -এর দেওয়া তথ্য অনুযায়ী, প্রতি বছর কয়েকশো বিলিয়ন ডলার এই খাতে ক্ষতি হচ্ছে।

বিষয়টিকে গুরুত্বের সঙ্গে তুলে ধরেছেন প্রযুক্তি উদ্যোক্তা এবং বিলিয়নেয়ার ইলন মাস্ক। সম্প্রতি, ফক্স বিজনেস চ্যানেলে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে মাস্ক জানান, GAO-এর ধারণা অনুযায়ী, ২০২৪ সালে ফেডারেল সরকারের দুর্নীতি প্রায় ৫০০ বিলিয়ন ডলারের কাছাকাছি।

তিনি আরও উল্লেখ করেন, সরকারি ব্যয়ের একটি বড় অংশ হলো সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ক বিভিন্ন প্রকল্পের (যেমন: সোশ্যাল সিকিউরিটি, মেডিকেয়ার, মেডিকেইড) বরাদ্দ। মাস্কের মতে, এই খাতগুলোতে অপচয় বন্ধ করা গেলে বিপুল পরিমাণ অর্থ সাশ্রয় করা সম্ভব। এই মন্তব্যের পরেই রাজনৈতিক মহলে আলোচনা-সমালোচনার ঝড় ওঠে।

যুক্তরাষ্ট্রের সাবেক প্রেসিডেন্ট ডোনাল্ড ট্রাম্পের বাজেট বিষয়ক উপদেষ্টা ল্যারি কুডলোর সঙ্গে আলাপকালে মাস্ক আরও বলেন, সরকার যদি এই অপচয়গুলো বন্ধ করতে পারে, তাহলে ট্রিলিয়ন ডলার সাশ্রয় করা যেতে পারে। যদিও মাস্কের এমন বক্তব্যে ডেমোক্র্যাটদের মধ্যে উদ্বেগ দেখা যায়, কারণ তাঁরা মনে করেন, এর ফলে সামাজিক নিরাপত্তা বিষয়ক প্রকল্পগুলোতে বরাদ্দ কমানো হতে পারে।

হোয়াইট হাউজের পক্ষ থেকে জানানো হয়েছে, প্রেসিডেন্ট ট্রাম্প সামাজিক নিরাপত্তা, মেডিকেয়ার ও মেডিকেইড-এর মতো গুরুত্বপূর্ণ প্রোগ্রামগুলো রক্ষা করতে প্রতিশ্রুতিবদ্ধ। তবে, এই দুর্নীতি ও অপচয়ের হিসাব নিয়ে ভিন্নমতও রয়েছে।

সরকারি হিসাব অনুযায়ী, ফেডারেল সরকারের দুর্নীতি বার্ষিক প্রায় ৪.৪১ বিলিয়ন থেকে ৭.৩১ বিলিয়ন ডলারের মধ্যে সীমাবদ্ধ। তবে GAO-এর হিসেবে, এই ক্ষতির পরিমাণ ২৩০ বিলিয়ন থেকে ৫২১ বিলিয়ন ডলার পর্যন্ত হতে পারে। এখানে ‘অপচয়’ বলতে বোঝানো হয়, যখন সরকারি অর্থনীতীর নিয়মকানুন সঠিকভাবে অনুসরণ করা হয় না।

আর ‘দুর্নীতি’ হলো সরাসরি আইন ও নীতিমালার লঙ্ঘন, যার সঙ্গে অপরাধমূলক কর্মকাণ্ড জড়িত থাকে। বিশেষজ্ঞরা বলছেন, এই বিশাল অঙ্কের হিসাবের দিকে নজর রাখা জরুরি।

কারণ, কোভিড-১৯ মহামারীর সময় ত্রাণ ও সহায়তা কর্মসূচিগুলোতে ব্যাপক হারে অর্থ খরচ হয়েছে, যা এই হিসাবের ওপর প্রভাব ফেলেছে। একইসঙ্গে, সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পের দীর্ঘমেয়াদী ঝুঁকির কারণ হলো—কর্মীর সংখ্যা কমে যাওয়া এবং অবসরপ্রাপ্ত মানুষের সংখ্যা বেড়ে যাওয়া।

বর্তমানে, যুক্তরাষ্ট্রে কর্মীর তুলনায় অবসরপ্রাপ্ত মানুষের সংখ্যা বাড়ছে, ফলে সামাজিক নিরাপত্তা তহবিলে অর্থের জোগান কমে আসছে। যুক্তরাষ্ট্রের এই পরিস্থিতি থেকে বাংলাদেশের শিক্ষা নেওয়ার সুযোগ রয়েছে।

আমাদের দেশেও সরকারি অর্থ ব্যবস্থাপনায় স্বচ্ছতা ও জবাবদিহিতা নিশ্চিত করা জরুরি। বিভিন্ন উন্নয়ন প্রকল্পে প্রায়ই দুর্নীতির অভিযোগ ওঠে, যা দেশের অর্থনীতির জন্য ক্ষতিকর। এছাড়া, সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচিগুলোতেও উপযুক্ত নজরদারি ও ব্যবস্থাপনার অভাব দেখা যায়।

অতএব, যুক্তরাষ্ট্রের এই অভিজ্ঞতা থেকে শিক্ষা নিয়ে, বাংলাদেশের নীতিনির্ধারকদের সরকারি অর্থ ব্যয়ের ক্ষেত্রে আরও সতর্ক হওয়া উচিত। একইসঙ্গে, দুর্নীতি নির্মূল এবং অপচয় রোধে কার্যকর পদক্ষেপ নেওয়া প্রয়োজন। তথ্য সূত্র: আল জাজিরা

Leave a Reply

Your email address will not be published. Required fields are marked *